ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া প্রথম সম্মানসূচক ডিলিট পাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শান্তি, উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশের বিশেষ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই সম্মানসূচক ডিলিট দিচ্ছে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
১২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে এই ডিগ্রি দেওয়া হবে।
এদিকে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা প্রত্যাশা করছেন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন বাংলায়।
তবে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর অরুণোদয় সাহা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।
এদিকে যে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডিলিট দিচ্ছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়টি দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান সূর্যমণি নগরে।
এই সূর্যমণিনগর ছিলো ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের বৃহৎ ক্যাম্প। এখান থেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।
মুক্তিযোদ্ধারা চলে যাওয়ার পর চারপাশে জঙ্গলে ঘেরা এই ক্যাম্পের জায়গাটি ত্রিপুরা রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে দেয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীরা দীর্ঘ দিন ধরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর জন্য।
এর আগে ২০১০ সালে এই বিশ্ববিল্যায়ের অষ্টম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে শেখ হাসিনার সম্মানসূচক ডিলিট গ্রহণের কথা ছিলো।
শেখ হাসিনা আসবেন বলে ওই বছর ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত অষ্টম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল এসেছিলেন।
কিন্তু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে থাকার কারণে শেখ হাসিনার এই সফর বাতিল হয়।
১১ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগরতলা আসছেন। এই দিনই ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারিও দিল্লি থেকে আগরতলা আসবেন।
হামিদ আনসারি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার হাতে সম্মানসূচক ডিলিট তুলে দেবেন। এসময় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও উপস্থিত থাকবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অরুণোদয় সাহা মঙ্গলবার দুপুরে আরো জানান, শেখ হাসিনাকে ডিলিট প্রদান ও সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত।’
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।
প্রথমেই শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নির্মিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের বিশাল ভাস্কর্যের আবরণ উন্মোচন করবেন।
এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা। এই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুকুলেন্দু পাঠকের তত্ত্বাবধানে ১০ জন ছাত্র-ছাত্রী ৭ মাস কাজ করে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করেন।
মাটি থেকে ভাস্কর্যের উচ্চতা ১৪ ফুট ও রবীন্দ্রনাথের মূল ভাস্কর্যের উচ্চতা ১০ ফুট।
এরপর ভাস্কর্যের পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে নির্মিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম সার্ধশততমবার্ষিকী মুক্তাঙ্গন থিয়েটার উদ্বোধন করবেন।
উদ্বোধন পর্ব শেষ করে শেখ হাসিনা সমাবর্তনের পোশাক পরে র্যালিতে অংশ নেবেন। হামিদ আনসারিও র্যালিতে থাকবেন।
সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মহারাজা বীরবিক্রম শতবাষির্কী ভবনের মিলনায়তনে। এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি ভাষণও দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানসূচক ডিলিট প্রদান সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অরুণোদয় সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘শেখ মুজিবের কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান দিতে পারছি। সব কিছুর মধ্যে একটা আবেগ জড়িত আছে। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে এ রাজ্যের মানুষের নৈকট্য ও বন্ধুত্বের বন্ধন রয়েছে।’
সূর্যমনি নগর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অরুণোদয় সাহা বলেন, ‘এখন যারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এদের অনেকেই এই ক্যাম্পে এসেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘সেই বিশেষ আবেগের জায়গা থেকেই আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের জন্য আগ্রহভরে অপেক্ষা করছি।’