খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ এবং শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিং সংক্রান্ত নিদের্শনায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রোববার সন্ধ্যায় নতুন নির্দেশনা দিয়ে নতুন দু’টি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে গত ১৪ জুন ব্যাংক এই প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলো। তারপর থেকে ব্যাংক এবং ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষে ওই প্রজ্ঞাপনের বিরোধিতা করা হচ্ছিল।
ব্যবসায়ী সমাজের সেই দাবির মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশেষে সরে আসতে অনেকটা বাধ্য হলো।
তবে ‘খেলাপি ঋণ কোনোভাবেই তিনবারের বেশি পুনঃতফসিল করা যাবে না’ বলে যে নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছিলো তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
এর আগে একজন ঋণগ্রহীতা তার ঋণ যত খুশি ততবার পুনঃতফসিল করতে পারতেন। এখন আর পুরনো ঋণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়মিত ঋণ হবে না। যদিও সিআইবি প্রতিবেদন নিয়ে দায়মুক্তি পেয়ে নতুন ঋণ করা যাবে। তবে এই ঋণ পৃথকভাবেই দেখা হবে।
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ৬ মাস অতিক্রান্ত হলে নিম্নমানে ঋণটি শ্রেণীকৃত হবে যেখানে আগের প্রজ্ঞাপন অনুসারে তা ছিলো ৩ মাস। এছাড়া, ছয় মাস পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত উক্ত পর্যায়ে শেণীকৃত থাকবে। যদি ঋণটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ছয় মাসে গিয়ে ঠেকে, অর্থাৎ যদি নিম্নমান থাকার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়, তাহলে তা সন্দেহজনক পর্যায়ে শ্রেণীকৃত হবে এবং তা এক বছর পর্যন্ত এ পর্যায়ে থাকবে। ৯ মাস থেকে বাড়িয়ে এটি এখন এক বছর করা হলো। আর এক বছর পার হয়ে গেলে তা মন্দ ঋণে পরিণত হবে।
ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ: নতুন নিয়মে ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের ক্ষেত্রে সব ধরনের ঋণের পুনঃতফসিল করার মেয়াদে বড় ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১৪ জুনের প্রজ্ঞাপনে ছিলো ঋণ খেলাপি হওয়ার ১৮ মাসের মধ্যে প্রথমবার পুনঃতফসিল করার নির্দেশ ছিলো। কিন্তু রোববারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তা ২৪ মাস (দু’বছর) করা হয়েছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বারের ক্ষেত্রে এক বছর এবং ৯ মাস করা হয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পুনঃতফসিলের সময়ের মধ্যে অবশ্যই যাবতীয় মূল ও সুদ পরিশোধ করতে হবে।
এককালীন পরিশোধ: খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের জন্য ডাউন পেমেন্ট বা এককালীন অর্থ পরিশোধের কিছু শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
যেমন: প্রথমবার পুনঃতফসিল করতে গেলে বকেয়া পরিমাণের ১৫ শতাংশ অথবা মোট ঋণের ১০ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি, সেটি নগদ পরিশোধ সাপেক্ষে গ্রহণ করা হবে। দ্বিতীয়বার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে বকেয়া পরিমাণের ৩০ শতাংশ অথবা মোট ঋণের ২০ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি সেটি নগদ পরিশোধ সাপেক্ষে আবেদন গ্রহণ করা হবে। আর তৃতীয়বারের ক্ষেত্রে বকেয়া পরিমাণের ৫০ শতাংশ অথবা মোট ঋণের ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি সেটি নগদ পরিশোধ সাপেক্ষে আবেদন গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং নীতি ও প্রবিধি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কেএম ওয়াদুদ বাংলানিউজকে টেলিফোনে বলেন, “আমরা ১৪ জুন যে প্রজ্ঞাপনটি জারি করেছিলাম তার মধ্যে ভাষাগত এবং সময়ের কিছু সংশোধনী এনে আজকের এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।”