রাজস্ব আদায়ে নতুন রেকর্ডের মধ্য দিয়ে শেষ হলো আয়কর মেলা-২০১২। এবারের মেলায় রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮৩৮ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ৫৮১ টাকা, যা গত মেলার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি।
এছাড়া এবার মেলায় এসে আয়কর বিবরণী দাখিল করেছেন ১ লাখ ২ হাজার ১৯৮ জন করদাতা। আর কর সনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিয়েছেন ১৬ হাজার ৪০২ জন নতুন করদাতা। এবং কর সংক্রান্ত সেবা নিতে মেলায় এসেছেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৭ মানুষ।
শনিবার মেলার সমাপনী উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
দেশের সাত বিভাগীয় শহরসহ ১১টি বড় জেলা শহরে মেলার আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিভাগীয় শহরগুলোতে মেলার আয়োজন করা হয় সাত দিনব্যাপী। যার শেষ দিন ছিলো শনিবার। আর জেলা শহরগুলোতে পাঁচ দিনব্যাপী মেলা শেষ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার।
রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ও সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন- এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুস সোবহান সিকদার, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএইচ মাসুদ সিদ্দিকী, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা।
করমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, “দেশের ১৫ কোটি মানুষের ৫ শতাংশ যদি কর দেয় তাহলে এর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৭৫ লাখ। কিন্তু বর্তমানে এর পরিমাণ এর অর্ধেকেরও কম। যেদিন করদাতার সংখ্যা ৭৫ লাখ হবে সেদিন আমাদের অর্থনীতি অন্য মার্গে পৌঁছে যাবে। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।”
তিনি বলেন, “কর আদায়ে আমাদের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সরকার চাচ্ছে, এটা আরো ব্যাপক আকারে বাড়ুক। তবে, এজন্য চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। কর প্রদান দেশপ্রেমিকের কাজ। আর এজন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব সকলের। বিশেষ করে এনবিআর কর্মকর্তাদের।”
অর্থমন্ত্রী তার আগে বক্তব্য দেওয়া আবু আলম মো. শহীদের বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, “হ্যাঁ, মেলাটি রাত ৮টা, ৯টা পর্যন্ত হতে পারে। যাতে করে মানুষ অফিস শেষ করে আসতে পারে। কর প্রদানের আড্ডার জায়গায় মিলিত হতে পারে।”
ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, “তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত মেলাতে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। তবে, রাজস্ব আদায় বাড়ানো মেলার উদ্দেশ্য নয়। মানুষকে কর প্রদানে উৎসাহ এবং কর প্রদান সংস্কৃতি গড়ে তুলতেই এনবিআর এ মেলার শুরু করে। আগামীতে মেলা প্রতিটি জেলায় নিয়ে যাওয়া হবে। এবং পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ে এই মেলা করার পরিকল্পনা আমাদের আছে।”
মেলার বিস্তারিত তুলে ধরে মেলা আয়োজন কমিটির সভাপতি এবং এনবিআর সদস্য এমএ কাদের সরকার বলেন, “গত মেলাতে আমাদের রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৪১৪ কোটি টাকা। এবার তা ৮৩৮ কোটি টাকার ওপরে। একইভাবে গতবার মোট টিআইএন গ্রহণকারীর সংখ্যা ১০ হাজারের কিছু বেশি। এবার তা ১৬ হাজার ৪০২ জন। আর আয়কর বিবরণী দাখিলকারীর সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ১৯৮ জন। ২০১১ সালের মেলাতে যা ছিলো ৬২ হাজার।
তিনি বলেন, এবারের আয়কর মেলায় কর সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা নিতে এসেছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৭ জন ব্যক্তি। যা গত মেলার থেকে চারগুণেরও বেশি।
এক নজরে আয়কর মেলার সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান-
এরই মধ্য দিয়ে শেষ হলো তৃতীয় আয়কর মেলা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয় এর আনুষ্ঠানিকতা। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা মেলার উদ্বোধন করেন।