আবাসন খাতে বিপর্যয়, ব্যাংকঋণে জর্জরিত

আবাসন খাতে বিপর্যয়, ব্যাংকঋণে জর্জরিত

জাতীয় অর্থনীতিতে ২১ শতাংশ অবদান রেখেও আবাসন খাতের সঙ্কট কাটছে না। বিদ্যুত সংযোগের অভাবে হুমকির মুখে পড়েছে বিপুল সম্ভাবনাময় এই খাত। অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় ৩০ হাজার রেডি ফ্ল্যাট। আবাসন প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলোর বিক্রির হার সম্প্রতি ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।

এদিকে ৩০ হাজার কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উদ্যোক্তারা।

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের হিসেব অনুযায়ী, আবাসন শিল্পে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে রয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশই প্রবাসীদের। যার পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া রয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ।

অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এ খাতকে ঘিরে গড়ে উঠছে প্রায় ২৭০টি উপখাত। এগুলোতে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার শিল্প। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ শিল্পে  কাজ করছে কয়েক লাখ মানুষ। কিন্তু এই খাতের উন্নয়নে সরকারের কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

উল্টো গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগের্ অভাবে চরম হুমকির মুখে পড়েছে পোশাক শিল্পের মতোই সম্ভাবনাময় এই বিশাল খাতটি। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২১ জুলাই থেকে গ্যাস সব ধরনের গ্যাস সংযোগ বন্ধ ঘোষণা করে।

তিন বছর ধরে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় অনেককে বাধ্য হয়ে এলপি গ্যাস ব্যবহার করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিবার প্রতি প্রায় ৩ হাজার টাকা প্রতি মাসে এলপি গ্যাসের পেছনে ব্যয় করতে হয়। এই বাড়তি খরচের ভয়ে অনেকে ফ্ল্যাট কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

এছাড়া ২০১০ সালের ৩১ মার্চ থেকে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। চলতি বছর নতুন করে সংযোগ দেয়া শুরু হলেও স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আবারও তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব কারণে অনেক ফ্ল্যাটের নির্মাণকাজ শেষ হলেও তা গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করতে পারছে না ডেভেলপার কোম্পানিগুলো।

রিহ্যাবের একটি  সূত্র জানিয়েছে, এ সঙ্কটের কারণে  র্বতমানে ঢাকায় তিন শতাধিক নতুন প্রকল্পে ৩৬শ’ অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণের কাজ আটকে আছে। এতে এ খাতে জড়িত প্রায় দুই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । এছাড়া বেকার হয়ে পড়ছে প্রায়  ৩০ হাজার শ্রমিক।

এছাড়া এ কারণে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ১২শ’ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করার পরও প্রতি মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকার বাসা ভাড়া গুনতে হচ্ছে চার হাজার ক্রেতাকে । এর পাশাপাশি ১৫ কোটি টাকা ব্যাংক সুদ দিতেও বাধ্য হচ্ছেন তারা।

এদিকে স্যোলার প্যানেলকে বাধ্যতামূলক করে সীমিত আকারে নতুন কিছু বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। তিন শতাংশ স্যোলার প্যানেল থাকলে বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও গ্যাসের সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ।

জাতীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে আবাসন শিল্পের প্রতি সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে এই দাবি জানিয়ে আসছেন আবাসন ব্যবসায়ীর‍া। রিহ্যাবের একটি সূত্র জানায়, বিপুল অংকের ব্যাংকঋণ নিয়ে গড়ে তোলা একেকটি প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছে। একটি হিসেবে দেখা গেছে, গৃহায়ণ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আড়াই শতাধিক উদ্যোক্তার ১০ হাজার প্রকল্প বন্ধ রয়েছে।

উদ্যোক্তারা জানান, প্রায় ৮০ শতাংশ ফ্ল্যাট ও প্লটের ক্রেতা তাদের ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারছেন ন‍া। মাঝপথে ঋণের কিস্তি বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন বিক্রেতারাও। অন্যদিকে তারল্য সঙ্কটের কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও গৃহায়ণ খাতে ঋণ দেওয়া বন্ধ রাখছে।

অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংকঋণের অর্থ লগ্নি করে ফ্ল্যাট বানিয়ে এখন তা বিক্রি করতে না পেরে দেউলিয়‍া হওয়ার পথে।

অর্থ বাণিজ্য