অক্টোবরের মধ্যেই পদ্মাসেতুর টেন্ডার আহ্বান এবং এপ্রিল-মে মাসে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চায় সরকার।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। বিশ্বব্যাংকসহ অন্য দাতা সংস্থাগুলোর কাছে সরকারের এই কর্মপরিকল্পনার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
‘বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি কবে ঢাকায় আসছেন ও নতুন করে চুক্তি করতে হবে কি না’ এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে আমি এখনো নিশ্চিত নই। তবে জামিলুর রেজা চৌধুরী যে হিসাব দিয়েছেন এতে করে সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে। আর আমার ধারণা ও হিসাব হচ্ছে, সেতু নির্মাণের যে প্রস্তাবে বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে সম্মত হয়েছে, সেটাই হবে।
এছাড়া বিশ্বব্যাংকের কাছে আরো কিছু টেন্ডার ডকুমেন্ট আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, শুনেছি তারা সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।
উল্লেখ্য, পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক ছাড়াও এডিবি, জাইকা ও ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ঋণচুক্তি করেছিল।
গত ২৯ জুন পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ হওয়ায় এই প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে এ জটিলতার জের ধরে অর্থায়নকারী অন্য পক্ষগুলোও আপত্তি তুলতে থাকে।
এর মধ্যে গত ২১ সেপ্টেম্বর জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার ঋণ কার্যকরের সময়সীমা শেষ হয়েছে। অবশ্য জাইকা এর আগে একাধিকবার ঋণ কার্যকর করার সময়সীমা বাড়িয়েছে। তবে সেতুর অর্থায়ন থেকে তারা সরছে না বলে জানিয়েছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ কার্যকর করার সময়সীমাও শেষ হচ্ছে ৩১ সেপ্টেম্বর।
পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন না করার বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, বাংলাদেশ সরকার এ সেতু-প্রকল্পের দুর্নীতিতে অভিযুক্ত উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে ব্যর্থ। বিশ্বব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। আর বিষয়টিতে সরকারের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়।
বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ, সেতু নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে প্রাক-যোগ্যতা যাচাই প্রক্রিয়ায় এবং পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হতে পারে।
এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মাসেতুর অর্থায়ন নিয়ে দুদক তদন্ত কাজ শুরু করে। এ ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কাজ দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। একটি হলো পদ্মাসেতুর কাজে ঠিকাদার নিয়োগ ও অপরটি পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত।
পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তা ছাড়াও এডিবির দেওয়ার কথা ছিল ৬১ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা।
৪০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দেওয়ার কথা জাইকার।
এছাড়া ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) ১৪ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দেওয়া কথা। জনগণের বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯০ কোটি ডলার।
পরে বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমানের পদত্যাগ কিংবা তাকে ছুটিতে পাঠানোসহ চারটি শর্ত পালন করলে তারা পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন করবে। সংস্থাটি গত জুনে এসব শর্ত দেয়।
বাকি তিনটি শর্ত নিয়ে মীমাংসায় পৌঁছানো গেলেও মসিউরের বিষয়টি ঝুলে ছিল। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি অনুযায়ী, গত ১৬ সেপ্টেম্বর অর্থ উপদেষ্টা ছুটিতে যাওয়ার ঘোষণার পরই বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এই ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া যায়।