সোনালী ব্যাংকের ২ কর্মকর্তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে দুদক

সোনালী ব্যাংকের ২ কর্মকর্তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে দুদক

হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ছয় কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরমধ্যে ২ কর্মকর্তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারি তদন্তে সন্দেহভাজন আরো ৩১ জনের জিজ্ঞাসাবাদ  রোববার থেকে শুরু হয়। এদিন ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হচ্ছেন— নওশের আলী (মহাব্যবস্থাপক), মোহাম্মদ মাহবুবুল হক (মহাব্যবস্থাপক), আ ন ম মাসরুরুল হুদা সিরাজী (মহাব্যবস্থাপক), মো. মুছা (উপমহাব্যবস্থাপক), শেখ আলতাফ হোসেন (উপমহাব্যবস্থাপক) ও সফিউদ্দিন আহমেদ (উপমহাব্যবস্থাপক)।

সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুদক কার্যালয়ে ৬ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন ব্যাংকের ২ কর্মকর্তা। এতে অনুসন্ধান কাজে অগ্রহতি হবে মনে করছেন দুদকের অনুসন্ধান টিম। তবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ব্যাংকের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আ ন ম মাসরুরুল হুদা সিরাজী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়ে তিনি হলমার্কের ঋণের বিষয়ে ছোট একটি নিরীক্ষা শুরু করেন। কিন্তু তার ওপর বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসা শুরু করে।

তবে কে বা কারা তার ওপর চাপ দিয়েছেন, সে সম্পর্কে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান সিরাজী।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সরকারি চাপের মুখে তাকে কুমিল্লা, সিলেট ও পরে রংপুরে বদলি করা হয়। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের রংপুর শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
সিরাজী দাবি করেন, সোনালী ব্যাংকের তত্কালীন এমডি নিজেই তাকে বদলি করেছেন। উল্লেখ্য, ওই সময় সোনালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হুমায়ুন কবীর।

দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সোনালী ব্যাংকের অপর কর্মকর্তা মাহবুবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “যেসব তথ্য জানতে দুদক আমাকে ডেকেছে, তা আমি নিজেও জানি না। আমি হলমার্কের তানভীরকেও কোনোদিন দেখিনি।”

প্রসঙ্গত, হলমার্ক কেলেঙ্কারির জন্য গত ৩০ আগস্ট সোনালী ব্যাংক লিমিটেড বিভিন্ন পর্যায়ের ১৭ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২৬ আগস্ট সোনালী ব্যাংককে হলমার্ক কেলেঙ্কারির জন্য চিহ্নিত ৩২ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে ৩০ আগস্টের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ অনুযায়ী কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছে ব্যাংকটি।

হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদক রোববারে ৬ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৩৭ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ ও চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, সোনালী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) হেদায়েত উল্লাহ, সবিতা সিরাজ, ব্যবস্থাপক (এজিএম) গোলাম নবী মল্লিক, আশরাফ আলী পাটোয়ারি এবং জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদ উদ্দিন আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মীর মহিদুর রহমান ও ননীগোপাল নাথ এবং রূপসী বাংলা হোটেল শাখায় কর্মরত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিহির চন্দ্র মজুমদার, কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ও ওয়াহিদুজ্জামান প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, হলমার্কসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঋণের নামে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা (হোটেল শেরাটন) শাখা থেকে ৩ হাজার ৬শ’ ৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে হলমার্ক একাই দুই হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়। পরে এ ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে প্যারাগন নিট কোম্পানি, খানজাহান আলী সোয়েটার্স লিমিটেডে, ডি অ্যান্ড স্পোর্টস লিমিটেড, টি অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড ও নকশী নিট লিমিটেড।

অর্থ বাণিজ্য