প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সংসদে এসে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যা বলার সংসদে এসে বলুন। আন্দোলনের নামে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার বন্ধ করুন। বোমাবাজি বা অশান্তি সৃষ্টি করলে জনগণ মেনে নেবে না।
মঙ্গলবার বিকেলে ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহবান জানান।
১৯৭২ সালের এই দিনে পাকিস্তানের কারাগারে সাড়ে নয় মাস অন্তরীণ থাকার পর স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ সভায় তিনি আরও বলেন, বেগম জিয়া রাজাকার-আল-বদরদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নিতে এবং দেশের অগ্রগতি ব্যাহত করতে চাইছেন।
সোমবার চট্টগ্রামে খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দুই মেয়াদের শাসনামলে তাদের উন্নয়ন ও সুশাসন দেখেছে। ‘সুতরাং তারা কি ধরনের উন্নয়ন ও সুশাসন তারা উপহার দেবেন, জনগণের তা আর দেখার প্রয়োজন নেই।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য ২০০৭ সালের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারসাজি করার কোন চেষ্টায় বাদ দেয়নি। যা আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবির দিকে চালিত করে।’
বিএনপি কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করতে পারেনি। ‘কিন্তু আমাদের আমলে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সকল নির্বাচন সম্পূর্ণ অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবং জনগণ কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দিতে পেরেছে।
শেখ হাসিনা সোমবার চট্টগ্রামের জনসমাবেশে খালেদা জিয়ার দেয়া বক্তব্যের জবাব দেন এবং তিনি বিএনপি ও দলের নেতৃত্বাধীন জোটের মিথ্যা বক্তব্যে বিভ্রান্ত না হতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
সরকার সব সময় বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে স্বাগত জানায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে আইন-শৃংখলা বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসী কোন কর্মকাণ্ড জনগণ বরদাস্ত করবে না।
তিনি দাবি উত্থাপনের জন্য সংসদে যোগ দিতে বিরোধীদলের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা ১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচনে যোগ দেয়ার যৌথ সিদ্ধান্তের কথা বলতে গিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন আট দলীয় জোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট এরশাদ সরকারের সময়ে ১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচনে যোগ দেয়ার যৌথ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নির্বাচনে যোগ দেয়। অথচ বেগম জিয়া আকস্মিকভাবে নির্বাচন বর্জন করার হুমকি দেয় এবং তারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র করে।
প্রধানমন্ত্রী বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে বর্তমান সরকার সেনাবাহিনী ধ্বংস করতে চেয়েছিল বলে বিএনপি’র করা দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ প্রশমনে যখন সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন, সে সময় বেগম জিয়া লুকিয়ে ছিলেন।
বিদ্রোহীদের নিরাপদে পালিয়ে যেতে সহায়তা করতে তাদের সমর্থনে তার দলের নেতা-কর্মীরা মিছিল করেছিল।
বিএনপি শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়ে বাংলাদেশকে ভারতীয় পণ্যের একটি বাজারে পরিণত করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর বিএনপি দশ বছর ক্ষমতায় ছিল। অথচ তারা এ সময়ে ভারতের সঙ্গে একটি বিরোধেরও মীমাংসা করতে পারেনি। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ভারতের সাথে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি সই করেছে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশ নিশ্চিত করেছে। দীর্ঘ দিনের সীমান্ত সীমানা বিরোধের নিষ্পত্তি করেছে এবং তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বারের উদ্যোগ নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর এমপি, আওয়ামী লীগ কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।