জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারদের মধ্যে জাতীয় লিগে না খেলার একটা প্রবণতা আছে। নানা ছুতায় তারা খেলতে চান না। খেলোয়াড়দের এই ফাঁকি ঝুঁকি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটারদের জাতীয় লিগে খেলা বাধ্যতামূলক করার জন্য বোর্ডের কাছে সুপারিশ করেছে জাতীয় লিগ গভর্নিং কাউন্সিল।
জাতীয় লিগ গভর্নিং কাউন্সিলের বুধবারের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে গভির্নিং কাউন্সিলের আহ্বায়ক বিসিবির জেষ্ঠ্য সহসভাপতি মাহাবুবুল আনাম বলেছেন, ‘বোর্ডের চুক্তিতে থাকা ১২০ জন ক্রিকেটারকেই জাতীয় লিগে খেলতে হবে। তাদের খেলা বাধ্যতামূলক করার জন্য বোর্ডের কাছে আমরা সুপারিশ করেছি। বোর্ড সভাপতি বৃহস্পতিবার দেশে ফিরলে প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বিদেশি লিগে খেলার জন্য বিসিবির (এনওসি) ছাড়পত্র থাকলে এবং অসুস্থ হলে খেলা থেকে বিরত থাকতে পারবে। বিসিবির চিকিৎসকদের কাছ থেকে অসুস্থতার সনদ লাগবে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃত জাতীয় লিগে না খেলে তাহলে তাকে জাতীয় দলের জন্য বিবেচনা করা হবে না।’
অতএব বিসিবির চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটাররা জাতীয় লিগের জন্য অনুশীলন শুরু করে দিতে পারেন। ২০ অক্টোবর থেকেই মাঠে গড়াচ্ছে জাতীয় লিগের ১৪তম আসরের খেলা। এবারের লিগের ফর্মেটেও কিছুটা পরিবর্তন আসবে। গত আসরের চেয়ে ম্যাচ সংখ্যা বাড়তে পারে।
জাতীয় লিগকে সম্পূর্ণ রূপে ফ্রেঞ্চাইজিভিত্তিক করতে চেয়েছিলো বিসিবি। ঢাকা মেট্রো এবং রংপুর বিভাগকে বাদ দিয়ে ছয় দলের জাতীয় লিগের ঘোষণাও দিয়েছিলো। কিন্তু বুধবারের সভায় আট দল নিয়ে জাতীয় লিগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাহাবুবুল আনাম জানান, ‘রংপুর বিভাগ গত আসরে ষষ্ঠ হয়েছে। বোর্ডের কাছে চিঠি দিয়ে রংপুর অনুরোধ করেছে তাদের বাদ না দেওয়ার জন্য। সে জন্য আমরা আট দল নিয়ে লিগ করার ব্যাপারে সুপারিশ করেছি।’
ঢাকা বিভাগ, ঢাকা মেট্রো, চট্টগ্রাম বিভাগ, রাজশাহী বিভাগ, খুলনা বিভাগ, বরিশাল বিভাগ, সিলেট বিভাগ ও রংপুর বিভাগ খেলবে লিগে। জাতীয় লিগের দ্বাদশ আসর পর্যন্ত ছয় দলে খেলা হতো। ১৩তম আসরে ঢাকা মেট্রো এবং রংপুর বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মাহাবুবুল আনাম জানান, আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার জন্যই আটটি দল থাকছে।
এবারের আসরে চারটি দলের জন্য ফ্রেঞ্চাইজি পাওয়া গেছে বলে জানায় গভর্নিং কাউন্সিল। প্রাইম ব্যাংক এবং ওয়ালটনের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে বিসিবির। প্রাইম ব্যাংক খুলনাকে আর ওয়ালটন ঢাকার একটি দলে পৃষ্ঠপোষকতা করবে। বাকি দুই ফ্রেঞ্চাইজির নাম প্রকাশ করেনি। যে চারটি দল বিভাগের নামে খেলবে তাদের সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে বিসিবি।
প্রতি ফ্রেঞ্চাইজির কাছ থেকে বিসিবি বছরে ৫০ লাখ টাকা পাবে। ১০ বছর এই অনুদান দিবে ফ্রেঞ্চাইজিগুলো। এছাড়া খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফিসহ দলের যাবতীয় খরচও বহন করবে ফ্রেঞ্চাইজি। আনুমানিক প্রতিবছর একটি দলের পেছনে ফ্রেঞ্চাইজিদের খরচ করতে হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
ক্রিকেটারদের জন্য সুখবর হলো সম্মানজনক একটা ম্যাচ ফি পেতে যাচ্ছেন এবার থেকে। একাদশের প্রত্যেক খেলোয়াড় পাবেন ৪০ হাজার টাকা করে। দ্বাদশ খেলোয়াড় ম্যাচ ফির ৪০ শতাংশ এবং স্কোয়াডের বাকি দুই সদস্য ৩০ শতাংশ হারে ম্যাচ ফি পাবেন। গত মৌসুমের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ ফি ছিলো ১৫ হাজার, দ্বিতীয় রাউন্ডে ২০ হাজার এবং ফাইনালে ২৫ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে বিসিবির হাতে। খেলা চালাতে যাবতীয় খরচও বিসিবির। ফ্রেঞ্চাইজিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ এবং নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থের যোগান দেওয়া হবে। এবার বিসিবিকে জাতীয় লিগের জন্য বিসিবিকে আনুমানিক চার কোটি টাকা খরচ করতে হতে পারে। আগের বছর জাতীয় লিগের বাজেট ছিলো ছয় কোটি টাকার ওপরে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয় পাঁচ জন বিদেশি ক্রিকেটার নিবন্ধন করে দুইজনকে খেলাতে পারবে একটি দল। বিদেশি ক্রিকেটারকে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটার হতে হবে।
ফ্রেঞ্চাইজি এবং বিভাগীয় ক্রিকেট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে দল পরিচালনা হবে। বিবাদ এড়ানোর জন্য দলের অংশগ্রহণ ফি’র পাঁচ লাখ টাকা বিভাগীয় কর্মকর্তাদের দিচ্ছে বিসিবি। চ্যাম্পিয়ন এবং রানর্সআপ দলের প্রাইজমানি এখনও ঠিক করা হয়নি। প্রাইজমানির টাকাও ভাগাভাগি হতে পারে।