দীর্ঘ ১০ বছর পর আগামী ১১ অক্টোবর বান্দরবান পার্বত্য জেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
২০০২ সালের ২৪ জুলাই জেলা সম্মেলন হওয়ার পর বিভিন্ন জটিলতার কারণে আর সম্মেলন হয়নি।
কিন্তু এতোদিন পর সম্মেলন হলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। বান্দরবানের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই সম্মেলনকে ঘিরে আগ্রহ না থাকার কারণ হিসেবে অনেক নেতাকর্মী অনেক ধরনের মতামত দিচ্ছেন।
দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে না। আবারও আগের কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
আর এ কারণে অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন, কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে নয়, অনির্বাচিত কমিটি গঠনের দিকে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলটির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের ১৫৩ জন ভোটার থাকলেও তাদের মধ্যে বেশ ক’জন মারা গেছেন। জেলা সভাপতি গ্রুপের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের বিবাদের কারণে অঙ্গ সংগঠনগুলো মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। দু’গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে গত উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা হেরেছেন। এ কারণে জেলার প্রতিটি উপজেলায় দলের মধ্যে বিভক্তি লক্ষণীয়।
আর এ বিভক্তির কথা প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার না করলেও নাম প্রকাশ না করা শর্তে বান্দরবান আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, সাধারণ সম্পাদক, পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য কাজী মুজিবর রহমান এবং পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মার্মা মিলে একটা গ্রুপ।
অন্যদিকে সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তংচঙ্গ্যা ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক লক্ষ্মীপদ দাশ আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এ বিরোধকে কেন্দ্র করে পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য পদ থেকে সভাপতি পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবল আলম হানিফ এবং প্রধান বক্তা হিসেবে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর এমপি উপস্থিত থাকবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লক্ষ্মীপদ দাশ জানান, সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে ইতিমধ্যে শহরের প্রাণকেন্দ্রে বড় বিলবোর্ড তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া সম্মেলনস্থল রাজারমাঠ প্রস্তুত হয়েছে।
দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র আরও জানায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, স্থানীয় এমপি বীর বাহাদুর আবারও বর্তমান কমিঠিকে নতুন করে দায়িত্ব তুলে দিতে চান।
তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, একদিকে ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন অন্যদিকে বর্তমান কমিটিকে পূর্ণবহাল করা হলে জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল মিটবে না। যার প্রভাব পড়তে পারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
এই সম্মেলনে বর্তমান কমিটির এক শীর্ষ নেতার হাতে আবার দলের দায়িত্ব দেওয়া হলে দলের আরেক শীর্ষ নেতার দল ছাড়ার বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তংচঙ্গ্যা বলেন, গণতান্ত্রিক নিয়মে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি হলে ভালো হবে।
তিনি আরও জানান, নেতাকর্মীরা মনে করেন, পুরনো নয়, আসুক নতুন নেতৃত্ব। আর তা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে। নির্বাচিত নেতৃত্বের হাত ধরে আগামী দিনে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় আওয়ামী লীগের ভীত আরও শক্ত হবে বলে মনে করেন তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইসলাম বেবী জানান, সম্মেলনে ভোটের প্রস্তুতি আছে, তবে সিলেকশনও করা হতে পারে।
সম্মেলনের মাধ্যমে আসা নতুন কমিটি সব কোন্দল দূর করে বান্দরবানে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাবে এমন আশা সাধারণ নেতাকর্মীদের।