কাকরাইল টু আরামবাগ তিন মাসেই নিভু নিভু দু’কোটি টাকার সড়ক বাতি

কাকরাইল টু আরামবাগ তিন মাসেই নিভু নিভু দু’কোটি টাকার সড়ক বাতি

কাকরাইল থেকে আরামবাগ সড়কের বাতিগুলো রাজধানীর অন্যসব সড়ক বাতি থেকে একেবারেই ভিন্ন। এগুলো জ্বলতে খরচ হয় না রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ। নিজে নিজেই যাতে জ্বলতে পারে সেজন্য এগুলোর পেছনে লাগানো হয়েছে উন্নত সৌর ব্যবস্থা। কথা ছিল, সন্ধ্যা হলেই জ্বলে উঠবে জ্বল জ্বল করে। আলোকিত করে তুলবে পুরো সড়ক।

কিন্তু ‘কেউ কথা রাখে না’র মতোই হয়েছে এই বাতির দশা। শুরু থেকেই ‘অপ্রতুল আলো’র অভিযোগ নিয়ে জ্বলতে থাকলেও মাত্র কয়েকমাসের মাথায় মাঝ রাতে নিভে যাওয়ার অভিযোগ যুক্ত হয়েছে তার সঙ্গে। ঠিকমতো আলো দেয় না, কখনো জ্বলে, কখনো জ্বলে না, এমন সব কথা বলতে শোনা গেছে আশেপাশের দোকানী ও পথচারীদের মুখে।
solar
জানা যায়, চলতি বছরের জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে বিদ্যুতের অপচয় রোধের দোহাই দিয়ে মোট ৬১টি সৌর বিদ্যুৎ পদ্ধতির সোলার বাতি লাগানো হয় জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে। প্রতিটি সোলার বাতি মাত্র ৬০ ওয়াটের। যা গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির জন্য একেবারেই অপ্রতুল। এর আগে একই সড়কে থাকা সোডিয়াম বাতির প্রতিটি ছিল ১৫০ ওয়াটের করে। অর্ধেকের চেয়েও কম আলোর সোলার বাতিতে সড়কটি এখন অনেকটা অন্ধকার হয়ে থাকে বলে মন্তব্য আশপাশের দোকানীদের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ৬১টি ল্যাম্পপোস্টের প্রতিটিতে ২টি করে মোট ১শ’ ২২টি সোলার বাতি লাগানো হয়েছে। প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টে আবার একটি করে ৫ বর্গফুটের সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। এই প্যানেল চালানোর জন্য প্রত্যেক ল্যাম্পপোস্টের নিচে মাটি গর্ত করে বক্সের মধ্যে ব্যাটারিও স্থাপন করা হয়েছে।

জুলাইতে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ইলেক্ট্রিক্যাল বিভাগ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এর মোট ব্যয় করা হয় দু’কোটি টাকা। ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে এলাইড সোলার নামের একটি প্রতিষ্ঠান সোলার প্যানেল, বাতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি লাগানোর দায়িত্ব নেয়। কথা ছিল সোলার বাতি লাগানোর ফলে সড়ক যেমন আলোকিত হবে, তেমনি সাশ্রয় হবে বিদ্যুৎ। কিন্তু মাত্র কয়েকমাসের মাথায় সোলার বাতি নিভু নিভু জ্বলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই। একে তো পর্যাপ্ত আলো হচ্ছে না, তারওপর রাত বাড়লেই বেশ কয়েকটি বাতি বন্ধ হয়ে যায় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

এনার্জি বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এ ধরনের প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন শুরু থেকেই।
solar
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সৌর বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ বলেন, “রাজধানীর জন্য এ প্রকল্প মোটেও উপযোগী নয়। এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত। যে সড়কে এই বাতি লাগানো হয়েছে, সেই সড়কে অনেক বেশি আলোর প্রয়োজন। কিন্তু সোলার বাতিতে এর চাইতে বেশি আলো দেওয়াও সম্ভব নয়। তাই অন্তত এখানকার জন্য সোলার বাতি মোটেও উপযোগী নয়।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, “সোলার বাতির এই প্রকল্প রাজধানীর বাইরে কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করে সেখানকার বিদ্যুৎ রাজধানীতে সংযোগ করলে অনেক ভালো পাওয়া যাবে। কারণ মফস্বল এলাকায় কম আলোতেও কাজ করা সম্ভব। কিন্তু রাজধানীতে বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব নয়।”

জানা যায়, আগে স্থাপিত সোডিয়াম বাতির মতো সোলার বাতিকে দেড়শ’ ওয়াটে বাড়াতে হলে এর উপর ১২ থেকে ১৫ বর্গফিটের প্যানেল বসাতে হবে। যেটা বসাতে গেলে “খাজনার চেয়েও বাজনা বেশি হবে” বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। তাছাড়া এতো বড় প্যানেল লাগালে একটু বাতাস কিংবা ঝড়ে পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকাও রয়েছে।

বর্তমানে স্থাপিত সোলার বাতির মৃদু আলো ও মাঝ রাতে নিভে যাওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণের ইলেক্ট্রিক্যাল বিভাগের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাফর আহমেদ বলেন, “আমরা স্বীকার করছি, আলো কিছুটা কম হচ্ছে। এই বাতিতে এর চাইতে আলো দেওয়াও সম্ভব নয়। আসলে এটা একটা পাইলট প্রকল্প। এর ভালো মন্দ বিবেচনা করে পরবর্তীতে অন্যান্য সড়কগুলো নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।”

তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকটি বাতি নিভে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, “যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য এমনটি হওয়ার কোন কারণ নেই। তবে কখনো যদি মেঘলা আবহাওয়া থাকে, তাহলে সোলার প্যানেল ঠিকমতো সৌর তাপ গ্রহণ করতে পারে না। সেজন্য কখনো কখনো আলো একটু কম কিংবা নির্দিষ্ট সময়ের পরে বাতি নিভে আসতে পারে।”
solar
দুই কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক বাতির এমন দশায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

ডিসিসির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “কিছু অযোগ্য মানুষ সরকারকে উল্টা-পাল্টা যুক্তি দিয়ে রাজধানীর সড়কে সোলার বাতি লাগিয়েছে। সড়কে এই বাতি না লাগিয়ে বরং বিভিন্ন হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টার কিংবা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছাদে সোলার প্যানেল লাগিয়ে সে বিদ্যুৎ কাজে লাগানো যেতে পারে।

সোলার বসিয়ে সড়ক বাতি জ্বালানোর এমন উদ্যোগ রাজধানীর আর কোথাও বাস্তবায়ন করলে সুফলের চেয়েও কুফলই বেশি হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা মনে করেন, এ ধরনের প্রকল্পে কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থ উদ্ধার ছাড়া জনগণের কোন উপকারই হয় না।

অর্থ বাণিজ্য