পৃথিবীর যে প্রান্তেই ভারত পাকিস্তানের খেলা হোক তার আবেদন থাকবেই। এই ম্যাচের প্রভাব শুধু ভারত এবং পাকিস্তানের দর্শকদের ওপরই পড়ে না, দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের দর্শকরা বিভক্ত হয়ে যান ভারত-পাকিস্তানের নামে।
শ্রীলঙ্কাতে পাকিস্তানের একটা বিরাট সংখ্যক সমর্থক আছে। পাকিস্তানকে সমর্থন দেওয়ার জন্য গাটের পয়সা খরচ করে তারা মাঠে আসে। ভারতের সমর্থক সে তুলনায় কম। বাংলাদেশে দুই দেশেরই প্রায় সমান সংখ্যক সমর্থক পাওয়া যাবে। ভারত পাকিস্তানের খেলা দেখার জন্য তারাও উন্মুখ হয়ে থাকেন। শ্রীলঙ্কার পাশের দেশ মালদ্বীপে ভারতের সমর্থক পাওয়া কঠিন। নেপালে কিছু ভারতীয় সমর্থক আছে। খোদ ভারতেও পাকিস্তানের সমর্থক কম নেই। প্রকাশ্যে সমর্থন না দিলেও তারা পাকিস্তানের জয়ে খুশি হন।
এশিয়ার দিকে তাকালে পাকিস্তানের সমর্থক অনেক বেশি। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় অভিবাসিরাও খেলার দিন ভারত পাকিস্তানের নামে বিভাজন হয়ে পড়েন।
এই দিকটি ভারত পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের জানা। তারা সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট যুদ্ধ মাঠ থেকে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এমন খেলায় খুব চাপ থাকে। ভালো খেলতে হবে এবং জিততে হবে, বাজে ভাবে হারলে রক্ষা নেই। প্রতিশ্রুতি এবং দেশ প্রেম নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সমালোচনার তীরে ছুঁড়বেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। ভারতের ক্রিকেটারদের জন্য বিষয়টি যন্ত্রণার পর্যায় চলে যায়। তাদের বাড়ি ঘরে পর্যন্ত হামলা হয়। অতএব বলতে পারেন ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলা কার্গিল যুদ্ধের চেয়েও আলোরণ সৃষ্টি করে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখনপর্যন্ত পাকিস্তান যে তিনটি ম্যাচ খেলেছে তাতে তাদের দর্শকের অভাব হয়নি। শহীদ আফ্রিদি, শোয়েব মালিক এবং মোহাম্মদ হাফিজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার পরে বলেছেন, তদের কাছে মনে হয়েছে তারা দেশে খেলছেন। শ্রীলঙ্কায় পাকিস্তান সমর্থকদের ধন্যবাদও দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার দিন পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে পাকিস্তান সমর্থকে ভরে গিয়েছিলো। শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলায় প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকের ৮০ ভাগ ছিলো পাকিস্তানের সমর্থক।
ভারতের বেলায় উল্টো, শ্রীলঙ্কায় তাদের সমর্থক নেই বললেই চলে। সাংবাদিক থেকে শুরু করে আমজনতা কেন যেন ভারতকে পছন্দ করে না। ভারতকে হারতে দেখলে তারা খুশি হয়। তবে ভারতের বিশাল সাংবাদিক দল এবং দেশ থেকে আসা দর্শকরাই তাদের সমর্থনের জন্য যথেষ্ট।
রোববার শীর্ষ আটে ভারত-পাকিস্তানের এই ম্যাচে দর্শক সমর্থকরাও প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। সেখানে এগিয়ে থাকছে পাকিস্তান। পাকিস্তান আরও একটি দিক থেকে এগিয়ে আছে, তারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে উজ্জীবিত, ভারতের চেয়ে চাপ কম চাপে আছে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যাওয়ায় ভারত কিছুটা চাপে। তাদের জন্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াই। সেমিফাইনালে খেলতে হলে পাকিস্তানকে হারাতে হবে। একদিক থেকে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি ভারতের জন্য নকআউট ম্যাচ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ম্যাচে পাকিস্তান জিতে গেলে এবং অপর খেলায় অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিলে ভারতের সেমিফাইনাল খেলা হবে না। দক্ষিণ আফ্রিকাও তাদের অভিযান শেষ করবে শীর্ষ আটে। দুই ক্রিকেট পারাশক্তি ময়দানী লড়াইয়ে নামার আগে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ফল জেনে নিতে পারবে।
খেলায় চাপ নিয়ে ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি যেমন বললেন, ‘শীর্ষ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলায় সব সময় চাপের। প্রত্যাশা অনেক থাকে। দেশের মানুষ চায় আমরা জিতি। খেলায় তার প্রভাব কিছুটা থাকে। কিন্তু আমরা ওসব কিছু মনে করছি না। আমরা খেলা উপভোগ করতে চাই। ফলাফল যা হওয়ার হবে তা নিয়ে বেশি ভাবতে চাই না।’
পাকিস্তানের ওমর গুল বলেছেন, ভারত পাকিস্তান ম্যাচে প্রত্যাশা বেশি থাকে এবং তা চাপ হিসেবে কাজ করে, ‘এই ম্যাচকে ঘিরে দুই দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। তারা চায় তাদের দল জিতুক। পাকিস্তানের মানুষের জন্য আমরা খেলায় জিততে চাই।’
নাসির জামশেদ অবশ্য খেলার বাইরে কিছু ভাবতে চান না, ‘দর্শকদের কাছে এটা অনেক বড় কিছু। দেশ এবং যুদ্ধের বিয়ষ হতে পারে। কিন্তু আমাদের কাছে ভারত-পাকিস্তান আরেকটি ম্যাচ মাত্র। এর বেশি কিছু না।’