জাহিদ হাসান বাংলাদেশের জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা। নব্বই দশকের বাংলাদেশের প্রথম সারির অভিনেতাদের একজন। অনেকটা দাপটের সঙ্গে কাজ করে আসছেন। নাটক ছাড়াও চলচ্চিত্রে অভিনয়েও আসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন জাহিদ হাসান।
৪ অক্টোবর নাট্যাঙ্গণের জনপ্রিয় এ অভিনেতার জন্মদিন। স্ত্রী মডেল ও নাট্যাভিনেত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌ, মেয়ে পুষ্পিতা ও ছেলে পূর্ণকে নিয়ে একেবারেই ঘরোয়াভাবে জন্মদিন পালন করেন। তবে মুঠোফোনে সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন জাহিদ।
এবারের জন্মদিন কিভাবে কাটাবে এ বিষয়ে জাহিদ হাসান বলেন, সব সময়ই আমি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এ দিনটি বিশেষভাবে কাটানোর চেষ্টা করি। স্ত্রী, মেয়ে এবং ছেলেকেই বিশেষভাবে সময় দেই।
এ দিনে সমাজের গরীব দুঃখীদেরও পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আমরা প্রত্যেকেই যদি সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই তাহলে হয়তো মানুষের এতো কষ্ট থাকতো না। আর বন্ধু-আপনজনের তো শেষ নেই। তাই আমি যাদের অনেক বিশ্বাস করি এবং ভালবাসি তাদের সঙ্গেও কিছুটা সময় কাটাব।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে মঞ্চকে আলোকিত করে আবির্ভূত হন জাহিদ হাসান। নাট্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। ১৯৯১ সালে দলের হয়ে প্রথম `বিচ্ছু` নাটকে অভিনয় করেন। এ নাটক দিয়েই ঢাকার মঞ্চে তার নাম আলোচিত হয়। এর আগে দীর্ঘদিন সিরাজগঞ্জ তরুণ সম্প্রদায়ে কাজ করতেন।
সেখানে `সাত পুরুষের ঋণ`, `ওরা কদম আলী`, `ইবলিশ` প্রভৃতি নাটকে অভিনয় করে অভিজ্ঞ হয়েছেন। এরপর নাট্যকেন্দ্রে `তুঘলক`, `সুখ`, `জেরা` প্রভৃতি নাটকেও দেখা গেছে তাকে। নাট্যকেন্দ্রের হয়ে শেষ অভিনয় করেন `তুঘলক` নাটকে। এরপর থেকেই মঞ্চের সঙ্গে তার বিরতি। ব্যস্ত হয়ে ওঠেন টেলিভিশনে।
টিভি নাটকে অভিষেকের আগে বড় পর্দায় তার অভিষেক ঘটে। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘বলবান’।
বাংলাদেশের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল রতিফ বাচ্চু। ছবিটি ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায়। নিজের জন্মের কথা মনে করে তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জে নানার বাড়িতে এ দিনে সন্ধ্যার সময় আমার জন্ম। এমনই শুনেছি আমি বাবা আর মায়ের কাছে। জাহিদ হাসানের বাবা মরহুম ইলিয়াস উদ্দিন তালুকদার এবং মা হামিদা বেগম। পাঁচ ভাই তিনবোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়।
এরপর অনেক বছর বিরতি নিয়ে প্রয়াত হিরোইন শ্যামার বিপরীতে ‘জীবন সঙ্গী’ ছবিতে অভিনয় করেন। ছবিটি ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায়। তার আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে বিহঙ্গ, শ্রাবণ মেঘের দিন, শঙ্খনাদ, ঝন্টু মন্টু দুই ভাই, আমার আছে জল।
জাহিদ হাসান অভিনীত প্রথম টিভি নাটক আলিমুজ্জামান প্রযোজিত ‘জীবন যেমন’। এটি ১৯৯০ সালে বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছিলো। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ধারাবাহিক এবং খন্ড নাটক মিলিয়ে তিনি হাজারেরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন।
১৯৯৯ সালে তিনি প্রথম নির্দেশনায় আসেন নিজের প্রযোজনা সংস্থা ‘পুষ্পিতা ভিজ্যুয়ালস’ থেকে। তার প্রথম নির্দেশিত নাটক ‘অন্য তেপান্তর’। এ পর্যন্ত নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা থেকে তিনি প্রায় বিশটি ধারাবাহিক ও খন্ড নাটক নির্মাণ করেছেন।
কাজের ফাঁকে সহশিল্পীদের নিয়ে জম্পেশ আড্ডা দিচ্ছেন জাহিদ। প্রত্যেকেই খুব খুশি জাহিদের গল্প শুনে। মাঝে জানতে চাইলাম রান্না করতে পছন্দ করেন কি না? হেসে বললেন, মাঝে মাঝে করি, কিন্তু ঝাল দিয়ে ফেলি অনেক।
দেখা যায় রান্না খেতে গিয়ে অবস্থা বেহাল। তবে আমি নিজে সুস্বাদু অনেক রকমের খাবার পছন্দ করি। স্বাদ না থাকলে যত দামী খাবার হোক আমি খাই না।
অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা, আন্তরিকতাই জাহিদ হাসানকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। অভিনয় জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সেই আগের মতোই ভালোবাসা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা দেখা যায় তার মধ্যে।
আগামী বছরের শুরুতে `গিরগিটি` নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করার কথা ছিল তার। কিন্তু আপাতত এ চলচ্চিত্রের কাজ করবেন না তিনি। এর কারণ হিসেবে জানালেন, আমার মন না চাইলে আমি কাজ করি না। প্রথমে ইচ্ছে থাকলেও এখন আর নাই। হয়ত করব কিন্তু কখন শুরু করব জানি না। আর এখন অভিনয়েও সময় কম দিচ্ছি। অনেক দিন তো হলো, অনেক সময় ভালো লাগে না।
এটা জানার পর জাহিদ হাসানের শ্রোতা-ভক্তরা হতাশ হবেন না। এবার ঈদে তার পরিচালিত ও অভিনীত বেশ কিছু নাটক বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হবে। এর মধ্যে এটিএন বাংলায় ‘চিঠি’, বাংলাভিশনে ‘নীলিমা কাঁদছে কেন’ সহ আরো বেশ কিছু নাটক।