নাকৌলা বাসেলি নাকৌলা নামের অখ্যাত এক মিশরীয় বংশোদ্ভূত কপটিক খ্রিস্টান মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) কে অতি মাত্রায় কটাক্ষ ও ব্যঙ্গ করে ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামের তথাকথিত মানহীন কুৎসিত যে চলচ্চিত্র নির্মাণ (!) করেছেন, তা নিয়ে সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে।
এরই মধ্যে এ ঘটনায় দুঃখজনকভাবে লিবিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিহত হয়েছেন, অনেক দেশে মুসলমান ও নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে।
আসুন দেখা যাক কে এই বাসেলি। বয়স তার পঞ্চান্নর কাছাকাছি। লন্ডনের বিখ্যাত ডেইলি মেট্রো জানিয়েছে, এই বাসেলি মূলত কপটিক খ্রিস্টান, মিশরীয় বংশোদ্ভূত।
এর আগে ২০১০ সালে ব্যাংক জালিয়াতির কারণে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে তার ২১ মাসের জেল হয়েছিল। এই রকম এক ভয়ংকর প্রতারক মুসলিম ধর্মের ওপর আঘাত করে এমন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সাহস পেল কোথায় সেটাই এখন ভাবার বিষয়।
বাসেলির শিক্ষাগত যোগ্যতার খবর কেউ দিতে পারেনি।
পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত অভিশপ্ত দুষ্টু লোকেরাই বাসেলির মতো এক প্রতারককে টাকা-পয়সা দিয়ে এমন কাজ যে করিয়ে নিয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা বাসেলির ওই চলচ্চিত্রের (!) প্রধান অভিনেত্রী সিনডি লি গার্সিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাসেলি তাদের পুরো ইউনিটকেই প্রতারিত করেছে। কারণ ইউনিটের সবাই বলেছেন, মুহম্মদ কিংবা ইসলাম সম্পর্কে কোনো ধরনের ইস্যু এই ছবির মূল স্ক্রিপ্টে ছিল না।
গার্সিয়া আরও বলেছেন, ছবিটির নাম মূলত ছিল ডেজার্ট ওয়ারিয়র, যার কাহিনী মূলত ২০০০ বছর আগেকার কাহিনী, যেখানে ইসলাম সম্পর্কে কোনো কটুক্তিও ছিল না। ছবিটি রিলিজ হওয়ার পর মুহম্মদকে নিয়ে এমন কাল্পনিক কাহিনী সংযোজন দেখে ইউনিটের সবাই বিস্মিত হয়েছেন।
পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি আমার একটাই আরজ, ফ্রিডম অব স্পিচ অবশ্যই গ্রহণযোগ্য, আমি এর বিরোধী নই, কিন্তু ফ্রিডম অব স্পিচে অবশ্যই কিছু আবশ্যিক লিমিটেশন থাকা দরকার। আর এই আবশ্যিক লিমিটেশন অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না করা, অন্যের স্বাধীনতায় অযথা হস্তক্ষেপ না করার নিশ্চিত গ্যারান্টি।
আজ আমি যদি বাসেলির ঘরে ঢুকে তাকে আঘাত করে বলি, এটা আমার ফ্রিডম অব স্পিচ- তাহলে নিশ্চয়ই এটাকে আপনি-আমি কেউই যেমন সমর্থন করবো না, একইভাবে শুধু মুহম্মদ (স.) নয়, পৃথিবীর কোনো মানুষকেই মিথ্যা ও খারাপভাবে চিত্রায়িত করার অধিকারও কারো নেই।
আমরা চাইবো বিশ্ব মানবতার স্বার্থে, বিশ্ব সংহতির স্বার্থে বাসেলির ওই তথাকথিত চলচ্চিত্র ইউটিউব থেকে মুছে ফেলা হোক। কারণ ইসলামের রাসুল (স.) এর অপমান বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় কিছুতেই সহ্য করবে না। দবে এ জন্য সহিংসতা নয়, আমরা শান্তি চাই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমাদের মহানবী (সা.) এর আদর্শ মনে রেখে চলতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, যে বৃদ্ধা মহানবী (সা.) এর পথে কাঁটা বিছিয়ে দিতেন, তার অসুস্থতার খবর পেয়ে মহানবী (সা.) নিজে ওই বৃদ্ধাকে দেখতে গিয়েছিলেন। মহানবী (সা.) এর ধৈর্য ও ক্ষমার এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে আমাদের সামনে।
আশার কথা, বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে সুন্দর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দেশে ইউটিউব বন্ধ করা হয়েছে। আমরা সব সময়ই শান্তির পক্ষে। আমাদের ইসলাম ও রাসুলুল্লাহ (স.) মূলত এই শান্তির অমিয় বার্তাই নিয়ে এসেছিলেন এবং প্রচার করেছিলেন। তাই আমরা কোনো অরাজকতা যেমন চাই না, তেমনি কেউ আমাদের মহান নেতাকে অপমান করুক তাও চাই না।
তাই এ চলচ্চিত্রের প্রচার বন্ধে আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করতে পারি। যেমন- আইনের আশ্রয় নিতে পারি, গণ স্বাক্ষর নিতে পারি, রাষ্ট্রীয়ভাবে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারি, বিশ্ব গণমাধ্যম ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে দেন-দরবারেও এর শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে পারে।