টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুক্রবার শুরু হচ্ছে তাবলীগ জামায়াতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আজ বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব এর আমবয়ান শুরু হয়েছে। তবে শুক্রবার বাদ জুমা আনুষ্ঠানিকভাবে মুসলমানদের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসমাবেশ শুরু হবে|
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন তালুকদার বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে বিশাল ময়দানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দ্বিতীয় বারের মতো দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে শুক্র, শনি ও রোববার। মাঝে চার দিন বিরতি দিয়ে ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি হবে দ্বিতীয় পর্ব।
এ বছর বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখ চল্লিশেক মুসল্লি অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। এরই মধ্যে কয়েকটি দেশ থেকে বেশ কিছু মুসল্লি ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
ইজতেমা উপলক্ষে এরইমধ্যে এলাকার ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। যানজট নিরসনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টঙ্গী রেল স্টেশনে তৈরি করা হচ্ছে অতিরিক্ত টিকেট কাউন্টার। বিশেষ ট্রেনগুলোর জন্য অতিরিক্ত জনবলও আনা হচ্ছে। টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত বেড সংযোজন ও মাঠে অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারি ২২টি এম্বুলেন্স জরুরি রুগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। এছাড়া ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন নিউ মুন্নু মিলের মাঠে অস্থায়ীভাবে প্রায় ৫০টি সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসকেও বিশেষভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আশপাশের ফায়ার স্টেশনগুলোকেও জরুরি প্রয়োজনে সতর্ক করে রাখা হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমা শুরুর আগের দিন থেকে টঙ্গী রেল স্টেশনে নিয়মিত যাত্রী ট্রেন ছাড়াও আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর প্রত্যেকটি টঙ্গী জংশন স্টেশনে থামবে। এছাড়াও মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে টঙ্গী-ঢাকা, টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী হয়ে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিরাজগঞ্জ, ঢাকা-ভৈরবসহ উত্তর বঙ্গের জন্য বিশেষ ট্রেন থাকবে। সড়ক পথে থাকবে ১০০টি বিআরটিসি বাস।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনায় ইজতেমা ময়দানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় উত্তরা, টঙ্গী ও টঙ্গী নতুন গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে ৪টি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কোন কারণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিকল হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে বিকল্প ব্যবস্থায় ৫টি ট্রলি ট্রান্সফরমার দিয়ে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
র্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক নিশাদুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে জানান, গত বছরের তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবার আরো জোরদার করা হয়েছে। ময়দান এলাকার মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ময়দানের চতুর্দিকে র্যাবের ৯টি ও পুলিশের জন্য ৫টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। ময়দানের প্রবেশপথগুলোতে ইজতেমা কমিটির নিজস্ব লোক ছাড়াও দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।
মাঠের ভেতরে ও বাইরে পুলিশের টহল রয়েছে। আছেন সাদা পোশাকধারী পুলিশও। র্যাবের হেলিকপ্টার টহলসহ পাঁচ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান ও পার্শ্ববর্তী এলাকা।
ইজতেমা এলাকার খাবার দোকানগুলোর ভেজাল রোধে জেলা প্রশাসন পর্যাপ্ত সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষে ইজতেমা মাঠে ১৪টি নলকূপের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ৪ লাখ গ্যালন হিসেবে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টায় ৮৮ লাখ গ্যালন পানি সরবরাহ করা হবে।
বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম পর্বে ৩২টি জেলার মুসল্লিরা মাঠের ৩৯টি খিত্তায় অবস্থান করবেন।
প্রত্যেকটি খিত্তাকে জেলাওয়ারী ভাগ করা হয়েছে।
প্রথম পর্বে আছে ঢাকা বিভাগের আংশিক-গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, রাজশাহী বিভাগের- নাটোর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, জয়পুর হাট, চট্টগ্রাম বিভাগের- চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, ফেনী, চাঁদপুর, সিলেট বিভাগের- সিলেট, হবিগঞ্জ, খুলনা বিভাগের- বাগেরহাট, যশোর, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা এবং বরিশাল বিভাগের- ঝালকাঠি, ভোলা ও বরগুনা।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৩৮টি খিত্তায় অবস্থান নেবেন- নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা বিভাগের বাকি অংশ- মানিকগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, বরিশাল, ঝিনাইদহ, কুমিল্লা, মেহেরপুর, ময়মনসিংহ, লক্ষ্মীপুর, বি.বাড়িয়া, কুড়িগ্রাম, নোয়াখালী, নিলফামারী, বগুড়া, পাবনা, নওগাঁ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, খুলনা, সুনামগঞ্জসহ বাকি জেলাসগুলোর মুসল্লিরা।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বাণী দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম ইসলামের আদর্শ সমগ্র মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজনে মুসলিম বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এই মহামিলন ইসলামের আদর্শ এবং কোরআন ও সুন্নাহর শিক্ষাকে বিশ্ববাসীর কাছে ছড়িয়ে দিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মুসলিম বিশ্বের শান্তি, ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ব সুদৃঢ়করণে বিশ্ব ইজতেমার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের সুমহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবতার কল্যাণে সবাইকে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বিশ্ব মুসলিমের অন্যতম বৃহৎ সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে আমি দেশবাসী ও বিশ্বের সকল মুসলমানকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে এই বিশ্ব ইজতেমা ইসলামের মর্মবাণী প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
তিনি বলেন, ইজতেমায় আগত বিদেশি মেহমানদের মাধ্যমে আবহমানকাল ধরে আমাদের লালিত অসাম্প্রদায়িক চেতনা, অকৃত্রিম সরলতা ও অতিথিপরায়ণতা এবং সহিষ্ণুতার আলোকবার্তা বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যাবে।
আমি আশা করি, এই মহান ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখবে। দেশ ও বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষ ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে।