কামাল মিয়ার ফাঁদ’ আখাউড়ায় কোটি টাকা প্রতারণা, শতাধিক নারীর মাথায় হাত

কামাল মিয়ার ফাঁদ’ আখাউড়ায় কোটি টাকা প্রতারণা, শতাধিক নারীর মাথায় হাত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে কামাল মিয়া (৩০) নামে এক প্রতারক। প্রতি লাখে এক হাজার টাকা করে লাভ দেওয়ার কথা বলে অন্তত শতাধিক নারীর কাছ থেকে ওই টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় সে।

কামাল পালিয়ে যাওয়ার খবরে প্রতাড়িত পরিবারগুলোর চোখে এখন ঘুম নেই। অনেকে খেয়ে না খেয়ে আছেন। সমিতি কিংবা এনজিও থেকে টাকা তুলে দেওয়া নারীরা এখন কিস্তি পরিশোধের দুশ্চিন্তায় দিশেহার হয়ে পড়েছেন। অনেকে ঘরের আসবাব বিক্রি করে কিস্তি পরিশোধ করছেন।

কামাল মিয়ার ফাঁদ
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩০ বছর বয়সী যুবক কামাল মিয়া। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার পাঘাচংয়ের চানপুর গ্রামে। বিয়ে করেছেন একই উপজেলার বরিশল গ্রামে। বছর খানেক আগে থেকে বাসা ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন আখাউড়া পৌর এলাকার বড় বাজারে। কিছুটা হিজরার মতো আচরণ করা ওই যুবক আখাউড়া পৌর এলাকার রাধানগর, মালদারপাড়া, শান্তিনগর, বাগানবাড়ির (কুলিবাগান) নারীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেন। বেশিরভাগ নারীকে সে বোন বলে ডাকত। সখ্যতা গড়ে ওঠার পর ব্যবসা ও জমি কেনার কথা বলে নারীদের কাছ থেকে টাকা নেয় সে।

প্রলোভন দেখায় প্রতি লাখে প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে দেওয়ার। টাকা দেওয়ার সামর্থ নেই এমন পরিবারের নারী সদস্যদের এনজিও ও সমিতি থেকে ঋণ তুলতে সে নিজেই সাহায্য করে। মাস ছয়েকের ব্যবধানে বিভিন্ন এলাকার নারীদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় সে। আর এ কাজের দলিল হিসেবে অনেক নারীকে ১০০ টাকার স্টাম্পে হাওলাত হিসেবে দেখিয়ে সাক্ষর করে কামাল। তবে বেশির ভাগ নারীরই এমন দলিলও নেই। গত ১০-১৫ দিন আগে সে পালিয়ে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

রাধানগরের বিল্লাল সরকার বলেন, “সারাডা জীবন কষ্ট করে জোগানো আমার সবকিছু শেষ। বেশি লাভের কথা চিন্তা কইরা আমার বৌ ধাপে ধাপে নগদ ১৪ লাখ টেহা দিছে কামালরে। আমি অহন পথে বইছি। কামালরে দেওনের লাইগ্যা এনজিও, সমিতি থেইক্কা যেই টেহা আমার বৌ উডাইছে এইডার কিস্তি চালাইতাম মাইনষের কাছে হাত পাততাছি। চাইরটা মাইয়া লইয়া অহন আমার মরণ ছাড়া কোনো উপায় নাই।”

পৌর এলাকার রাধানগরের অরুনা বেগম ও তার মেয়ে সুমি আক্তার জানান, দু’জনে মিলে এনজিও থেকে ৭০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন কামালের হাতে। দিয়েছেন প্রায় এক ভরি স্বর্ণালংকারও। লাখে প্রতিদিন হাজার টাকা হিসেবে লাভ দেওয়ার কথা বলা হয় তাদেরকেও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌর শহরের রাধানগর শীল পাড়ার বাসিন্দা এক প্রবাসীর স্ত্রী জানান, তিনি বিশ্বাস করে স্বামীর পাঠানো ৭ লাখ টাকা কামালের হাতে তুলে দিয়েছেন। সাথে দিয়েছেন ৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কারও। কিন্তু কামাল পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে তার চোখে ঘুম নেই। একই বাড়ির নিচ তলার এক নারীর কাছ থেকেও একই কায়দায় ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই নারী।

এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে রাধানগর ঘোষপাড়ার একটি বাড়িতে আম্বিয়া খাতুন, মমতা বেগম, জেসমিন আক্তার, হ্যাপি আক্তার, তানিয়া বেগমসহ প্রতারণার শিকার আরো ১০-১৫ জন নারী এ প্রতিবেদকের কাছে তাদের কষ্টের বর্ণনা দেন। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, কামাল কোনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল না। এক প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় সে এভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের প্রত্যেকে ৫০ থেকে এক লাখ টাকা কামালকে দিয়েছেন । তাছাড়া সব মিলিয়ে কমপক্ষে শতাধিক লোক কামালের ফাঁদে পড়েছেন বলে জানান তারা।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কামালের এক বোনজামাইকে সে বেশ কিছু টাকা দিয়েছে। তার ওই বোন জামাই কিছুদিন আগে রিক্সা চালালেও এখন পৌর এলাকার মেড্ডায় পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করছেন।

এসব বিষয়ে আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল বাংলানিউজকে বলেন, “কামাল প্রতারণা করে অনেক নারীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। অনেক ভুক্তভোগী এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করে গেছে।”

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ করেননি।” তবে বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

বাংলাদেশ