জাতীয় পার্টির দুই তারকা চিহ্নিত ১১০ প্রার্থীর সঙ্গে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বৈঠক সোমবার হয়েছে।
রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়েল সেন্টারে আয়োজিত এ বৈঠকে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য এই ১১০ প্রার্থীর সঙ্গে রুদ্ধদার বৈঠক করছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন জানান, প্রথমে ১০৬ জনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ১১০ জনকে ডাকা হয়। তারা সবাই উপস্থিত হয়েছেন।
বৈঠকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদ, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, গোলাম হাবিব দুলাল, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ অংশ নিয়েছেন।
বৈঠকের আলোচ্য বিষয় গোপন রাখতে মিডিয়ার প্রবেশে কড়াকড়ি করা হয়েছে। শুধু কার্ডধারীদের হল রুমে প্রবেশ করার অনুমতি রয়েছে। মূল অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অবশ্য মূল অনুষ্ঠানের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে ফটোসেশন করেছেন বৈঠকে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ।
আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারবে এমন আসনের প্রার্থীদের দুই তারকা মার্কা করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছেন ১১০ প্রার্থী। এসব প্রার্থীদের এখনই মাঠে গিয়ে কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী আসনের বিপরীতে একক প্রার্থীকে ডাকা হয়েছে। মাত্র কয়েকটি আসনের বিপরীতে সম্ভাব্য দুইজন প্রার্থীকেই ডাকা হয়েছে।
কয়েকটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে ডাকার বিষয়ে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন জাতীয় পার্টির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী এবিএম তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
সূত্র জানিয়েছে, দুইজন ডাক পাওয়া আসনের যে প্রার্থীর জন্য আগামী তিন মাস পরীক্ষার মাস হিসেবে মাঠে নামতে বলা হবে। যে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে এবং পার্টির তৃণমূলের নেতারা যাকে চাইবেন তাকেই মনোনয়ন দেওয়া বিষয়ে ঘোষণা থাকবে বলে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টির চাইছে ২০০ আসনের প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে মাঠে নামিয়ে দিতে। যাতে তারা সম্ভাব্য অন্যান্য প্র্রার্থী থেকে নির্বাচনী প্রচারণার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে পারে।
এছাড়া এরশাদ মনে করছেন, বিএনপিকে অপ্রস্তুত করতে আগাম নির্বাচন দিতে পারে আওয়ামী লীগ সরকার। সে ক্ষেত্রেও যেন জাতীয় পার্টি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে।
পার্টির প্রেসিডিয়ামের বৈঠকেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে সব আসনে ভালো প্রার্থী রয়েছে তাদের গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে দিতে। যাতে তারা এখন থেকেই মাঠ গুছিয়ে নিতে পারে।
জাতীয় পার্টি মনে করছে আগামী নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টি ৭০ থেকে ৮০টি আসেন নির্বাচিত হতে পারবে। আর সে রকম পরিস্থিতি হলে তাদের ছাড়া কোন দলেই সরকার গঠন করতে পারবে না।
আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হওয়া কঠিন। তাই জাতীয় পার্টিকেই সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় পাঠাতে চাইবে দুই দলই। এই সুযোগ জাতীয় পার্টি হাত ছাড়া করতে চায় না। তাই তাদের এই আগাম রণপ্রস্তুতি বলেও জানা গেছে।
এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ১০৫ আসনের প্রার্থীদের ডাকা হয়। ওই প্রার্থীদের সম্ভাব্য চূড়ান্ত প্রার্থী বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। যে কারণে একেবারেই ঘোষণা দেওয়া যাচ্ছে না।
অনেক এলাকায় এসব প্রার্থীদের রঙিন পোস্টার শোভা পাচ্ছে। অনেকটা নির্বাচনী আমেজ লক্ষ্য করা গেছে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ও চেয়ারম্যানের কার্যালয়েও।
তবে এর বিপরীতে হতাশাও কম নেই। অনেক এলাকায় প্রার্থী ডাকা নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জাতীয় পার্টির এক যুগ্ম-মহাসচিব বাংলানিউজকে বলেন, দু’টি ধারা আমার কাছে কালো ধারা হিসেবে চিহ্নিত। এর একটি হচ্ছে পুলিশের ৫৪ ধারা। আরেকটি হচ্ছে জাতীয় পার্টির ৩৯ ধারা।
এই ধারার কারণে কিছু বলছে পারি না। কিছু বলতে গেলে কোন রকম আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ না দিয়েই বহিষ্কার করা হয়।
তা না হলে অনেক কথাই ছিল। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, অনেককে প্রার্থী করা হয়েছে। যাদের কোনই সামাজিক অবস্থান নেই।
পার্টির চেয়ারম্যানকে ভুল তথ্য দিয়ে এসব প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। এতে দলের খুবই ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, খুলনা-৪ আসন থেকে প্রথমে হাদউজ্জামানকে ডাকা হয় ১৬ সেপ্টেম্বর সভায় যোগদানের জন্য।
পরে সমালোচনার মুখে ইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন নামের একজনকে ডাকা হয়েছে। যাকে স্থানীয়রা তো দূরের কথা জেলা ও উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতারাই চিনতে পারছেন না।
খুলনা জেলা জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি আবুল কাশেমও একই দাবি করেছেন। তিনিও নাসির উদ্দিনকে চিনতে পারছে না বলে জানিয়েছেন। অথচ এই আসনে জাতীয় পার্টির একজন যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে।