বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি এক অতীব তাৎপর্যপূর্ণ দিন। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন আর আত্মত্যাগের বহ্নিমান ইতিহাস বাঙালির। অবশেষে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। যুদ্ধ পরবর্তী সেই বিধ্বস্ত দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রশ্নটি যখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি তখন, পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেটা ছিল ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি।
১৯৭১ সালে জাতিকে স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। পরে চট্টগ্রাম কালুঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে তার পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালের সেই ভয়াল ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে কারাগারে অন্তরীণ রাখে। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তিনি পাকিস্তানের বন্দিশালায় প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুণছিলেন। এমনকি তার জন্য কবর পর্যন্ত খনন করা হয়েছিল।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে তখন বিশ্বব্যাপী অভূতপূর্ব জনমত গড়ে উঠেছিল। সব মহাদেশের লাখ কোটি মুক্তিকামী মানুষ এবং বিশ্ব নেতারা তার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয়ে তাকে মুক্তি দেয়।
মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির বিজয় জাতির জনকের মুক্তি তরাণ্বিত করে। তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধু নিজেই তার এই প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন, ‘অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা।’
আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ঐতিহাসিক দিনের তাৎপর্য হলো দেশের সার্বিক উন্নয়ন চেষ্টার শপথ নেওয়া। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তার সুদীর্ঘ সংগ্রামী জীবন থেকে প্রেরণা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জাতিকে নতুন উদ্যমে কাজ করার অঙ্গীকার।
১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে রয়েছেÑ সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশে সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।আলোচনায় অংশ নেবেন, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের জন্য দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থকসহ সকল শ্রেণী-পেশা এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।