ওষুধ আছে কিন্তু রোগীরা তা পান না; এক্সরে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন বিকল; শয্যা সংকট; অতিরিক্ত রোগীর চাপ; প্রয়োজনীয় ওষুধ সংকট; চিকিৎসকদের অফিস ফাঁকি; ক্লিনিকের দালাল ও ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য নিয়ে চলছে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল।
১০০ শয্যার এ হাসাপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছে ২ শতাধিক। ফলে অতিরিক্ত রোগীর মেঝে ও বারান্দায় আশ্রয় নিয়ে সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে।
হাসপাতালে শিশু, সার্জারি, মেডিসিন, অর্থোপেডিকস, চর্ম, যৌন, নাক কান গলা বিভাগের চিকিৎসক থাকলেও চক্ষু বিশেষজ্ঞের পদটি শূন্য রয়েছে।
এছাড়া প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে (জরুরি বিভাগ মিলে) ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী সেবা নিচ্ছেন। হাসপাতালে শুধুমাত্র অপারেশন থিয়েটার সচল রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এক্সরে মেশিন, ইসিজি মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন বিকল থাকায় রোগীদের বাইরের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা করতে হয়।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, কুকুড়ের কামড়ের ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়ার কথা থাকলেও ভাউচার ছাড়া প্রতিটির জন্য ৩ থেকে ৫শ টাকা উৎকোচ দাবি করা হয়। এছাড়া দুর্ঘটনা, মারামারিতে জখম ইত্যাদি জরুরি রোগীদের কাছ থেকে সেলাই বাবদও টাকা নেওয়া হয়।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়তি রাণী দেবীর স্বামীর মালিকানাধীন নিতু ফার্মেসি ও হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. মঈনুদ্দিনের পলাশ ফার্মেসিতে গাইনি বিভাগের সরকারি ওষুধ পাওয়া যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও তারা এ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
শ্রীমঙ্গলের গাজীপুরের বৃদ্ধা করিমুন্নেছা বেগম (৬৫) মঙ্গলবার জানান, গ্যাস্টিকের বেদনা নিয়ে সকাল ১০টায় এসেছেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ডাক্তার দেখাতে পারছেন না।
একই কথা বললেন নয়ানচিরি গ্রামের ওয়াহিদ মিয়া (৭০) ও বরুনা গ্রামের ছালেক মিয়া (১৫)। তারা জানান, চিকিৎসা নিতে এসে কয়েক ঘণ্টা পর ডাক্তার দেখালেও প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন ছাড়া কোনো ওষুধই পেলেন না। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের স্টোর কিপার হারুনুর রশীদ জানান, হাসপাতালে প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন, পেনিসিলিন, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, এন্টিবায়েটিকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধের কোনো সংকট নেই। প্রতিমাসে তালিকার মাধ্যমে ২/৩ বার সিভিল সার্জন অফিস থেকে এ ওষুধ আনা হয়।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. কান্তি ভূষণ ভট্টাচার্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, প্রয়োজনীয় সব ওষুধ হাসপাতালে রয়েছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপই এখন প্রধান সমস্যা। নব-নির্মিত ১৫০ শয্যা হাসপাতালটি চালু হলেই সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে।
সিভিল সার্জন ডা. মো. গোলাম রাজ্জাক চৌধুরী জানান, সরকার সব ধরনের পর্যাপ্ত ওষুধই বরাদ্দ দিচ্ছে। নতুন আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও ইসিজি মেশিনের জন্য চিঠি লেখা হয়েছে।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দীনেশ সূত্র ধর জানান, বর্তমানে ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে ২৫০ শয্যার কার্যক্রম চলছে। চলমান এই হাসপাতালে চিকিৎসক, স্টাফ নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোনো সংকট নেই। আছে শুধুমাত্র রোগীদের প্রচণ্ড চাপ।
বর্তমান ১০০ শয্যা ও নব-নির্মিত ১৫০ শয্যা মিলে (২৫০ শয্যার) হাসপাতাল চালু হলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক ।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বর্তমান ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকায় এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য ২৩ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ২৪ সেপ্টেম্বর নব-নির্মিত হাসপাতাল চালু করার।