আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বিরোধীদলের নেত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘খাল কেটে কেন কুমির আনতে চান? কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলছেন?’
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে আপনাকে ধরে নিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে, এর কি নিশ্চয়তা আছে?’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে আপনাকে (খালেদা) যে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠাবে না, এই নিশ্চয়তা কে দেবে? এমনও তো হতে পারে, আপনাকে আবার জেলের ভাত খেতে হতে পারে।’
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বাষির্কী উপলক্ষে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যের সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘নিজেদের এমনভাবে প্রস্তুত করো, যাতে যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠে দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারো।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের অতিত ঐতিহ্য আছে, সেই ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে। শিক্ষার পরিবেশ ও শান্তির জন্য কাজ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এক শ্রেণীর মানুষ আছেন, যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সাধ আছে, কিন্তু সাধ্য নেই, যাদের জনসমর্থন নেই, ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসার যোগ্যতা নেই তারাই আবার তত্ত্বাবধায়কের জন্য সরব হচ্ছেন। কোনো ভাবে আর একবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলে তারা ফাক-ফোকর দিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধী দল তাদের সঙ্গে সুর মিলাচ্ছে। আমি বিরোধী দলকে বলবো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য আরো কি কি করা দরকার সেই পরামর্শ দিন।’
৭৫’ এর পর যতো সরকার এসেছে, সেই সব সরকারের অধীনে যতো নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে বর্তমান সরকারের সময়ের মতো অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি বলেও শেখ হাসিনা দাবি করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে যতোগুলো নির্বাচন হয়েছে, সবগুলোই অবাধ সুষ্ঠু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘আমরা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারছি, এরপরও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলছেন কেন?’
মহাজোট সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত দেশে সবগুলো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন কি? খাল কেটে কুমির আনার দরকারটা কি? তত্ত্বাবধায়ক আসলেই যে বিএনপিকে চ্যাং দোলা করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে তা নয়, বরং আবারো জেলের ভাত খেতে হতে পারে। মাঝখান দিয়ে আগে যারা ক্ষমতায় যেতে পারেনি তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের ষড়যন্ত্রকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করে বলেন, ফাঁকফোকড় দিয়ে ক্ষমতায় আসতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন তারা।
তিনি অভিযোগ করেন, যারা কেনদিন জনগণের ভোটে জিতে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। কিন্তু রাজনীতির ফাকফোকর দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান, তারাই তত্বাবধায়ক সরকার আনার ষড়যন্ত্র করছেন। আর তাদের সঙ্গে সুর মিলাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল।
কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক আসলে আবারো গণতন্ত্রের যাত্রাও রুদ্ধ হবে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা ক্ষমতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা এবারের নির্বাচনের আগে সুযোগের অপেক্ষায় আছেন, যদি কোনো মতে আবারো তত্বাবধায়ক সরকারের সুবাদে ক্ষমতায় যাওয়া যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ এবং কুমিল্লায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। ইভিএম’র মাধ্যমে নির্বাচনেও আপনাদের প্রার্থী মেয়র হয়েছেন। এটা স্বীকার করতে হবে। জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরেছে। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হয়েছে। তাই যদি হয়, তাহলে তত্বাবধায়কের দরকার কী?’
প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ খাতে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘ক্ষমতায় এসে ৪৯টি পাওয়ার প্লান্ট বসিয়েছে। ২৪টি চালু হয়েছে। বাকিগুলো চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
‘আর তত্বাবধায়কের পক্ষের চক্রটি উৎপাদিত বিদ্যুত কাজে লাগিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে বড়ো বড়ো তত্ত্ব দিচ্ছেন। ইচ্ছে করলে সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে তাদের শিক্ষা দিতে পারি।’
তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, ধন সম্পদ টাকা পয়সা জৌলুস কিছু দিতে পারে না। আর ওদিকে নজর দিলে জাতিকে কিছু দেওয়া যায় না। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ‘সিম্পল লিভিং, হাই থিংকিং’ এটা মাথায় রেখে চলতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়ে ছাত্র রাজনীতির মর্যাদা ছিলো। সেই মর্যাদা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই লক্ষে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধৈর্য্য, সহনশীলতা ও আত্মমর্যাদা থাকতে হবে।’