রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে: এডিবি

রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে: এডিবি

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। চলতি অর্থবছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) হার ৬ শতাংশে নেমে যাতে পারে বলে আশঙ্কা করে প্রতিষ্ঠানটি।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এডিবি কার্যালয়ে বাংলাদেশে সংস্থাটির প্রধান আবাসিক অর্থনীতিবিদ (প্রিন্সিপাল কান্ট্রি ইকোনমিস্ট) মো. জাহিদ হোসেন একথা বলেন। এদিন এডিবির “এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুট, ২০১২” শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে নির্বাচনে আগে আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, এটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

এডিবি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষমাত্রা অর্জিত না হলে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চাপে পড়বে। এতে করে পরিকল্পিত বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হবে।

ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে সরকারকে নিরুৎসাহিত করেছে এডিবি। অন্যথায় আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট হবে বলে জানায় বহুজাতিক সংস্থাটি।

মো. জাহিদ হোসেন বলেন, “বিদ্যুৎ খাতের জন্য যে অতিরিক্ত তেল আমদানি করছে বাংলাদেশ, এটা বাড়তে থাকলে আমদানি ব্যয়ও বাড়বে। আর তেল আমদানি কমারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, কারণ সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।”

তবে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছে এডিবি। এর কারণ হিসেবে সংস্থাটি জানায়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে অনেক শ্রমিক যাচ্ছে।

ভর্তুকি কমানোর সুপারিশ
“এশিয়ান ডেভলপমেন্ট আউটলুক ২০১২” রিপোর্টে বলা হয়েছে, অবকাঠামো খাতে বেশি ব্যয় সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। এডিবির ধারণা, ভর্তুকি কমিয়ে এনে সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনবে সরকার। এছাড়া রাজস্ব আয়ের লক্ষমাত্রা এবং বিদেশি অর্থ সহায়তার পাওয়ার লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে। তবে যা কিছুই করা হোক না কেন চূড়ান্তভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারের অস্থিরতা রফতানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানিসহ অন্য দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল হয়ে আসবে।

এডিবি অনুমান করছে, ইউরো অঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সংকট থেকে ধীরগতির উত্তরণের কারণে বাংলাদেশের রফতানি প্রবৃদ্ধির হার কম হতে পারে। তবে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বাড়তে পারে।

এতে বলা হয়, বছরের প্রথম ছয় মাসে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ ভালো থাকায় এর মূল্য কমবে। তবে শেষার্ধে খরাসহ বিভিন্ন কারণে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রফতানি প্রবৃব্ধি কম হবে। তবে শেষ ছয় মাসে তা বাড়তে পারে।

Adb-smতবে আশার কথা, কৃষিতে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ থেকে বেড়ে ৪ দশমিক ৫-এ গিয়ে দাঁড়াবে। মূলত সরকারের সহায়তার কারণে এটি হবে। কিন্তু শিল্পের প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও রফতানি প্রবৃদ্ধি  না হওয়ায় এর প্রধান কারণ।

সেই সঙ্গে সরকারের বাজেট ঘাটতিও ৫ শতাংশ পৌঁছবে। অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন ৩ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে নেমে ৩ দশমিক ২ শতাংশ হবে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১২’র রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং-এর শুরুতে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর তেরেসা খো বলেন, ২০১৩ অর্থবছরে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি কমে গিয়ে ৬ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। গেল অর্থবছরে বার্ষিক প্রবৃব্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল, যা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের প্রায় কাছাকাছি (৬.২) শতাংশ।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি দুই ক্ষেত্রেই জমির প্রাপ্যতা একটি বড় ইস্যু। শ্রমিকের হার বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হওয়া দরকার।”

অর্থ বাণিজ্য