ফুয়াদ চৌধুরীর ‘চেঞ্জ ইওর নেম ওসামা…’ প্রশংসিত

ফুয়াদ চৌধুরীর ‘চেঞ্জ ইওর নেম ওসামা…’ প্রশংসিত

বিশিষ্ট বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা ফুয়াদ চৌধুরীর ‘চেঞ্জ ইওর নেম ওসামা-হাউ ক্যানেডিয়ান মুসলিমস ওয়্যার মার্জিনালাইজড বাই ৯/১১’ নামের তথ্যচিত্রটি কানাডায় বেশ প্রশংসা কুঁড়িয়েছে।

৯/১১’র সন্ত্রাসী হামলার ১১তম বর্ষপূর্তি সামনে রেখে ৯ সেপ্টেম্বর টরন্টোর ফক্স থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো এই তথ্যচিত্রের প্রর্দশনী। তখন থেকেই এটি হয়ে উঠেছে কানাডা প্রবাসীদেরসহ বিভিন্ন কমিউনিটির অন্যতম আলোচনার বিষয়।

এক দশক আগের সেই সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুরো পৃথিবী জুড়ে যে ‘মুসলমান আতঙ্ক’ দেখা দিয়েছিলো তারই ধারাবাহিকতায় এই সময়ে কেমন আছে কানাডায় অবস্থিত মুসলিম কমিউনিটি তারই আদ্যোপান্ত তুলে এনেছেন ফুয়াদ চৌধুরী তার এই তথ্যচিত্রে।

সময়োপযোগী ছবিটির মূল কেন্দ্রবিন্দু কানাডার টরন্টোর ক্রিসেন্ট টাউন। যেটি এশীয় মুসলিম অধ্যুসিত একটি একটি। এখানকার অভিবাসীদের জীবন-যাপন, পরর্বতী প্রজন্মের বেড়ে ওঠা নিয়ে তাদের স্বপ্ন ও ভাবনা, নতুন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হবার জীবন সংগ্রাম এবং এই সবকিছুকে ৯/১১’র ঘটনা কিভাবে প্রভাবিত করে তা ছাড়াও কেবল ‘মুসলিম’ হওয়ার কারণে তাদেরকে কিভাবে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে সে সবকিছুই উঠে এসেছে এই তথ্যচিত্রে।

তথ্য চিত্রে রয়েছে তরুণ এক দম্পত্তির সাক্ষাৎকার। তাদের মতে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারের মুখে, ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে মুসলমানরাই প্রধান অন্তরায়’ ধরনের মন্তব্যে পরিস্থিতির অবনতি হবার আশঙ্কাকে ছবিটি দেখতে আশা অনেকেই যুক্তিযুক্ত মনে করেন।

৯/১১ পরর্বতী সময়ে মুসলমানরা কি করে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়েন, মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে অস্বস্তি বোধ করেন, এমনকি কেউ কেউ আপ্রাণ চেষ্টায় থাকেন তার ‘মুসলমান’ পরিচয় গোপন করতে অথবা সে যে ৯/১১’র সাথে জড়িত নয় সে ব্যাপারে সচেতনভাবে সবাইকে প্রমাণ দিতে, চলচ্চিত্রে সেসব বিষয় উঠে আসে একজন ধর্মীয় নেতার বক্তব্য থেকে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ম্যাথিউ ক্যালওয়ে তার বক্তব্যে ক্রিসেন্ট টাউন অধ্যুসিত এলাকার বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের প্রশংসা করার পাশাপাশি, অভিবাসী বাবা মায়ের সন্তান হিসেবে নতুন জায়গায় প্রতিষ্ঠা, অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন না হওয়ায় বাবা-মায়ের হতাশা দেখে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্মের উপর যে প্রভাব তার দিকেও আলোকপাত করেন। তার বক্তব্যে অভিবাসী মহলে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসবে, চলচ্চিত্র প্রদর্শণী শেষে এমন বক্তব্য শোনা গেছে অনেকের মুখে।

তথ্যচিত্রে ২০০৬ এ এ্যামোনিয়া ফার্টিলাইজার বহনকারী দুই সন্দেহভাজনকে আটক এবং পরর্বতীতে এই ঘটনায় সম্পৃক্ত সন্দেহে আরও ১৬ জনকে আটক করার ঘটনা কানাডীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর আরেকটি আঘাত হিসেবে দেখানো হয়। মুসলমানদেরকে নিজেদের মধ্যে গুপ্তচর বানানো, সংবাদ মাধ্যমে অতিরঞ্জিত সংবাদ পরিবেশনা সবই উঠে আসে এখানে।

অপরদিকে টরন্টো স্টার এর এডিটরিয়াল রাইটার হারুন সাদেকী উল্লেখ করেন, সারা পৃথিবীতেই সন্ত্রাসী ছড়িয়ে আছে, আজ ওরা মুসলমানের লেবাস ধরে আছে, এর আগে ছিলো হিন্দু তামিল, তার আগে ছিলো ইহুদি। তবে তার মানে এই না যে সব মুললিম বা সব তামিল বা সব ইহুদিই সন্ত্রাসী।

তবে মতভেদের দিকটিও চলচ্চিত্র থেকে বাদ দেননি সফল নির্মাতা ফুয়াদ চৌধুরী। তুরস্ক থেকে সঙ্গীতে প্রতিষ্ঠিত হবার লক্ষ নিয়ে আসা মুসলমান এক যুবকের মুখেই তুলে ধরা হয় নেই ভিন্ন মত।  তার কথায়, মুসলমান হিসেবে কোথাও সে কোনোরকম বাধার মুখে পড়েনি। বরং একজন মিউজিশিয়ান হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলা এখানে তার নিস্কণ্টক মনে হচ্ছে। তুর্কি এই নাগরিক  একজন ‘শ্বেতাঙ্গ মুসলিম”(!)। তবে কি বর্ণও মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীকে প্রভাবিত করে? এমন প্রশ্ন নিয়েও দর্শকদের আলোচনা করতে শোনা যায়।

তথ্যচিত্রে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তি, যেমন সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, কানাডার জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি, আইনজ্ঞ, সাধারন মানুষদের সাক্ষাৎকার অর্ন্তভুক্ত করার ফলে এই সংকটকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া গেছে। যা সত্যিকারভাবে সংকট উত্তরনের প্রক্রিয়াকে নতুন আলোর পথ দেখাবে।
৪৮ মিনিটের এই তথ্যচিত্রের প্রর্দশনীর পর পরিচালক ফুয়াদ চৌধুরীসহ অন্যরা প্রশ্নোত্তর পর্বেও অংশ নেন। তথ্যচিত্রের স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছেন বিল গিলেসপি। এবছরের জুনে তথ্যচিত্রটি মন্ট্রিয়লে প্রথম প্রর্দশিত হয়।

বিনোদন