পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেলেন সার্জ হারোশে ও ডেভিড ওয়াইনল্যান্ড

পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেলেন সার্জ হারোশে ও ডেভিড ওয়াইনল্যান্ড

ফ্রান্সের সার্জ হারোশে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড ওয়াইনল্যান্ড পদার্থবিদ্যায় তাদের গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছরের নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।  আলোর মৌলিক একক (ফোটন) বিশুদ্ধ কোয়ান্টাম অবস্থা পরিমাপের পদ্ধতি আবিষ্কারের স্বীকৃতি হিসেবে তাদের দু’জনকে পদার্থ বিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সম্মানজনক এ পুরস্কারে ভূষিত করা হলো।

তারা পদার্থের মৌলিক কণিকার কোয়ান্টাম প্রকৃতি পরিমাপ এবং একে নিপুনভাবে নিয়ন্ত্রণ করার একটি বিশেষ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন।

কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে এটা একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। কারণ, এর আগে কোয়ান্টাম কণিকাকে অক্ষত রেখে একে সরাসরি পর্যবেক্ষণ ও এর কোয়ান্টাম অবস্থা পরিমাপ অসম্ভব বলে মনে করা হত।

উল্লেখ্য, আলোক কণা বা পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যাকে কোয়ান্টাম বলা হয় এগুলোর ক্ষেত্রে চিরায়ত পদার্থ বিদ্যার সূত্রগুলো প্রয়োগ করা যায় না। তাই কণা পদার্থবিদ্যার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে একমাত্র ভরসা কোয়ান্টাম বলবিদ্যা।

কিন্তু এখানে সমস্যা হচ্ছে, পদার্থ থেকে একটি কণিকাকে অক্ষত অবস্থায় আলাদা করা খুবই কঠিন। আলাদা করার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের প্রভাবে তারা কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে। এ কারণেই আলাদা কণিকার বিশুদ্ধ কোয়ান্টাম অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ অসম্ভব বলেই মনে করা হত।

কিন্তু সেই অসাধ্য সাধন করেছেন হারোশে, ওয়াইনল্যান্ড এবং তাদের গবেষণা সহযোগীরা। তারা ল্যাবরেটরিতে এমন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যার মাধ্যমে একটি কণার বিশুদ্ধ কিন্তু অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী কোয়ান্টাম অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ করা যাবে।

এ পদ্ধতিতে তারা বৈদ্যুতিকভাবে চার্জিত একটি পরমাণু বা আয়নকে আলো বা ফোটনের সঙ্গে আলাদা করে তাদের নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছেন।

নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ ডেভিড জে ওয়াইনল্যান্ড ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের মিলাওকিতে জন্মগ্রহণ করেন। কেমব্রিজের হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে পিএইচডি লাভ করেন তিনি। বর্তমানে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব স্টান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজিতে অধ্যাপনা করছেন।

অপর নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ ফরাসি নাগরিক সার্জ হারোশে জন্ম নেন ১৯৪৪ সালে, মরক্কোর কাসাব্লাংকা নগরীতে। ১৯৭১ সালে প্যারিসের মেরি কুরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। বর্তমানে প্যারিসের কলেজ ডি ফ্রান্সে অধ্যাপনা করছেন তিনি।

সংবাদসম্মেলন থেকে করা ফোনের মাধ্যমেই প্রথম নিজের নোবেল প্রাপ্তির কথা জানতে পারেন সার্জ হারোশে। পুরস্কার ঘোষণার মাত্র ২০ মিনিট পর সাংবাদিকদের নিজের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান, খবরটা শোনার সময় আমি রাস্তায় ছিলাম, পাশেই একটি বেঞ্চি ছিলো, ফলে আমি সেখানে বসতে পেরেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে ঘরে ফিরছিলাম, কিন্তু যখন সুইডিশ কোড ভেসে উঠলো, তখনই আমি বুঝতে পারলাম এটি সত্যি।’

১৯০১ সাল থেকে নিয়মিত নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসা, পদার্থ, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতি এই মোট ছয়টি খাতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য পুরস্কারে ভূষিত করে আন্তর্জাতিক নোবেল কমিটি।

পদার্থে প্রথম নোবেল পুরস্কার পান জামার্ন পদার্থবিদ উইলহেম রন্টজেন। এক্স-রে আবিস্কারের জন্য তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এ বছর পুরস্কার পাওয়া ‍দু’জন সহ এ যাবত বিশ্বের ১৯৪ জন এ পুরস্কারে ভূষিত হলেন।

পদার্থে নো্বেল পুরস্কারের মূল্যমান সাড়ে সাতলাখ ইউরো বা ১২ লাখ মার্কিন ডলার। পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় সম্মাননার পাশাপাশি বিজয়ী দু’জনের মধ্যেই এ অর্থ ভাগ করে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি