অতিরিক্ত লাভের আশায় ঝুঁকিতে বিনিয়োগ না করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নির্দেশ দিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মেলন কক্ষে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাবিলিটি রিপোর্ট- ২০১১ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে গর্ভনর এ নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, “অতিরিক্ত লাভের আশায় অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করা যাবে না। বিচক্ষণ ঋণনীতি গ্রহণ করতে হবে। যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করতে পারবেন, তার চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করা যাবে না। বাস্তবভিত্তিক নীতি গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ পরিস্থিতি নষ্ট করার সুযোগ দেবে না।’’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকরাসহ তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
আতিউর রহমান ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের উদ্দেশে বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, উন্নত দেশগুলিতে আর্থিক খাতে যেভাবে ভারসাম্যহীনতা এবং মাত্রাতিরিক্ত আন্তঃসংযোগ তৈরির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক সেরকম কোনো পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ দেবে না। আমরা একক প্রতিষ্ঠান সমগ্র ব্যাংকিং খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি মনিটর করছি। ব্যাংকগুলোকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ বা প্রদানের সুযোগ দেওয়া হবে না। এতে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা নীতির সুষ্টু পরিপালন হবে।”
তিনি আরো বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে পদ্ধতিগত নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি জোরদার করা হচ্ছে। এসব নির্দেশনা আগামী মাসগুলোকে আরো জোরদার করা হবে। কিন্তু আপনারা এগুলোকে অর্থিক নিয়ন্ত্রণ ভেবে আতংকিত হবেন না। তবে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতার জন্য এসব জরুরি। কোন ধরনের সংকট তৈরি হবার আগেই যাতে বুদ বুদ ধরা পরে সে বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক জোর দিচ্ছে।”
গভর্নর বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের নিদের্শনা ব্যাংকগুলোর ওপর অযৌক্তিকভাবে চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস নয়। আপনাদের অনুধাবন করতে হবে আইনগত প্রবিধিগুলো বিশেষত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ন্যূনতম মূলধন এবং প্রয়োজনীয় তারল্য রক্ষণশীল হিসাবায়স এবং সঠিক ও পদ্ধতিগত অভ্যন্তরীণ নীরিক্ষা সঠিক ব্যাংকিং রীতি। এগুলো বাধ্যতামূলক হোক আর না হোক কা পরিপালন করতে হবে।”
প্রধান নির্বাহীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, “প্রতিদিন আপনাদের লেনদেনের ট্রেজারি দেখতে হবে। একটি শাখায় দীর্ঘমেয়াদে খুব অস্বাভাবিক টাকা যাচ্ছে কিনা তার খোঁজ নিতে হবে। যাতে ঘুম থেকে উঠে অস্বাভাবিক কিছু না দেখতে হয়। অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকবেন না। নিজে সরাসরি কিছু বিষয় খেয়াল রাখবেন। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা যাতে কাজ করে সেদিকে নজর রাখবেন।”
এ সময় ডেপুটি গভর্নর এসকে সূর বলেন, “২০১১ সালে বিশ্ব মন্দা আঘাত করে। ফলে ব্যাংকিং খাত এবং সার্বিক অর্থনীতি ছিলো ঝুঁকিতে।” এ সময় তিনি ২০১১ সালের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনের নানা সূচক সংক্ষেপে তুলে ধরেন।
২০১১ সালের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন: অনুষ্ঠানে গভর্নর আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১১ পঞ্জিকা বছরের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত বছর ব্যাংকিং খাতে বড় কোন পরিবর্তন আসেনি। দ্বিতীয় বারের মতো প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাংকিং খাত, ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি, অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজারসহ ২০১১ সালের অর্থনৈতিক সূচকগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ২০১১ সালে ব্যাংকিং খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ শতাংশ। আর মোট সম্পদ দাড়ায় ৫ হাজার ৮৭৪ বিলিয়ন টাকা। তবে এ সময়ে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ কমলেও কু-ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এর ৬৫ শতাংশ। এটা ব্যাংকিং খারে জন্য উদ্বেগজনক। আর মোট আমানতের ৩৬ শতাংশ ছিলো ৫টি ব্যাংকে। এটি ব্যাংকিং খাতের জন্য সন্তোষজনক নয়। এছাড়া বছর জুড়েই ব্যাংকিং খাতে ছিলো তারল্য সংকট। ফলে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে অংশ গ্রহণ আগের বছরের তুলনায় বেশ বেড়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১১ সালে ব্যাংকগুলো মুনাফা সামান্য কমেছে। ২০১০ সালে যেখানে তারা মুনাফা করে আড়াই শতাংশ হারে সেখানে ২০১১ সালে মুনাফা হয় ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।