চলতি অর্থবছরেই পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শুরু করার আশা প্রকাশ করেছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “কে কি বলল তা জানি না, আশা করি চলতি অর্থবছরেই পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শুরু করবো।”
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার ইনে ব্র্যাক ড্রাইভিং ও ট্রেনিং স্কুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নেয়া ২১ জন নারী গাড়িচালককে সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে এর আগে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান অবশ্য সাংবাদিকদের বলেন, “বিশ্বব্যাংক টাকা দিলেও এ সরকারের আমলে পদ্মাসেতু হবে না।”
মসিউর রহমানের এ মন্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান মিডিয়ার কাছে কি বলেছেন তা জানি না। গতকালও তার সঙ্গে কথা হয়েছে।”
ওবায়দুল কাদেরের কর্মকাণ্ড দেখে আড়ালে আবডালে তাকে যে অনেকেই “ফাটাকেষ্ট মন্ত্রী “ বলেন তা তিনি জেনে গেছেন। আর তাই নিজের মুখেই বলেছেন, “অনেকেই আমাকে ফাটাকেষ্ট মন্ত্রী বলে।“
তিনি বলেন, “আমি মন্ত্রণালয়ে বসে না থেকে প্রতিদিন ছোটাছুটি করি। গত ৯ মাসে ৫৬টি জেলা সফর করেছি। কয়েকটি জেলায় একাধিকবার গিয়েছি। মিরপুর বিআরটিএতে আমি ৭ বার গিয়েছি, আরিচায় ২৪ বার গিয়েছি। তাই কেউ কেউ বলেন, আমি ৭ দিনের মন্ত্রী ফাটাকেষ্ট।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “ফাটাকেষ্টরটা অভিনয়, আমারটা বাস্তব। আমি যে প্রচারের জন্য কিছু করি না তা প্রমাণ হবে। আমার কাজটা পণ্য বলে মিডিয়া তা প্রচার করে। মানুষ যা দেখতে চায় না, মিডিয়া তা প্রচার করে না। আমি অনেক সকালে গিয়েছি, বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি তখনও মিডিয়া গিয়েছে।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “ইতোমধ্যে আমি ভালো কথা অনেক বলে ফেলেছি সেই তুলনায় ভালো কাজের দৃষ্টান্ত অনেক কম। আমরা আসলে যত কথা বলি ততো কাজ করি না। করলে দেশটা সোনার বাংলাদেশ হতো। আরেকটি সমস্যা হলো, আমরা নেতারা ক্ষমতায় গেলে শাসক হয়ে যাই। নেতাদের শাসক হওয়ার পরিণতি ভালো হয় না।”
নিজেকে কর্মী ও স্বচ্ছ দাবি করে তিনি বলেন, “মন্ত্রীর চেয়ারে বসে কমিশন খেলে তো আর কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। আমি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছি ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে। এরপর রেল মন্ত্রণালয়ের ক্রাইসিসে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। সুন্দর এসি রুমে বসে নির্দেশনা দিতে পারতাম। কিন্তু আমি দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করছি।”
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “কিছু লোক টাকার জন্য কাজ করে, কেউ নাম-খ্যাতির জন্য কাজ করে। আমি কাজ করি আমার ভালো লাগার জন্য। তাই আমার বিশ্রামের সময় নেই। আগামী এপ্রিলের আগে নতুন কোনো স্বপ্ন দেখবো না। যেসব রাস্তা আছে, তা সংরক্ষণ ও মেরামত করবো। আর যেসব প্রকল্প শুরু হয়েছে তা চলবে।”
নিজের দুর্বলতা স্বীকার করে তিনি বলেন, “আমি তো এত বছরের জঞ্জাল আলাদিনের চেরাগ দিয়ে সমাধান করতে পারবো না। যেসব বিষয় আউট অব ট্র্যাক, সেসবকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি।”
মন্ত্রী সুখবর দিয়ে বলেন, “নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডিজিটাল নম্বর প্লেট ব্যবহার শুরু করবো। এই ডিজিটাল নম্বর নিয়ে সেনাবাহিনীর মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে কাজ চলছে। সরকারের সব জায়গায় শেষ সময় সব কাজ একটু ঢিলেঢালা হয়। আমি চেষ্টা করছি কাজের গতি বাড়াতে।”
নারী গাড়ি চালকদের ব্যাপারে তিনি বলেন, “মালয়েশিয়াতে মেয়েরা হিজাব পরে গাড়ি চালায়। আমাদের দেশের নারীরা যাতে এ পেশায় বেশি করে যুক্ত হতে পারে সরকার সে চেষ্টা করছে।”
ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ এ (রুমী) আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ, এডিশনাল আইজিপি ও পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর নাজমুল হক, বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) তপন কুমার সরকার, ব্রাকের সিনিয়র ডিরেক্টর আসিফ সামি, ব্র্যাকের ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসের পরিচালক নাজমুল হাসান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ওসমান আলী প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিআরটিএর চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান বলেন, “যোগাযোগমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রায় ৬০০ নারী চালক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিরাপদ সড়ক চাই, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট, নিটল-নিলয় গ্রুপ, গণস্বাস্থকেন্দ্র ও ব্র্যাক দক্ষ ড্রাইভার তৈরিতে বিভিন্নভাবে কাজ করছে। আমরা বিআরটিএর পক্ষ থেকে সবার কাজে সহযোগিতার চেষ্টা করছি।”
তিনি বলেন, গতকাল পর্যন্ত বিআরটিএ থেকে ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৩১০টি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। সরকার স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স চালু করেছে। এই ডিজিটাল কার্ড নকল করা সহজ নয়। আগামী নভেম্বরে ডিজিটাল নম্বর চালু করা হবে। তখন পুলিশ অফিসে সব মনিটরিং করতে পারবে।”