খুব আক্ষেপ করছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দু’জন সাংবাদিক, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, এত ভালো দল নিয়েও কোন টুর্নামেন্ট জিততে পারি না। দেখো, আমাদের খেলোয়াড়দের সমস্যা মানসিকতায়। এই সমস্যা নতুনদের মধ্যেও প্রবাহিত হয়েছে। কিছুটা সংক্রমণের মতো!
পাকিস্তানের কাছে শীর্ষ আটে প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বাঁচামরার লড়াই। জিততে পারলে সেমিফাইনালের আশা বেঁচে থাকতো খুব ভালো ভাবে। এখন তাদের শীর্ষ আটের খেলা শেষ করে বিমানে চাপতে হতে পারে। ভারত পাকিস্তান ম্যাচের ওপর তাদের ভাগ্য অনেকাংশে নির্ভর করছে। ভারত জিতলে কিছু সমীকরণের সুবিধা পাবে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত।
পাকিস্তানের বিপক্ষে যতটা লড়াই করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তাও করতে পারেনি। অসি অধিনায়ক জর্জ বেইলি টসে জিতে প্রোটিয়াসদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে ১৪৬ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলে। প্রথম রাউন্ডে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শীর্ষ আটে উন্নীত হয়ে এই দলটি বোধহয় খেলা ভুলেই গেছে। বিশ্বমানের কত খেলোয়াড় তাদের দলে। কিন্তু মাঠের পারফরমেন্স হাতাশাজনক। বাঁচামরার লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাদের সেই পানসে ব্যাটিং।
প্রেমাদাসার উইকেটে পেস বোলারদের জন্য নয়, স্পিনাররা কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন, অল্প টার্নও পাওয়া যায়। সেখানে দুই অসি পেসারকে উইকেট দিয়েছে। রিচার্ড লেভিকে রানের খাতা খুলতে দেননি জ্যাভিয়ার ডোহার্টি। ইনিংসের তৃতীয় বলে মিডল স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন ডোহার্টি। জ্যাক ক্যালিসকে ব্যাটিংয়ে প্রমোশন দিয়ে তিন নম্বরে পাঠিয়েছিলেন অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স। হাশিম আমলার সঙ্গে আট রানের জুটি গড়ে তিনিও ডোহার্টির শিকার। একটু বেশি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ছয় রান তুলে ক্যাচআউট হয়েছেন আইপিএলে কলকাতা নাইটরাইডার্সের অলরাউন্ডার।
হাশিম আমলাকে ১৭ রানে ক্যাচ আউট করলেন শেন ওয়াটসন। জেপি ডুমিনি ২৫ বলে ৩০ রান করে ডোহার্টিকে উইকেট দিয়েছেন। ডি ভিলিয়ার্স ২১ রান নিয়ে ওয়াটসনের শিকার। ষষ্ট উইকেটে ফারহাদ বেহারদিন ও রবিন পিটারসনের ৬০ রানের জুটিতে কিছুটা রক্ষা পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বেহারদিনের ৩০ আর পিটারসনের ৩১ মিলে ২০ ওভার শেষে ১৪৬ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায়।
অসি অধিনায়ক বেইলি বোধহয় খুব ভালো পিচ বোঝেন। শ্রীলঙ্কায় এখনও তার দল আগে ব্যাটিং করেনি। প্রথম রাউন্ড মিলে যে চারটি ম্যাচ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া, টসে জিতেছেন বেইলি এবং ফিল্ডিং নিয়েছেন। সবগুলো ম্যাচই চেজ করে জিতেছে দলটি।
শেন ওয়াটসন দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তিশালী বোলিংয়ের বিপরীতেও ব্যাটিং তান্ডব চালিয়েছেন। ৪৭ বলে আট চার ও দুই ছয়ে করেছেন ৭০ রান। আউট হয়েছেন পিটারসনের স্পিন বল তুলে খেলতে গিয়ে। কুইন্সল্যান্ডের এই ক্রিকেটারের এমন ইনিংসের পরে দক্ষিণ আফ্রিকার ১৪৬ রান ছাড়িয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার জন্য ছিলো সময়ের ব্যাপার। সেখানে মাইক হাসি তিনে নেমে ৪৫ এবং ক্যামেরুন হোয়াইট অপরাজিত ২১ রান করলে ১৭.৪ ওভারে ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
এই বিশ্বকাপে ওয়াটসনের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার আলাদা করে তুলে রাখা আছে। তিনি খেললেই ম্যাচ সেরা। ব্যাটিং এবং বোলিংয়ে অসাধারণ পারফরমেন্স দিয়ে চার ম্যাচের সেরা হলেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখনও কোন ক্রিকেটার টানা চার ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হতে পারেননি। বিশ্বকাপে তো প্রশ্নই আসে না। এই কৃতিত্ব কেবল ওয়াটসনের।
ওয়ানডেতে সৌরভ গাঙ্গুলী টানা চার ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন ১৯৯৭ সালে সারজা কাপে। ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ফর্মেটের সঙ্গে সে রেকর্ড যায় না।
৩১ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ৩৪টি টোয়েন্টি টোয়েন্টি খেলে ৯৬৫ রান করে ফেলেছেন। এই রাউন্ডের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪৫ রান করলে এই ফর্মেটে দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে ১০০০ রানে পৌঁছাবেন তিনি।