তেজগাঁওয়ে পলিটেকনিক ছাত্র ও ট্রাক শ্রমিকদের তাণ্ডব: মামলার প্রস্তুতি পুলিশের

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট ও ট্রাক শ্রমিকদের মধ্যে বুধবার রাতে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক রাউণ্ড গোলাগুলিও হয়। টানা কয়েক ঘণ্টা তেজগাঁও ও এর আশপাশের এলাকায় তাণ্ডব চালায় ছাত্র ও শ্রমিকরা।

তবে ছাত্ররা এক সময়ে ক্যাম্পাসে ফিরে গেলেও ট্রাক শ্রমিকরা রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে পুলিশের সামনেই ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

পরিস্থিতি শান্ত হলে রাত সাড়ে ৩টার দিকে তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার ইমাম হাসান বলেন, “যারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করার চেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাতেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে।”

পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের সিভিল বিভাগের ছাত্র আশিকুর রহমান জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাদের দুই ছাত্র বেগুনবাড়ি রাস্তা দিয়ে আসছিল। এ সময় ট্রাক শ্রমিকের লোকজন তাদের ছাত্রকে মারধর করে তাদের কাছ থেকে মোবাইল সেট কেড়ে নেয় এবং আটকে রাখে।

এ খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছুলে পুরো ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আটক ছাত্রদের ছাড়িয়ে নিতে আসে অন্য ছাত্ররা। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও একজনকে মারধর করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি বলেন, “ছাত্ররা আটককৃতদের ছড়িয়ে নিয়ে ক্যাম্পাসে চলে আসে।”

তবে প্রত্যক্ষদর্শী সাতরাস্তা মোড়ের চা দোকানদার আকবর হোসেন বলেন, “ছাত্ররা রাস্তায় নেমে এসে নির্বিচারে ট্রাক ভাঙচুর শুরু করে। ট্রাক শ্রমিকদের এলোপাতাড়ি মারপিট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়। এদেও মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একজনের অবস্থা আশঙ্কা জনক।”

তিনি আরও বলেন, “ছাত্ররা অন্তত ২০/৩০ টি ট্রাক-সিএনজি ভাঙচুর করে। এছাড়া একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। শ্রমিকদের মারপিটের ঘটনা তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে পৌঁছুলে শ্রমিকরাও সংঘবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে এসে তাদের ধাওয়া করে।”

এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজ পাওয়া যায় বলেও দাবি করেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত ১২টার দিকে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ফিরে গেলেও রাস্তা ছাড়ে না শ্রমিকরা। তারা দফায় দফায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশের সামনেই শ্রমিকরা বেগুন বাড়ি সাত রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানগুলো নির্বিচারে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এক সময় শ্রমিকরা গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইনিস্টিটিউটেও হামলা করে। তারা সামনে গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। পরে তারা তালা ভাঙতে না পেরে সাত রাস্তা মোড়ের গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে।

এ সময় তারা সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। উত্তেজিত শ্রমিকরা এ সময় পেট্রোল পাম্পে আগুন ধরিয়ে দিতে গেলে পুলিশ সেখানে বাধা দেয়। পুলিশের বাধা পেয়ে শ্রমিকরা ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের সামনে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা মূল রাস্তায় এসে আগুন লাগায়। এ সময় আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এলে তারা সেখানে বাধা দেয়। এভাবেই থেমে থেমে চলে তাদের তাণ্ডব।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাত ২ টার দিকে শ্রমিকের মৃত্যুর গুজবে আরো বেপোরোয়া হয়ে উঠে শ্রমিকরা। এ সময় রাস্তা দিয়ে একটি প্রাইভেট কার এলে ধাওয়া করে সেটা ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় তারা। সিরামিক ইনিস্টিটিউটের সামনে ফুটওভার ব্রিজ এবং রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয়।

সেখান থেকে তারা সাতরাস্তা মোড়ে এলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এভাবেই থেমে থেমে রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত শ্রমিকরা বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। রাত সাড়ে ৩টার পর শ্রমিক নেতারা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের শান্ত করে ট্রাক স্ট্যান্ডে ফিরিয়ে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং ওই রুটে যানচলাচল শুরু হয়।”

শ্রমিক নেতা হারুনুর রশিদ বলেন, “তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি জাকিরকে সভাপতি করার পর থেকে পলিটেকনিকের ছাত্ররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি ও শ্রমিকদের মারধর করে আসছে।”

সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন শ্রমিককে ছাত্ররা ধরে নিয়ে নির্যাতনসহ গুম করেছে অভিযোগ করে তিনি জাকিরসহ হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।

এদিকে রাত ১২ টা পর্যন্ত পুলিশ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকাগুলিসহ অ্যাকশনে গেলেও এরপর পুরো সময় জুড়েই নিরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল। পুলিশের সামনেই শ্রমিকরা নির্বিচারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করলেও পুলিশ কোন প্রকার বাধা দেয়নি।

তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার হাসান ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সব সময় শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। সে অনুযায়ী, পরিস্থিতি আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিও।”

তিনি বলেন, “ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাতেই মামলা দায়েরের প্রস্তুতি শুরু হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।”

তিনি বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস এবং ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে পুলিশ।”

তবে শ্রমিকদের গুমের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি দেখছি।”

বাংলাদেশ