রাঙামাটিতে রোববার নতুন করে আর কোনো সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
১৪৪ ধারার পাশাপাশি হরতালের রেশ থাকায় কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কেউ তেমন একটা ঘরের বাইরে যাননি।
এদিকে, রোববার সারাদিন নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন সতর্ক অবস্থায় ছিল।
অপরদিকে, নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রোববার সমাবেশের আয়োজন করলে স্থানীয় প্রশাসন দুপুর ১২ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে।
এদিকে আবার শনিবার সংঘর্ষের সময় ইউপি চেয়ারম্যানদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে ৩ পার্বত্য জেলার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানরা রোববার থেকে ১০ দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন।
কর্মবিরতি পালনকালে সব ইউপি কার্যালয় বন্ধ এবং নাগরিকত্ব সনদ দেওয়া বন্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি অরুণ কান্তি চাকমা কর্মবিরতির বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শনিবার রাঙামাটি সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুশোভন চাকমার ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে রাঙামাটি জেলায় অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) রাঙামাটি জেলা শাখা।
সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি সাবেক সিভিল সার্জন উদয় শংকর চাকমা এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, কর্মবিরতি চলাকালীন সংগঠনের সবাই কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সীমিত আকারে চিকিৎসা কার্যক্রম চলবে।
এসময় তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুশোভন চাকমার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় ভার সরকারকে বহন করার দাবি জানান। ডা. সুশোভন বর্তমানে চট্টগ্রামের সার্জিস্কোপ ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন।
এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সন্তু লারমা সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি কলেজ শাখার সভাপতি রনো চাকমা অভিযোগ করে বলেন, ‘রাঙামাটিতে এখনও কিছু উচ্ছৃঙ্খল বাঙালি যুবক পাহাড়িদের ওপর হামলা করছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘রোববার সকালে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে আহত স্বজনদের দেখতে গিয়ে এক সাধারণ পাহাড়িকে মারধর করে স্থানীয় কিছু উচ্ছৃঙ্খল বাঙালি যুবক।’
শনিবারের ঘটনার জন্য রনো চাকমা ‘সুবিধাবাদী একটি মহল’-কে দায়ী করে বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেওয়ার জন্যই তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
তবে সংঘর্ষের ঘটনায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এখনও কোনো কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানান তিনি।
অপরদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন সংঘর্ষকে ‘অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক’ আখ্যায়িত করে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
সংগঠন থেকে বলা হয়, বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠনের নামে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজবের কারণে সংঘর্ষ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
এদিকে, শনিবার বিকেলে রাঙামাটি সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদের এক জরুরি সভায় শিক্ষকদের ওপর হামলা, শ্রেণীকক্ষ ও অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে ভাঙচুরের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে উপাধ্যক্ষ মফিজ আহম্মেদকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটিও করা হয় বলে জানান কলেজ অধ্যক্ষ বাঞ্ছিতা চাকমা।
এবিষয়ে রোববার পুলিশ সুপার মাসুদ-উল হাসান জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামাল জানান, পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সতর্কতার জন্য এখনও ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে।
ডা. সুশোভন চাকমার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার জেলা প্রশাসন বহন করবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল।
সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার বিকেলে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেনাবাহিনীর জিওসি মেজর জেনারেল শাব্বির আহম্মেদ, জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার মাসুদ উল হাসান, বিজিবি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সমন্বয়ে জরুরি আইন-শৃঙ্খলা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রাঙামাটি সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে যে কোনো মূল্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক থেকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, এমপি।
শনিবারের হামলা, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে, পার্বত্য জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন, গণপরিষদ, পাবর্ত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ।