বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ২১ নেতাকর্মীর মতো যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালেরও ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
তাকে নিয়ে বুধবার মোট ২২ জনকে ২ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন বিচারক। তবে আইনজীবী বিবেচনায় অপর ৩ আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে জামিন দিয়েছেন তিনি।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় বুধবার তাদের সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হলে মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ ২২ জনের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
একই থানায় দায়ের হওয়া দণ্ডবিধির মামলায় আলালসহ ২৫ আসামিকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হলে আদালত তা নাকচ করেন। তবে আসামিরা একই থানার অপর একটি মামলায় রিমান্ডে থাকায় তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজনে ২২ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন মর্মে আদেশ দেন বিচারক।
এর আগে একই বিচারক পল্টন থানার দ্রুত বিচার আইনের মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ২১ নেতাকর্মীর ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- অ্যাডভোকেট মো. মোশারফ হোসেন, সোহাগ ভুইঞা ও কাজী রহমান মানিক।
আলাল ছাড়া রিমান্ডপ্রাপ্ত অপর ২১ আসামি হলেন- আবুল কালাম, আ. আজিজ, তারাপদ সরকার, আনোয়ার হোসেন ইকবাল, এরশাদ, মো. উজ্জ্বল হোসেন, মোখলেছুর রহমান মিল্টন, সোলায়মান, মো. রবি, নজরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, জাকির হোসেন, অলিউল ইসলাম, রাসেল, কাজল, ইলিয়াছ, সাদেক, জাবেদ, আব্দুল মতিন, বেল্লাল ও সজল।
তাদের রিমান্ড শুনানির পর বেলা চারটার দিকে আলালকে আদালতে হাজির করা হয়।
এদিনই দুপুরে পুলিশের এডিসি (প্রসিকিউশন) আনিসুর রহমান জানিয়েছিলেন, গ্রেফতার হওয়া আলালকে পল্টন থানার দুই মামলার একটিতে ১০ দিন ও অপরটিতে ৭ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হতে পারে।
রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, নেত্রকোনা জেলায় ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গোলযোগ সৃষ্টির জন্য আসামিরা মঙ্গলবার কোন পূর্ব অনুমোদন ছাড়াই বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তাৎক্ষণিক এক বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে।
এসময় তারা একটি জিপ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, যানবাহন চলাচলে বাধা দেয় এবং ত্রাসের সৃষ্টি করে।
সমাবেশের অপর অংশে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল, সেক্রেটারি মীর সরফত আলী সপু, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলালের নেতৃত্বে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ২০০/৩০০ জন নেতাকর্মী হঠাৎ করে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশ পাশের এলাকায় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
এর আগে দুপুর দু’টার আগে আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয় থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফিরে বিএনপির সংসদীয় প্রতিনিধি দলের নেতা ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক জানান, আলালকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিনই দুপুর সোয়া ১২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আলালকে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পৌনে দু’ঘণ্টার মাথায় দুপুর দু’টার দিকে তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
বস্তুত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকেই মঙ্গলবার রাতভর অবরুদ্ধ থেকে বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আলালকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সে সময় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা মতিঝিল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়ার মামলার আসামি হিসেবেই আলালকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দুপুর পৌনে একটার দিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে ডিবি র্কাযালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন অপর চার এমপি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানী, মুজিবুর রহমান সরোয়ার, আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও নিলুফার চৌধুরী মনি।
আইনজীবী হিসেবে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াও যোগ দেন ওই প্রতিনিধি দলে।
দুপুর ২টার আগে আগে প্রতিনিধি দলটি নয়াপল্টনে ফিরে আসে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের জেরে রাতেই আড়াই হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দু’টি মামলায় আলালকে গ্রেফতার করা হয়।
পল্টন থানায় দায়ের করা মামলা দু’টির একটিতে গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশকে মারধর ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। অন্য মামলাটি করা হয় দ্রুত বিচার আইনে।
এছাড়া রমনা থানার মামলায় বেআইনি সমাবেশ ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়।
ওই সংঘর্ষ ও মামলা দায়েরের পর থেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবসহ শতাধিক নেতাকর্মী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
মঙ্গলবার দিনগত রাত পৌনে ২টায় রিজভী আহমেদ বলেন, “আমরা অবরুদ্ধ হয়ে আছি। বসে রাত কাটাচ্ছি। দলের কোনো নেতাকর্মী বাইরে বের হতে গেলেই তাদের আটক করা হচ্ছে।”
এর আগে বিকেলের দিকে নেত্রকোনায় ১৮ দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল নয়াপল্টনে আসার পথে পুলিশি বাধার মুখে পড়লে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
এসময় উভয়পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ছোঁড়ে রাবার বুলেট। কিছুক্ষণের মধ্যে নয়াপল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া নেতা-কর্মীদের রাত কেটে যায় সেখানেই।
বুধবার সকালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগ উড়িয়ে দেন রিজভী। নেতাকর্মীরা কার্যালয় থেকে বের হলে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে আশঙ্কাও ব্যক্ত করেন তিনি। আলাল আটক হওয়ায় তার আশঙ্কা সত্যে পরিণত হয়।
আসামিপক্ষে মামলার শুনানি করেন, সানাউল্লাহ মিয়া, মোহসীন মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, ইকবাল হোসেন প্রমুখ আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ডের শুনানি করেন মহানগর পিপি মো. আব্দুল্লাহ আবু ও অতিরিক্ত পিপি শাহ আলম তালুকদার