১০৩ প্রবাসীর আর্জি ড. ইউনূসের ইমেজ জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করুন

১০৩ প্রবাসীর আর্জি ড. ইউনূসের ইমেজ জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করুন

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের মোট ১০৩ পেশাজীবী প্রবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক ইমেজকে জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার এবং গ্রামীণব্যাংক পরিচালনায় ড. মুহম্মদ ইউনূসের ভূমিকার পথ সুগম রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ পত্রে স্বাক্ষর করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের অধ্যাপক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, সমাজ সংগঠক, মানবাধিকার কর্মী, অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক প্রমুখ।

১৪ সেপ্টেম্বর খোলাচিঠির একটি কপি দেয়া হয়েছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম প্রতিনিধিকে।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ইংরেজীতে লেখা ঐ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের যে কোনও সাফল্য অর্জনে বা অগ্রগতির সংবাদে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গর্ববোধ করে। যে বাংলাদেশকে বলা হয়েছিল ভিক্ষার থলি, সেই বাংলাদেশ আজ একটি প্রাণবন্ত রাষ্ট্র যা গণতন্ত্র ও এক অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিরল দৃষ্টান্ত।

জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন বাংলাদেশকে  ‘পৃথিবীর জন্যে একটি আদর্শ দৃষ্টান্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ সফলতার জন্যে আপনি (শেখ হাসিনা) ও আপনার সরকার বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শিতা, একনিষ্ঠতা এবং লাখ লাখ দেশবাসীর চরম আত্মত্যাগ পৃথিবীতে বাংলাদেশের আবির্ভাবকে সম্ভব করেছে। তার সুযোগ্য ও নিবেদিত কন্যা হিসেবে আপনি সেই উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন এবং দেশে ও বিদেশে আপনার নেতৃত্বের প্রসার বিস্তার করেছেন। এতদসত্বেও একটি ব্যাপারে আমরা সবিনয়ে আপনার আশু মনোযোগ আকর্ষণ করছি।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অপসারিত করা হয়েছে তাতে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিরা গভীরভাবে মনোক্ষুন্ন হয়েছি। গ্রামীণব্যাংকের পরিচালনায় সরকারি নিয়ন্ত্রণের ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা এবং সম্প্রতি অধ্যাপক ইউনূসের বিগত আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে সরকারের অনুসন্ধানের প্রয়াসে আমরা অত্যন্ত পীড়িত। এসব পদক্ষেপ বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে কলংকিত করছে এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস মাইক্রো ক্রেডিট, মাইক্রো ফাইন্যান্স ও সোস্যাল বিজনেসের বিশ্বনেতা এবং তিনি বাংলাদেশের জন্যে সম্মান ও সুখ্যাতি বয়ে এনেছেন। তিনি সারাবিশ্বের রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও সুশীল সমাজের নেতাদের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। দরিদ্র্য ও অবহেলিতদের স্বনির্ভর করণে তার উদ্যোগ পাশ্চাত্যের স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশংসা পেয়েছে। আমরা মনে করি, অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক মহান সন্তান। তিনি সর্বক্ষণ দেশের স্বার্থকে নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন। আমাদের ছেলেমেয়েরা যখন সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পায় প্রফেসর ইউনূস কিভাবে তার নিজের দেশ থেকে দুঃখজনক ব্যবহার পাচ্ছেন, তারা প্রশ্ন করে, এসব কী হচ্ছে? তাদের প্রশ্নের কোনো সদুত্তর আমাদের কাছে নেই।

খোলাচিঠিতে আরো বলা হয়েছে, আমরা মনে করি অধ্যাপক ইউনূসের ভাবমূর্তিকে মলিন করার অথবা তার অবদানকে তুচ্ছ করার প্রচেষ্টা আত্মঘাতি পরিণতি সৃষ্টি করবে। আমাদের বিশ্বাস, আপনার সরকার প্রফেসর ইউনূসের দক্ষতা ও সুনামকে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করবে। সে লক্ষ্যে আপনার সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, প্রথমতঃ গ্রামীণব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন যেন অক্ষুন্ন থাকে, দ্বিতীয়তঃ সরকার যেন অধ্যাপক ইউনূসের অর্থনৈতিক লেনদেনের তদন্ত থেকে বিরত থাকে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, কিন্তু কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা যদি ভিত্তিহীন তদন্তের টার্গেট হয়, তখন তার ফল হয় নাগরিকের অহেতুক হয়রানি ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধার বিলুপ্তি।

সর্বশেষ প্যারায় বিনয়ের সাথে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা আরো অনুরোধ করছি আপনার সরকার যেন গ্রামীণব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে অধ্যাপক ইউনূসের ভূমিকার সুযোগ খোলা রাখে।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন ভয়েজ ফর জাস্টিসের ওয়ার্ল্ড ফোরামের আহবায়ক যুক্তরাজ্যের ড. হাসনাত হোসাইন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি চ্যাপ্টারের ড. মোসলেহউদ্দিন আহমেদ, যুক্তরাজ্যের ড. আনিসুর রহমান, ড. হাসান জিল্লুর রহমান, ড. রাফি আহমেদ, এ লতিফ জেপি, মনোয়ার বদরুদ্দোজা, ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, রেহনুমা সাজ্জাদ, ড. বানি আমিন, ড. রিয়াজ তালুকদার, যুক্তরাষ্ট্রের ড. তাজুল ইসলাম হাসমী, ড. শামসুল ইসলাম চৌধুরী, ড. আব্দুর রহমান, ড. মতিন আহমেদ, ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ডা. ফারুক আজম, ড. মুশতাক আহমেদ, ড. এম এ আওয়াল, আফজাল খান, সাঈদ আশরাফ, ড. কাজী টি ইসলাম, ড. দেওয়ান খান, ড. ফারুক মোহসীন, ড. মশিউর রহমান, ফকির জিয়া আহমেদ, ড.মিয়া শাহাবউদ্দিন, খন্দকার আলম আহমেদ, ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ, নাজনীন হোসেন, আমেনা হাই, নুরুল্লা হাজরা, ড. সুবর্ণা খান, সাদী খান, লাজিমা মাহমুদ, অধ্যাপক স্বপন গায়েন, সুভিক সরকার, ড. আব্দুল হাই, মাহমুদা আমিন, অধ্যাপক ড. মাহমুদ হাসান, সুজাতা সাহা, ড. ইফ্ফাত হোসেন, ড. রুমেল খান, সেলিনা খান, ড. তানভির আকরাম, অধ্যাপক মুনির কুদ্দুস, ড. মীর মাকসুদ আলী, ড. মোতাসিম বিল্লাহ, আতিকুর রহমান, ড. শাহীন ইসলাম, কানাডার হাসান মাহমুদ, সুইডেনের ইনাম চৌধুরী, আয়ারল্যান্ডের ড. আব্দুর রহমান, কুয়েতের ইজাজুর রহমান, সুইডেনের দিলরুবা জেড আরা, কানাডার ইশিতা শামস, ওয়ালিউর রহমান, অস্ট্রিয়ার গুলজার আহমেদ ও ড. শহীদ হোসেন, অস্ট্রেলিয়ার ড. সাজেদুর রহমান, মালয়েশিয়ার শফিকুল হাফিজ, সিঙ্গাপুরের ড. এম এ জব্বার, ভারতের প্রফেসর সেলিম রশিদ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের লুবনা কবীর প্রমুখ।

বাংলাদেশ