‘রফিককে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানরূপে বিএনপির আপত্তি নেই’

‘রফিককে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানরূপে বিএনপির আপত্তি নেই’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানা হলে সেই সরকারের প্রধান হিসেবে ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে মেনে নিতে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হওয়ার বিষয়ে রাজি থাকায় ব্যারিস্টার রফিককে সাধুবাদ জানান মোশাররফ।

রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসকাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবিধানিক অধিকার ফোরাম আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম: দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র হুমকির মুখে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করে এবং ব্যারিস্টার রফিক যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে রাজি আছেন, সেক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তাকে সাধুবাদ জানাই। তবে অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।”

তবে ব্যারিস্টার রফিকের বিষয়ে দু’দলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের প্রতিও জোর দেন মোশাররফ।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো ও পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, খালেদা জিয়া এ সম্পর্কে আগেই বলেছেন। কিন্তু নির্দলীয় সরকারের  এজেন্ডা থাকতে হবে, তাহলেই সংলাপ সফল হতে পারে, নইলে নয়।”

গাজীপুর-৪ আসনে কাপাসিয়া উপ-নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে মোশাররফ বলেন, ‘‘জানি না, দিন শেষে কী রকম ডিজিটাল ফলাফল দেওয়া হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘জনগণ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই কাপাসিয়ায় কেন্দ্রগুলো খা খা করছে, এগুলোতে মানুষ নাই। একটি খালি আসন, তাতে নির্বাচন হচ্ছে, কিন্তু জনগণ তাতে অংশ নিচ্ছে না।’’

তিনি বলেন, “দেশে সুশাসনের সুবাতাস বইছে বলে জাতিসংঘে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দেশে এ যাবৎ যে নির্বাচন হয়েছে সেগুলো লোকাল নির্বাচন। লোকাল নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়।”
এমন নির্বাচনে বিরোধী দল কখনোই অংশ নেবে না বলে জানান দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘে বিশ্বব্যাংকের সংস্কার বিষয়ক বক্তব্যের সমালোচনা করেন মোশাররফ।
তিনি বলেন, “নিজের চারপাশে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে পারছেন না তিনি, আর চলেছেন বিশ্বব্যাংক সংস্কারে।”

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের অসংলগ্ন কথার জন্য জাতি আজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা এর নিন্দা জানাই।”

বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে মোশাররফ বলেন, “শুধু কি ব্যাংক সেক্টরে দুর্নীতি হচ্ছে? কোন খাতে হচ্ছে না? সব খাত থেকে নেতারা সবকিছু ভাগাভাগি করে নিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগ কোথাও হচ্ছে না। ব্যাংকের পরিচালনার দায়িত্ব রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। পরিচালনা পরিষদের বৈশিষ্ট্য ছিলো রাজনৈতিকভাবে তাদের প্রতিষ্ঠিত করা। তাদের কারো যোগ্যতা দেখা হয়নি, ব্যাংক খাতে তাদের অভিজ্ঞতা দেখা হয়নি।”

সোনালী ব্যাংকের অন্যান্য শাখাগুলোতেও তদন্ত করার পরামর্শ দেন মোশাররফ।

তিনি বলেন, “একটি শাখায় এতো লুটপাট, অন্যগুলোতেও আছে কি না দেখা দরকার।”

তিনি আরো বলেন, “সোনালী ব্যাংক নাকি কোনো মামলা করবে না। পরিচালনা পরিষদের প্রসিডিংয়ে দেখা যাবে এর অনুমোদন দিয়েছে আওয়ামী লীগের সদস্যরা।”

তাই মামলা করলে তাদের বিরূদ্ধেই করতে হয় বলে ব্যাংকটি মামলা দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, “একটি শাখাকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়, আর যে পরিমাণ লুটপাট হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া তা সম্ভব নয়। তাদের সরাসরি হস্তক্ষেপ আছে।”

লুটপাটের জন্য এই ব্যাংকটি অনুমোদন দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

মোশাররফ বলেন, “হলমার্ক দুর্নীতি একদিনে হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সম্পর্কে কিছু জানে না- এটাও মানতে রাজি নই আমরা।”

তিনি বলেন, “তানভীরকে এখনো আটক করা হয়নি। উচ্চ মহলের সঙ্গে তার সরাসরি যুক্ততা বলে মুক্ত বাতাসে বুক ফুলিয়ে হাঁটছে।”

মোশাররফ বলেন, “শেয়ার বাজার কেলেংকারির হোতারা সরকারের উচ্চ মহলের। তাই সরকার কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “এর যে টাকা পাচার হয়েছে, তাতে ব্যাংকগুলোর সহায়তা রয়েছে। সরকারের আনুকূল্যে এসব হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংককেও এজন্য দায়ী মনে করি।”

ব্যাংকের প্রতি ‘হোয়াইট পেপার’ প্রকাশেরও দাবি জানান তিনি।

রাজনীতি