তুর্কি সীমান্ত শহর লক্ষ্য করে সিরীয় বাহিনীর মর্টার হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। মঙ্গলবার সিরীয় সীমান্ত সংলগ্ন তুর্কি শহর আকাকেলেতে সিরিয়া থেকে ছোড়া মর্টারের গোলায় নারী ও শিশুসহ ৫ তুর্কি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।
এই হামলা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি এ ঘটনা সিরিয়ার চলমান সহিংসতাকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাবে বলে বিবৃতিতে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
তবে সিরিয়ার মিত্র রাশিয়ার আপত্তির কারণে খসড়া বিবৃতিতে উল্লেখ হওয়া ‘ এ হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি’ লাইনটি চূড়ান্ত বিবৃতিতে সংযুক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে সিরিয়ার অভ্যন্তরে সামরিক অভিযান চালানোর ব্যাপারে সামরিক বাহিনীকে অনুমতি দিয়েছে তুর্কি পার্লামেন্ট। বৃহস্পতিবার তুরস্কের পার্লামেন্টে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়। এর ফলে এখন থেকে তুর্কি সামরিক বাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়ার অভ্যন্তরে অভিযান চালাতে পারবে। তবে এ অনুমতি পরবর্তী এক বছরের জন্য বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
তুর্কি সীমান্ত শহর আকাকেলেতে সিরিয়া থেকে ছোড়া গোলায় তিন শিশু ও দুই নারী নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তুর্কি পার্লামেন্ট এ পদক্ষেপ গ্রহণ করলো।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আকাকেলে সফররত তুর্কি প্রধানমন্ত্রী এরদোগান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা শান্তি ও নিরাপত্তার বাইরে কিছু চাইনা।”
তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন,“তুরস্ক তার সীমান্ত ও নাগরিকদের বহিঃআক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। তাই কারো উচিৎ নয় তুরস্কের ধৈর্য্য ও সহ্যসীমার পরীক্ষা নেওয়া।”
এদিকে তুর্কি পার্লামেন্টে আইনটি পাশের প্রতিবাদে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তুর্কি যুদ্ধবিরোধী কর্মীরা। তবে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রেসেপ তাইপ এরদোগান আশ্বস্ত করে বলেছেন তার দেশ সিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে আগ্রহী নয়।
বৃহস্পতিবার হাজার খানেক তুর্কি বিক্ষোভকারী ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত তাকসিম স্কয়ারে ওই যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। এ সময় তারা ‘যুদ্ধ নয় শান্তি’ সেøাগান উচ্চারণ করে। পাশাপাশি অনেকে ‘আমরা সাম্রাজ্যবাদীদের যুদ্ধের বলি হতে চাইনা’ লেখা ব্যানারও বহন করে। অনেক বিক্ষোভকারী এ সময় তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা একেপি পার্টিকে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রীড়নক হিসেবে দাবি করে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দেওয়া বিবৃতির ব্যাপারে একজন বিশ্লেষক জানান এ বিবৃতিতে অপেক্ষাকৃত শক্ত শব্দ ব্যবহার করা হলেও আরও অধিকতর কঠোর শব্দ উল্লেখ করার ব্যাপারে সিরিয়ার অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়েছে।
তবে সিরীয় গোলাবর্ষণের নিন্দার বিপরীতে সিরিয়ায় তুরস্কের পাল্টা গোলাবর্ষণের নিন্দা বিবৃতিতে সংযুক্ত করার জন্য রাশিয়া চেষ্টা চালালেও তাদের এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় বলে জানা গেছে।
এদিকে জাতিসংঘে সিরীয় রাষ্ট্রদূত বাশার জাফারি বলেছেন তারা তুরস্কের সঙ্গে সংঘাত বাড়াতে আগ্রহী নন। তবে একই সঙ্গে আলেপ্পোতে সংঘটিত আত্মঘাতী হামলার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় নিরাপত্তা পরিষদের সমালোচনা করেন তিনি।
তবে শুক্রবার এ ব্যাপারে জাতিসংঘ আরেকটি আলাদা বিবৃতি দেবে বলে সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন জাতিসংঘের একজন শীর্ষ কূটনীতিক।