ভারতীয় সিনেমায় এর আগে বহু দেশাত্মবোধক ছবি হয়েছে। পরিচালক বেদব্রত পাইনের ‘চিটাগং’ও থাকবে সেই তালিকায়। তবে এই ছবির মাধ্যমে ভারতীয় সিনেমায় এক নতুন প্রাপ্তি ঘটবে।
পরাধীন ভারতবর্ষে ইংরেজ সরকারের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া বিপ্লবীদের সারা জীবনের জন্য নির্বাসিত করা হত আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সেলুলার জেলে। যাকে ভারতীয়রা ‘কালাপানি’ বলেই জানে। চারদিকে সমুদ্র, পালাবার পথ নেই। সেই সেলুলার জেলের দুর্গম কারাগারে কোন পরিচালকই এর আগে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি পাননি। সেই অনুমতি এই প্রথম মিলল পরিচালক বেদব্রতর।
তাঁর ছবি ‘চিটাগং’-এর একটি বিশেষ দৃশ্যের শুটিং হয়েছে এই জেলে। ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার এমন ঘটল। এক সময় ‘কালাপানি’ শব্দটা ভারতবর্ষের মানুষের কাছে হাড় কাঁপনো অনুভূতির নামান্তর ছিল মাত্র। এই কারাগারটিতে এক সময় আটকে রাখা হয়েছিল দিওয়ান সিং কালেপানি, যোগেন্দ্র শুক্লা, বটুকেশ্বর দত্ত,বাবারাও সাভারকর,বিনায়ক দামোদর সাভারকারদের মত ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীকে ইংরেজের নৃশংস অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে এই জেলে। কালাপানির বুকে লুকিয়ে রয়েছে ইংরেজদের ভারতীয়দের প্রতি চরম অবিচারের সেইসব অন্ধকার দিন। বহু বিপ্লবী পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন ব্রিটিশদের হাতে।
১৮৯৬ সালে ব্রিটিশরা এই জেল বানাতে শুরু করেন যা শেষ হয় দশ বছর পর। পুরো কারাগারে মোট ৬৯৩টি গারদ তৈরি করতে ব্যবহৃত প্রতিটা ইট আনা হয়েছিল খোদ বার্মা মুলুক থেকে। এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল প্রতিটা গারদ যাতে একজন বন্দির সঙ্গে আর এক বন্দির কোন যোগাযোগ না থাকে। এককথায় এটি ছিল নির্বাসনের নামান্তর। বর্তমানে এই সেলুলার জেল ভারতের অন্যতম দর্শনীয় স্থান, যেখানে প্রথমবার ঢোকার সুযোগ পেল কোন ‘লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন’ টিম। এই জেলের কম্পাউন্ডে এবং বাইরে বিভিন্ন ছবির শুটিং হলেও একেবারে সেলের ভেতরে কাজ করার অনুমতি মেলেনি কারুর।
১৮ বছর নাসায় সিনিয়র রিসার্চ সায়েন্টিস্ট হিসাবে কাজ করা বেদব্রত সেই সুযোগ পেয়ে গেলেন। ক্যামেরা ও চারজন ক্রু মেম্বারকে নিয়ে মাত্র পনেরো মিনিটের জন্য ছবির একটি বিশেষ দৃশ্যের শুটিং করে এসেছেন পরিচালক বেদব্রত। সব থেকে বড় ব্যাপার যে সেলটিতে শুটিং করা হয়েছে সেটিতে বন্দি ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু।
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ শাসিত ভারতের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবিতে মাস্টারদা সূর্য সেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনোজ বাজপেয়ি। এছাড়াও রয়েছেন ‘কাহানি’-র নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি, ব্যারি জন, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য প্রমুখ।
প্রথমবার এই ঐতিহাসিক স্থানটি দৃশ্যায়িত হতে চলেছে সেলুলয়েডে। স্বাভাবিকভাবেই ছবিটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আরও উত্তেজনা বাড়তে শুরু করল।