নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপের ফলাফল নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন দেশের রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনরা। তাদের আশঙ্কা, রাষ্ট্রপতি নিজ উদ্যোগে কিছু না করলে এ সংলাপের ফলাফল হবে শূন্য। আর এতে দু’দলের বিপরীতমুখী অবস্থান যেমন আরো দৃঢ় হবে, তেমনি চরম রূপ নেবে রাজনৈতিক সংঘাত। ফলে দেশ ও গণতন্ত্র মারাত্মক সংকটের সম্মুখীন হবে।
বস্তুত সংলাপে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক সংগঠনই তত্ত্বাবধায়কের অধীনে জাতীয় নির্বাচন চেয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে। কিন্তু সরকারি দল এ দাবি অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ বিএনপির সঙ্গে সংলাপে রাষ্ট্রপতিও জানিয়ে দিয়েছেন, সংবিধানে বাধা তিনি। কিছুই করার নেই তার। এ পরিস্থিতিতে সরকার ও বিরোধী দলের যার যার মতে অনঢ় অবস্থান রাষ্ট্রপতির সংলাপকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করবে বলেই মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির সংলাপ থেকে ফিরে সাংবাদিকদের জানায়, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম নিরপেক্ষ নিবার্চন কমিশন গঠনের আহবান জানিয়েছে তারা। এর আগে ১১ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপির নির্বাচন দাবি অযৌক্তিক। একই দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ তোলেন, ‘সংলাপে এজেন্ডা বহির্ভূত আলোচনা তুলেছে বিএনপি।’ অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল ১১ জানুয়ারি বুধবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপ শেষে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সংলাপ ফলপ্রসু হবে না জেনেও গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে রাষ্ট্রপতির সংলাপে আমরা গিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসি পুনর্গঠন নিয়ে আমাদের কোন কথা হয়নি। আমাদের নেত্রী দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার স্বার্থে রাষ্ট্রপতিকে ইসি পুনর্গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের বিষয়টি নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন।’ এদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকি বাংলনিউজকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ ভাল। তিনি দেশের স্বাথেই ইসি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু সবাই চাচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল। সব দলেরই দাবি, আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হোক। এটা এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই রাষ্ট্রপতি নিজ উদ্যোগে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করলে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি সবার মতামত নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভোটের ব্যবস্থা করতে পারেন। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির পাল্লা ভারি হয়, তাহলে সরকারের তা মেনে নেওয়া উচিৎ। তবে কোন কারণে যদি এ সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে রাষ্ট্রপতির সংলাপের ফলাফল শুধু শূন্যই হবে না, দেশে সংঘাত আরো বাড়বে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি কি করবেন তা আমি বলতে পারবো না, তবে রাষ্ট্রপতি দেশের স্বার্থে দু’টি কাজ করতে পারেন। এর একটি হলো- তিনি প্রকাশ্যে কিছু না বলে প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দিতে পারেন, অন্যটি হলো- প্রকাশ্যেও প্রধানমন্ত্রীকে অ্যাডভাইস করতে পারেন। তবে তিনি (রাষ্ট্রপতি) কোনটা করবেন, না কি আদৌ কিছু বলবেন না, তা তার (রাষ্ট্রপতির) ব্যাপার। কারণ, আমি বলতে পাবো না রাষ্টপতি কি করবেন। আমি জ্যেতিষি নই। রাষ্ট্রপতি নিজের উদ্যোগে যদি কোন সিদ্ধান্ত নেন তাহলে দেশের জন্য সেটা ভালো হবে। স্থিতিশীলতাও ফিরে আসবে।’ বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত যুগ্ম-মহাসচিব মো. আশরাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সংলাপে কিছু হবে তা আমি মনে করি না। কারণ, ক্ষমতালোভীরা সবসমই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যা দরকার তাই করবে। তা না হলে এই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য কি না করছিল! সেই আওয়ামী লীগ এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে। আর বিএনপি তখন ছিলো তত্ত্বাবধায়কের বিরোধী তারা এখন জীবন দিতে চাচ্ছে।’ রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারপরও রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিলে রাজনৈতিক সমস্যা থেকে দেশ বাঁচাতে পারেন। কারণ, তিনি একজন প্রবীন রাজনীতিক ও দেশের রাজনৈতিক অংগনের মুরব্বী, তার প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আছে। তবে তিনি কিছু করতে চাইলে তাকে ব্যক্তিগতভাবেই উদ্যোগ নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ ব্যর্থ হলে দেশে আরো সংঘাত বৃদ্ধি পাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে গণতন্ত্র। এ কারণেই রাষ্ট্রপতির সংলাপ নিয়ে আমি শঙ্কিত। Source: Banglanews24.com |
||