দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলকে (বিএসআরএম) ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের মস্তাননগরে বিস্তীর্ণ এলাকার পাহাড় ও সবুজ বনানী কেটে ধ্বংস করার অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে এ জরিমানা গুনতে হচ্ছে।
বুধবার বিএসআরএমের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগের ওপর শুনানি শেষে তাদের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ জরিমানা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পাহাড় কাটার পাশাপাশি বিএসআরএমের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে প্রতারণারও অভিযোগ উঠেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক জাফর আলম বলেন, “মিরসরাইয়ে প্রায় ছয় একর পাহাড়ি জায়গার অধিকাংশই কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু অংশ বিএসআরএম কেটেছে বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। এজন্য তাদের অবিলম্বে ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার আদেশ দিয়েছি।”
একইসঙ্গে বিএসআরএমকে কেটে ফেলা পাহাড়কে আবারও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাইয়ের দুর্গাপুর ইউনিয়নের মস্তাননগর এলাকায় প্রায় ৫৬ একর পাহাড়ি ও সমতল জমিতে স্টিল মিল এবং একটি বিদ্যুতকেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে বিএসআরএম।
এর মধ্যে ২০০৯ সালে ৫০ একর জমিতে এসব কারখানা স্থাপনের জন্য মাটি ভরাটসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য ২০০৯ সালের ৪ জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অবস্থানগত ছাড়পত্র নেয় তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবেশ অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া অবস্থানগত ছাড়পত্রে পাহাড়ের আকৃতি ঠিক রেখে শিল্প স্থাপনের কথা বলা হয়। কিন্তু অবস্থানগত ছাড়পত্র নেওয়ার পর বিএসআরএম শর্ত লঙ্ঘন করে প্রস্তাবিত জায়গায় টিলা ও পাহাড় কেটে পুরো সমতল ভূমিতে পরিণত করেছে।
বিএসআরএমের প্রস্তাবিত ৫০ একর জায়গার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল টিলা ও পাহাড়ী এলাকা। এসব এলাকা সমতল ভূমিতে পরিণত করার পাশাপাশি বিস্তির্ণ এলাকায় সবুজ গাছগাছালিও ধবংস করা হয়েছে।
এরপর ২০১১ সালে আরো ছয় একর আয়তনের একটি পাহাড় কেনে বিএসআরএম। কিন্তু ওই পাহাড়ে শিল্পস্থাপনের জন্য কোনো অনুমতি পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছ থেকে নেয়নি।
কিন্তু বুধবার বিএসআরএমের কর্মকর্তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের শুনানিতে এসে আগের অবস্থানগত ছাড়পত্রে ৫৬ একর জমিতে শিল্প স্থাপনের অনুমোদনের বিষয়টি উল্লেখ করলে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কাগজপত্র যাচাইবাছাই করে বিএসআরএমের প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হন। তারা দেখতে পান, ৫০ একর জমির বিষয়ে বিএসআরএম অবস্থানগত ছাড়পত্র নিলেও বাকি ছয় একর নিয়ে তাদের কাছে কোনো ছাড়পত্রই নেই। এমনকি এ বিষয়ে তারা কোনো আবেদনও করেনি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক জাফর আলম জানান, নতুন ছয় একর পাহাড়ের কিছু অংশের মাটি আগের মালিক ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেইন মহাসড়কের জন্য কেটে বিক্রি করেছিলেন। এরপর বিএসআরএম কিনে সেটিকে সম্পূর্ণভাবে কেটে ফেলে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে পরিবেশ আইন সংশোধন করা হয় যেখানে পাহাড়ের পাশাপাশি টিলা কর্তন এবং জলাশয় ভরাট করা যাবে না বলে উল্লেখ আছে।
সূত্র জানায়, গত ১ সেপ্টেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বিএসআরএমের প্রস্তাবিত চিটাগং পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের স্থান পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে কর্মকর্তারা স্টিল মিলের প্রস্তাবিত জায়গায় পাহাড় কাটার বিষয়টি দেখতে তাৎক্ষণিকভাবে কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান।
বিএসআরএমের কর্মকর্তারা পাহাড় কাটার বিষয়টি অস্বীকার করলে পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের নোটিশ পাঠান। এরপর বুধবার এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠার পর থেকে বিএসআরএমের কর্মকর্তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ‘চট্টগ্রামে পাহাড় কাটছে বিএসআরএম’ শিরোনমে বাংলানিউজে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।