কলম্বো: ২০০৭, ২০০৯ ও ২০১১ সাল। তিনবারই ব্যর্থ শ্রীলঙ্কা। প্রথম ও তৃতীয় সালটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে ও মাঝেরটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরেছে তারা। ২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। শত চেষ্টা করেও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারলো না স্বাগতিকরা। তাদের ৩৬ রানে হারিয়ে প্রথমবারে মতো শিরোপা জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৩৭/৬ (ওভার ২০)
শ্রীলঙ্কা: ১০১ (ওভার ১৮.৪)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৬ রানে জয়ী
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১.১ ওভারে প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। রানের খাতা খোলার আগেই রবি রামপলের বলে বোল্ড হন তিলকারত্নে দিলশান (০)। মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারা দ্বিতীয় উইকেটে ৪২ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামলান। টুর্নামেন্ট জুড়েই রান খরায় থাকা সাঙ্গাকারা সুবিধা করতে পারেননি। স্যামুয়েল বাদ্রির বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে পোলার্ডের হাতে ধরা পড়েন তিনি (২২)। নতুন ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে (১) ক্রিজে থিতু হওয়ার আগেই বোল্ড করে ফেরত পাঠান ড্যারেন স্যামি।
দলীয় ৬০ রানের ঘরে পৌঁছতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। ৯ রানের মধ্যেই চার উইকেটের পতন হয় তাদের। শুরু হয় জয়াবর্ধনেকে দিয়ে, শেষ লাহিরু থিরিমান্নের বিদায়ে। ব্যক্তিগত ৩৩ রানে নারিনের বলে স্যামির তালুবন্দী হন জয়াবর্ধনে। ৩৬ বলে দুটি চারের সাহায্যে এই রান তোলেন তিনি। দলের বিপদ বাড়িয়ে রান আউটের ফাঁদে ধরা দেন জীবন মেন্ডিস (৩) ও থিসারা পেরেরা (৩)। অন্যদিকে স্যামির বলে চার্লসের হাতে ধরা পড়েন থিরিমান্নে (৪)।
পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে নুয়ান কুলাসেকারা ১৩ বলে ২৬ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দিলেও জয়ের জন্য সেটি যথেষ্ট ছিলো না।
৯ রানে তিনটি উইকেট দখল করেন সুনিল নারিন। দুটি উইকেট পেয়েছেন ড্যারেন স্যামি। এছাড়া বাদ্রি, রামপল ও স্যামুয়েলস প্রত্যেকেই নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
এর আগে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রানের খাতা খোলার আগেই ম্যাথুসের বলে ক্যাচ আউট হন জনসন চার্লেস।
নিজের স্বভাবসূলভ ভঙ্গির বিপরীতে ব্যাট করেছেন ক্রিস গেইল। আক্রমণাত্মক নয়; সম্পূর্ণ রক্ষণাত্মক খেলছেন মারকুটে এই ক্রিকেটার। নইলে ১৬ বলে ৩ রান। এর মধ্যে কোন চার বা ছয় হাঁকাতে পারেননি তিনি। ব্যক্তিগত ৩ রানে অজন্তা মেন্ডিসের বলে এলবিডব্লউর শিকার হন দ্বিতীয় সেমিফইনালে অস্ট্রেলিয়ার ওপর ঝড় বয়ে দেওয়া গেইল।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন মারলন স্যামুয়েলস ও ডোয়াইন ব্রাভো। এই জুটিতে আসে গুরুত্বপূর্ণ ৫৯ রান। অজন্তা মেন্ডিসের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ১৯ রান করেন ব্রাভো।
স্যামুয়েলস দারুণ খেললেও অজন্তা মেন্ডিজের স্পিন ঘূর্ণির ফাঁদে পড়ে নাকাল হয়েছে ক্যারিবীয় শিবির। গেইল ও ব্রাভোর পর আরও দুই উইকেট শিকার করেন অজন্তা। এজন্য ৪ ওভারে ক্যারম বলের কারিগর খরচ করেন ১১ রান। তার বলে কিয়েরন পোলার্ড (২) ক্যাচ দেন ধনঞ্জয়ার হাতে। আর ব্যক্তিগত শূন্য রানে অজন্তার বলে সাজঘরে ফেরেন আন্দ্রে রাসেল।
লঙ্কানদের বোলিং তোপে একে একে সতীর্থরা বিদায় নিলেও বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন স্যামুয়েলস। ৫৬ বলে ৭৮ রান করেন ডানহাতি ক্রিকেটার। তিনটি চার ও ছয়টি দিয়ে নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি। তার দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে শেষপর্যন্ত ৬ উইকেটে ১৩৭ রান করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এছাড়া অপরাজিত ২৬ রান করেন ড্যারেন স্যামি।
শ্রীলঙ্কা দল: মাহেলা জয়াবর্ধনে (অধিনায়ক), তিলকারত্নে দিলশান, কুমার সাঙ্গাকারা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, জীবন মেন্ডিস, লাহিরু থিরিমান্নে, থিসারা পেরেরা, নুয়ান কুলাসেকারা, লাসিথ মালিঙ্গা, আকিলা ধনঞ্জয়া ও অজন্তা মেন্ডিস।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল: ড্যারেন স্যামি (অধিনায়ক), জনসন চার্লেস, ক্রিস গেইল, মারলন স্যামুয়েলস, ডোয়াইন ব্রাভো, কিয়েরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল, দিনেশ রামদিন, সুনীল নারিন, রবি রামপল ও স্যামুয়েল বাদ্রি।