কোনো পক্ষই কোনো পক্ষকে দোষারোপ করবে না এই শর্ত সামনে রেখে বিশ্বব্যাংকের সাথে পদ্মাসেতুতে ঋণচুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
উভয় পক্ষই এ বিষয়ে এখন একমত এবং যে কোনো মুহূর্তেই আসবে ঘোষণা।
এসব কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন।
“শেষ পর্যায়ে টেক্সট রেডি হচ্ছে। দুই পক্ষের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়েছে,” প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীকে উদ্ধৃত করে বাংলানিউজকে জানান ড. মোমেন।
গওহর রিজভীয় ছাড়াও ওয়াশিংটনে এ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এবং বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেক।
এর আগে শুক্রবারের মধ্যেই পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে সুখবর পাওয়া যাবে, ঢাকায় সাংবাদিকদের এমন কথা জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলেন, দুই তিনের মধ্যেই বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি ঢাকায় আসছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মিন্টোরোডে নিজ বাসার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মুহিত আরও জানান, প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় সরকারের ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গেও কথা বলবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক তার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এরই মধ্যে সেকথা জানিয়ে দিয়েছে ঋণ প্রদানে সম্মত অপর দুই প্রতিষ্ঠান এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জাইকাকে।
এ বিষয়ে ঢাকায় অর্থমন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে কোন সময়ই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ছুটি নেওয়ার পর পরই বিশ্বব্যাংক তার অবস্থান পাল্টায়। বিষয়টিতে দুই দিন আগে থেকেই ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছিলো।
এদিকে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী নিজেও সাংবাদিকদের কাছে বলেন তিনি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ব্যাপারে আশাবাদী।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সকালের দিকে বাংলানিউজকে বলেন, “আলোচনার ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি।”
“চূড়ান্ত হলে বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে“, বলেন তিনি।
ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ওই কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তিনি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টাইন, বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেক ও ইআরডির কর্মকর্তারা অংশ নেন।
উল্লেখ্য, আগামী ২১ সেপ্টেম্বর জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার ঋণ কার্যকরের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। জাইকা এর আগে একাধিকবার ঋণ কার্যকর করার সময়সীমা বাড়িয়েছিল। ২১ সেপ্টেম্বরের পর আর বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই বলে জাইকা সূত্র জানিয়েছে। এ কারণে এর আগেই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটা ইতিবাচক অবস্থায় পৌঁছার কথা ছিল সরকারের।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ কার্যকর করার সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৩১ সেপ্টেম্বর। আর দুর্নীতির অভিযোগ সুরাহা না হওয়ায় বিশ্বব্যাংক গত ২৯ জুন ঋণ চুক্তি বাতিল করে।
পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক ছাড়াও এডিবি, জাইকা ও ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ঋণচুক্তি করেছিল।
গত ২৯ জুন পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ হওয়ায় এই প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করে বিশ্বব্যাংক।
অর্থায়ন না করার বিষয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার এ সেতু-প্রকল্পের দুর্নীতিতে অভিযুক্ত উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে ব্যর্থ। বিশ্বব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। আর বিষয়টিতে সরকারের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়।
বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ, সেতু নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে প্রাক-যোগ্যতা যাচাই প্রক্রিয়ায় এবং পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হতে পারে। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মাসেতুর অর্থায়ন নিয়ে দুদক তদন্ত কাজ শুরু করে। এ ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কাজ দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। একটি হলো পদ্মাসেতুর কাজে ঠিকাদার নিয়োগ ও অপরটি পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত।
পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তা ছাড়াও এডিবির দেওয়ার কথা ছিল ৬১ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা। তৃতীয় অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) পদ্মাসেতুতে ৪০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দেওয়ার কথা। এছাড়া ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) ১৪ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দেবে। জনগণের বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯০ কোটি ডলার।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমানের পদত্যাগ কিংবা তাকে ছুটিতে পাঠানো ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোসহ মোট চারটি শর্ত পূরণ হলেই বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন করবে বলে জানায়। সংস্থাটি গত জুন মাসে এ শর্তগুলো দেয়। বাকি তিনটি শর্ত নিয়ে মীমাংসায় পৌঁছানো গেলেও মসিউরের বিষয়টি ঝুলে ছিল। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি অনুযায়ী, অর্থ উপদেষ্টা ছুটিতে গেলেই বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এই ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেল।