অবশেষে টনক নড়ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। দালাল ও প্রতারক চক্রের খোঁজে বেশ জোরেশোরে অভিযান শুরু করেছে তারা। আর এ অভিযানের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র ভবনের প্রবেশপথ ও ভেতরের দেওয়ালগুলোতে সতর্কতামুলক নোটিশ টানানো হয়েছে।
নোটিশে লেখা হয়েছে, “দালাল ও প্রতারক চক্র থেকে সাবধান! বিনা টাকায় আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সত্যায়িত করে নিন, প্রতারকদের ধরিয়ে দিন, আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ।”
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন উইংয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি ভুয়া সরকারি আদেশ (জিও লেটার) দেখিয়ে অফিসিয়াল পাসপোর্ট ও নোটভারবাল সংগ্রহ করে আমেরিকার ভিসা নিয়ে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নেওয়া দুই প্রতারকের অভিনব প্রতারণার ঘটনা ফাঁসের পর এ অভিযান শুরু হয়। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য সতর্কতামুলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দালাল ও প্রতারকদের আনাগোনা ছিলো, এখনও আছে। ওই দুষ্ট চক্রের সঙ্গে যোগসাজস রয়েছে মন্ত্রণালয়ের আসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর। তারা মিলেমিশে দীর্ঘ দিন ধরে এ বাণিজ্য করে আসছে। বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সত্যায়িত করা, সহজে ভিসাপ্রাপ্তির জন্য পররাষ্ট্র দপ্তরের সুপারিশ সম্বলিত চিঠি-এলওআই বা নোট ভারবাল ইস্যুতে মোটা অঙ্কের অর্থ ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। এর সঙ্গে আছে রাজনৈতিক বিবেচনা, তদবির-চাপ।
কর্মকর্তারা ঘরোয়া আলোচনায় কনস্যুলার উইং কেন্দ্রিক নানামুখী বাণিজ্যের কথা স্বীকার করলেও তার প্রতিকার বা প্রতিরোধে কোন উদ্যোগ এতোদিন দেখা যায় নি।
সূত্র জানিয়েছে, প্রতারক ও দালাল চক্রের অভিনব প্রতারণা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ হলে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। প্রতারণা ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কনস্যুলার উইং ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়। সিদ্ধান্ত হয় পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে নোটভারবাল ও এলওআই ইস্যু না করার। সতর্ক করা হয় সত্যায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের। ডকুমেন্ট সত্যায়নে নির্ধারিত সময়ের পরে আসা ব্যক্তিরা যাতে দালাল চক্রের খপ্পড়ে না পড়ে সে জন্য প্রয়োজনীয় মনিটরিং জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রশাসন উইংয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “কেবল প্রবেশ পথই নয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীমানা দেওয়ালের আশপাশে যাতে কোন দালাল বা প্রতারক ভিড়তে না পারে এজন্য সিসিটিভি স্থাপনসহ দীর্ঘ মেয়াদী বেশ কিছু পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
শিগগির এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।