হলমার্ক জালিয়াতির বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, অর্থ কেলেঙ্কারির জন্য সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুক্রবার বিকেলে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও সিলেট জেলা প্রশাসন আয়োজিত দু’দিনব্যাপী তথ্যমেলার
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় ‘হলমার্ক সম্পর্কিত আমার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে“ দাবি তুলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এটি বেশি প্রচারিত হলে বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগে এর প্রভাব পড়বে। এই জালিয়াতি একটি ব্যাংকের জন্য বড় ঘটনা সত্যিই, তবে পুরো অর্থনীতির জন্য তেমন বড় ঘটনা নয়- এমন বক্তব্য ছিলো আমার। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমার বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে।”
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, “তথ্য প্রযুক্তি দেশের দুর্নীতি অনেকটা প্রতিরোধ করেছে। তথ্যের আদান প্রদান মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে এবং সবাইকে সচেতন করে তোলে। সর্বক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেছে।”
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী তথ্য অধিকার আইনকে ‘শাখের করাত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “এর মাধ্যমে যে কোন প্রতিষ্ঠানের দোষ-গুণ, সফলতা-ব্যর্থতা সবকিছু পরিষ্কার করে দেয়। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, দুর্নীতি থাকবে না- এটাই তথ্য অধিকার আইনের মূল লক্ষ্য।”
এ আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের অন্যতম কর্তব্য বলেও জানান তিনি।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “সংবাদকর্মীদের সহজ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহে তথ্য অধিকার আইন সহায়ক ভূমিকা রাখছে।”
তবে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্বার্থে কিছু কিছু সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সংবাদকর্মীদের আরো সংযমী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বর্তমান প্রেস কাউন্সিলের কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “এ প্রতিষ্ঠানটিও এখন অনেক বুড়ো হয়ে গেছে। এর কোন কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।”
এসব নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
তিনি টিআইবি’র কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বলেন, “সংস্কার কার্যক্রমে সরকার টিআইবি’র সহযোগিতা পেয়ে থাকে। তবে যে কোন আলোচনা-সমালোচনার ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য থাকা উচিত, সরকারকে ধ্বংস করা নয়। বরং গঠনমুলক সমালোচনার মাধ্যমে সৎপথ দেখানো।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি, সিলেটের জেলা প্রশাসক খান মোহাম্মদ বিলাল, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারনেশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর মহাপরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মিজানুর রহমান। ফিতা কেটে মেলা উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী। পরে মন্ত্রী মেলার স্টল পরিদর্শন করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সরকারি ও বেসরকারি মোট ২০টি স্টল নিয়ে মেলা যাত্রা শুরু করে।
বিকেলে কিনব্রিজের মুখ থেকে একটি শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, মেলায় সেবাদানকারী বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর তথ্য সেবার নানা দিক নিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবে। তথ্য অধিকার সচেতনতায়ও একাধিক প্রদর্শনী স্টল রয়েছে।
উদ্বোধনী দিন শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত মেলা চলে। শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ মেলা শেষ হবে।
মেলার আয়োজকদের পক্ষে সচেতন নাগরিক কমিটি সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী জানান, তথ্য জানার অধিকারকে সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় নিয়ে যেতে এবারই প্রথম বড় পরিসরে একটি উন্মুক্ত স্থানকে মেলার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। সুরমা নদীতীরে কিনব্রিজ এলাকায় নগরের অন্যতম একটি জনারণ্য স্থান হওয়ায় তথ্য জানার অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধিতে দুই দিনের উন্মুক্ত মেলা বড় একটি ভূমিকা রাখবে।