অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জন্য সরকার নতুন নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা প্রস্তুতও করা হয়েছে।
তবে এ নীতিমালার অস্পষ্টতা ও নানা অসঙ্গতির কারণে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, বিশেষজ্ঞ, স্টেকহোল্ডার এবং সর্বস্তরের পাঠকেরা ব্যাপক সমালোচনা করছেন। নীতিমালাটি অনলাইন গণমাধ্যমবান্ধব নয়, অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রণমূলক ইত্যাদি বলেও উল্লেখ করছেন অনেকে।
ঢাকাসহ সারাদেশে সোচ্চার পাঠক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম কর্মীরা বিভিন্নভাবে এ নীতিমালার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে। আবার অনেকে এটি সংশোধনের দাবি তুলেছেন। বাংলাদেশে নবীণ ও উদীয়মান এ গণমাধ্যমটির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কিছু প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো:
উলফাত জাহান, মাস্টার্স (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
এটা খুবই লজ্জাজনক একটি বিষয় যে, আমাদের দেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য অস্বস্তিকর একটা নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। এই নীতিমালা অনলাইনের সঙ্গে একেবারেই বেমানান। এমন নীতিমালা তৈরির মানে অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া- এ কথা বললেও খুব একটা বেশি বলা হবে না।
আহসান হাবীব, শিক্ষার্থী (বিবিএ)
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা যারা নিয়মিত অনলাইন সংবাদমাধ্যমের পাঠক, তাদের কাছে এই নীতিমালা অনেকটা অশনী সংকেতের মতো। কর্তৃপক্ষ চাইলো আর ইচ্ছেমতো একটা নীতিমালা বসিয়ে দিল! তাহলে বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হানার মতোই হবে। এমন নীতিমালা বাদ দিয়ে একটি সর্বজনীন অনলাইনবান্ধব নীতিমালা না হলে সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রাফা জেরিন
মিরপুর-৬, ঢাকা।
মুক্ত গণমাধ্যমের এই সময়ে অনলাইনের জন্য নতুন এই নীতিমালা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এই নীতিমালা অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর স্বাভাবিক চলার পথে প্রবল প্রতিবন্ধকতা। এমন নীতিমালার দাঁড়ি, কমা মেনে যেকোনো অনলাইনের টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। বিষয়টি সরকারের ভেবে দেখা উচিৎ।
নাসেক রহমান
ডিরেক্টর, প্রিমোরডিয়াল লিমিটেড, ঢাকা
অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর ওপর সরকারের কোনো ক্ষোভ আছে বলে আমার মনে হচ্ছে। না হলে এ ধরনের দ্বৈত নীতিমালা তৈরির কোনো চিন্তা তারা করতেন না। আমরা জানি, ওষুধ শিল্প নিয়ে নীতিমালা আছে। কিন্তু হোমিওপ্যাথি ও এলোপ্যাথি নিয়ে ভিন্ন কোনো নীতিমালা নেই। অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোর জন্যে তবে কেন ভিন্ন নীতিমালা হবে? এই বিষয়টি পাঠক হিসেবে গ্রহণ করতে কষ্ট হচ্ছে।
নাইম হিলফুল
বিজয় সরণী, ঢাকা
মুক্ত ও অবাধ তথ্য প্রবাহের এই সময়ে অনলাইন নিয়ে নতুন করে নীতিমালা আমাদের শংকিত করছে। কাগুজে সংবাদ মাধ্যমের চেয়ে অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলো স্বল্প সময়ে অধিক মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পেরেছে। এমতাবস্থায়, এই মাধ্যম নিয়ে নতুন এমন নীতিমালা অনলাইন মাধ্যমের পথ চলায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সরকারের উচিৎ এই অনলাইন মাধ্যমের পথ চলায় সহায়ক নীতিমালা তৈরি করা। তবেই সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
শহিদুল ইসলাম কবির
ব্যবসায়ী, পুরানা পল্টন, ঢাকা
সরকার একদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছে, অন্যদিকে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের মতো দ্বিমুখী সিদ্ধান্ত নেবে- এটি হাস্যকর। সরকার বাংলাদেশি অনলাইন পত্রিকাগুলোর বিরুদ্ধে এমন নীতিমালা করে হয়তো পত্রিকাগুলোর পথচলা বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু বিদেশী গণমাধ্যমগুলোকে তো কোনভাবেই ঠেকাতে পারবে না। মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। তথ্যকে কোনভাবেই আটকানো যাবে না। সুতরাং অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য সহনশীল নীতিমালা প্রয়োজন বলে মনে করছি।
খালিদ সাইফুল্লাহ
ফ্রিল্যান্স সংবাদকর্মী, ঢাকা
অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য একটি নীতিমালার প্রয়োজন অনেকদিন ধরেই বোধ করছিলাম। কিন্তু খসড়া নীতিমালায় যে শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা মোটেও কাম্য নয়। এমনটি কখনো আশা করিনি। এমন নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে প্রযুক্তিনির্ভর মানুষেরা হতাশ হবেন। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, কাগুজে পত্রিকাগুলোও তাদের অনলাইন ভার্সনের প্রতি ক্রমশ জোর দিচ্ছে। এর থেকে সহজেই বুঝা যায়, দিন দিন মানুষ অনলাইনের প্রতি ঝুঁকছে। এমন সময়ে অনলাইন বিরোধী এই নীতিমালাকে অনলাইনবান্ধব করে প্রণয়ন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রেহানা পারভিন রিতা
এনজিও কর্মী, বনানী, ঢাকা
বাড়ি আর অফিসের কাজে পত্রিকা পড়ার সময় পাই না। তবে অফিসে যাওয়া-আসার পথে মোবাইলের ইন্টারনেটে অনলাইন পত্রিকা পড়ে প্রতিদিনের ঘটনাগুলো সম্পর্কে জানতে পারি। সম্প্রতি সরকার অনলাইন পত্রিকাগুলো নিয়ে যে নীতিমালা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা আমার কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। কারণ, এই নীতিমালা অনুসরণ করে টিকে থাকা বেশিরভাগ অনলাইনগুলোর পক্ষেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। একদিকে পত্রিকা টিকিয়ে রাখা, আবার অন্যদিকে বছর বছর সরকারকে টাকা দেওয়া, সব মিলিয়ে অনলাইন পত্রিকাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকায় পড়ে যাচ্ছি। এখনই এই নীতিমালা সংশোধন করা উচিৎ বলে মনে করছি।
হাসনাইন আর মুরসালিন
বেসরকারি চাকরিজীবী, মতিঝিল, ঢাকা
সরকার বিভিন্ন সময়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে সহায়তা করে আসছে। আমারতো ধারণা ছিল, মানুষকে প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোতেও নিয়মিত অনুদান দেওয়া হবে। কিন্তু এখন দেখি উল্টো কাণ্ড! অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর কাছ থেকেই মোটা অংকের টাকা আদায়ের নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। একটা অনলাইন সংবাদপত্র পরিচালনা করার জন্য কেনো এতো টাকা সরকারকে দিতে হবে? বিষয়টি আমার কাছে খুবই অস্পষ্ট। নীতিমালা অবশ্যই প্রয়োজন। তবে পরিবর্তন ও সংশোধন করে এমন একটি নীতিমালা তৈরি করা উচিৎ, যাতে করে অনলাইন পত্রিকাগুলো স্বচ্ছন্দে এগিয়ে যেতে পারে।