শেন ওয়াটসন, ডেভিড ওয়ার্নার ও মাইক হাসির বিরুদ্ধে খেলেছে পাকিস্তান। মোহাম্মদ হাফিজ খেলা শেষে তাই তো বললেন!
একটু ব্যাখ্যা করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। গত চার ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের ভিত গড়ে দেন ওয়াটসন। ওয়ার্নারও রানে ছিলেন। মিডলঅর্ডারে ইনিংস টানেন মাইক হাসি। এই তিনজনের উইকেট খুব মূল্যবান ছিলো পাকিস্তানের জন্য। তাদের অকার্যকরের জন্য বোলিং আক্রমণ সাজিয়ে ছিলেন হাফিজ। বোলাররা তাকে প্রতিদানও দিয়েছেন।
এই বিশ্বকাপে মঙ্গলবারের আগপর্যন্ত অজেয় ছিলো অস্ট্রেলিয়া। অলরাউন্ডার ওয়াটসন ছিলেন প্রধান হাতিয়ার। বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও ফেল করেছেন তিনি। ওয়াটসন চার ওভারে ২৩ রান দিয়ে পেয়েছেন একটি উইকেট। স্পিনার জ্যাভিয়ার ডোহার্টিও আগের মতো কার্যকর স্পেল করতে পারেননি। চার ওভারে ২৭ রান দিয়ে নিয়েছেন একটি উইকেট। পেসার প্যাট কামিন্স চার ওভারে একটি এবং বাঁহাতি চায়নাম্যান তিন ওভারে ২৯ রান দিয়ে উইকেট শূন্য। তবে তরুণ পেসার মিচেল স্টার্ক ছিলেন দুর্বার। তিনি চার ওভারে ২০ রান দিয়ে নিয়েছেন তিন উইকেট।
পাকিস্তানের ইনিংসের শুরুতে আঘাত করেছিলেন মিচেল। দলের পাঁচ রানে অধিনায়ক হাফিজকে (৪ রান) এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন। দ্বিতীয় উইকেটে ইমরান নাজির ভয়ঙ্কর হয়ে উঠার আগেই ওয়াটসন ফিরিয়েছেন। ১৩ বলে ব্যক্তিগত ১৪ রানে ক্যাচআউট হয়েছেন তিনি।
মূলত নাসির জামশেদ এবং কামরান আকমল ইনিংস টেনেছেন। তৃতীয় উইকেটে তারা দু’জন ৫৫ বল খেলে করেছেন ৭৯ রান। জামশেদ ৪৬ বলে ৫৫ রান নিয়ে ডোহার্টির বলে ক্যাচ দিয়েছেন। চারটি চার ও দুটি ছয় দিয়ে ইনিংস সাজিয়েছেন তিনি। দুই বল পরেই সাজঘরে ফিরেছেন আকমল। ২৬ বলে ৩২ রান নিয়ে মিচেলের শিকার। আব্দুল রাজ্জাক এবং উমর আকমলের মধ্যে ২৮ রানের জুটি হয় পঞ্চম উইকেট। দুই চার ও এক ছয়ে ১৭ বলে ২২ রান করে কামিন্সকে উইকেট দিয়েছেন রাজ্জাক।
পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিলো ২০ ওভারে ১৫০ প্লাস রান। ছয় উইকেটে ১৪৯ রানে ইনিংস শেষ হয়। প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শীর্ষ আটের খেলায় এটাই তাদের সর্বোচ্চ ইনিংস। পাকিস্তান অধিনায়কের বিশ্বাস ছিলো এই রান নিয়ে জিতে যাবে তার দল। বিশ্বকাপে প্রতিদানও দিয়েছেন বোলাররা।
১৯ রানের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারের উইকেট তুলে নেয়। ১৪ বলে ৮ রান হলে পেসার রাজা হাসান এলবিডব্লু ফাঁদে ফেলেন ওয়াটসনকে। হাফিজের বলে এলবিডব্লু হন ওয়ার্নার। ১৩ বল খেলে ৮ রান করেছেন তিনি।
দুই ওপেনার চলে যাওয়ার পর বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন মাইক হাসি। কোন ভাবে তাকে আউট করতে পারেনি পাকিস্তান। তিনি অপরাজিত থাকলেও জুড়ি গড়তে দেয়নি বোলাররা। তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক জর্জ বেইলির সঙ্গে ২৫ রানের, ক্যামেরুন হোয়াইটের সঙ্গে ১৪ রানের এবং ষষ্ঠ উইকেটে ম্যাথু ওয়েডের সঙ্গে ৪৬ রানের জুটি হয় হাসির। ২০ ওভারে সাত ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া করে ১১৭ রান।
শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিলো ৪০ রান। ওমর গুলের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন হাফিজ। প্রথম বলে চার হাঁকিয়ে বসেন হাসি। পাঁচ বলে ৩৬ রানের অসম্ভব টার্গেট নিয়ে খেলে তিন রানের ব্যবধান কমাতে পারে।
পাল্লেকেলেতে প্রথম রাউন্ডের খেলায় পাকিস্তানের বোলিং বিভাগ দারুণ কার্যকর ছিলো। এখানে সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ভালো বোলিং হয়েছে। ভারতের বিপক্ষে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলেন সাঈদ আজমল, গুল ও আফ্রিদিরা।
প্রথমত পাকিস্তানের জন্য এই ম্যাচটি হয়ে দাঁড়িয়েছিলো বাঁচামরার লড়াই। দ্বিতীয়ত বিশ্বকাপের আগে দুবাইয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ ম্যাচে হারিয়েছে পাকিস্তান। সে জন্যই অসিদের বিপক্ষে এত ভালো খেলেছেন ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়নরা।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের কোচ ডেভ হোয়াটমোর বলেছিলেন, ‘ওয়াটসনও মানুষ। তিনিও ভুল করে আউট হবেন।’ ডেভের পরিকল্পনা অক্ষরে অক্ষরে ফলেছে।
পাকিস্তানের ৩২ রানের জয়ের পেছনে তার বোলারদের অবদান সবচেয়ে বেশি। আজমল চার ওভারে ১৭ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়েছেন। প্রয়োজনের সময় ব্রেক থ্রুও দিয়েছেন। রাজা হাসান চার ওভারে ১৪ রান দিয়ে নিয়েছেন দুটি উইকেট। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। আর অধিনায়ক হাফিজ ২২ রানে ফিরিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যাটসম্যানকে।
হাফিজ বোলারদের প্রশংসায় করে বলেন, ‘আমাদের টার্গেট ছিলো ১৫০ প্লাস রান করবো। কারণ আমাদের বোলাররা খুব ভালো। এই বোলিংয়ের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে চেজ করা সম্ভব হতো না। বোলাররা তাদের দায়িত্ব খুব ভালো ভাবে পালন করেছে। আমাদের টার্গেট ছিলো ম্যাচ জেতা। যখন বুঝতে পারলাম জিততে যাচ্ছি তখন বেশি রানে জেতার চেষ্টা করেছি। আলহামদুল্লিাহ বেশি রানেই জিততে পেরেছি।’