সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংসদ সদস্য ডা. মতিউর রহমানকে হারিয়ে আমরা শুধু একজন সংসদ সদস্য নয়, একজন সমাজসেবককে হারিয়েছি। তার মৃত্যু দেশ ও জনগণের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
রোববার জাতীয় সংসদে ডা. মতিউর রহমানের ওপর শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ডা. মতিউর রহমান সৌদি-আরবে চাকরি করতেন। সেখানে তিনি অনেক বেতন পেতেন। দেশের মানুষের জন্য কাজ করার জন্যই তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন।”
তিনি বলেন, “১৯৮৪ ওমরা করতে গেলে জেদ্দায় তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। সৌদি আরবে আওয়ামী লীগের শাখা করা কঠিন ছিলো। পরে ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন গঠন করেন। এর পর বাংলাদেশে আওয়ামী ফাউন্ডেশন করা হয় তখন তিনি সৌদিতেও আওয়ামী ফাউন্ডেশন গঠন করেন।”
সংসদ নেতা বলেন, “চিকিৎসক হিসেবে তিনি মাসে একদিন এলাকায় ফ্রি-চিকিৎসা দিতেন। তার বিশেষ কোনো চাহিদা ছিলো না।”
এর আগে টাঙ্গাইল-৩ আসনের সংসদ সদস্য মতিউর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী।
পরে মতিউর রহমানের জীবনের ওপর আলোচনা শুরু হয়। মতিউর রহমানের জীবনের ওপর আলোচনা করেন চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান ফকির, খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ডা. সিরাজুল আকবর, ডা. আমানুল্লাহ, কামাল আহমেদ মজুমদার, আবদুল মতিন খসরু, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দীকি, সাবেক রেলপথ মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ছাত্র জীবনের বন্ধু মতিউর রহমানের জীবনের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অবদান স্মরণ করেন।
ডা. আমানুল্লাহ বলেন, “একজন চিকিৎসক হিসেবে মতিউর রহমান নার্স, রোগীসহ সবার সঙ্গে আন্তরিক ব্যবহার করতেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।”
চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ বলেন, “ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে তিনি ছাত্র জীবনে অমায়িক ব্যবহারে রাজনীতি করেছেন। ছয়দফা আন্দোলনের সময় তিনি একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন।”
আলোচনা শেষে মতিউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। এরপর মতিউর রহমানের মৃত্যুতে সর্বসম্মতিক্রমে, শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
সংসদীয় রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের বর্তমান কোনো সদস্য মৃত্যুবরণ করলে, মৃত্যুর পরে সংসদের প্রথম বৈঠকে কোনো আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় না।
পরে ডেপুটি স্পিকার দিনের কার্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করে সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সংসদের বৈঠক মুলতবি রাখেন।
এর আগে দুপুরে সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ডা. মতিউর রহমানের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্যরা অংশ নেন।
জানাযার পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব, জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়।