তেল আমদানি কমায় অর্থনীতিতে ফিরছে ‘স্বস্তি’

তেল আমদানি কমায় অর্থনীতিতে ফিরছে ‘স্বস্তি’

চাহিদার পাশাপাশি বিশ্ব বাজারে দাম কমে আসায় জ্বালানি তেল আমদানিতে সরকারের ব্যয়ও কমে আসছে উল্লেখযোগ্য হারে।

আর এতে অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক আশা করছেন, আগামী নভেম্বর পর্যন্ত তেল আমদানি কমার এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আর জ্বালানি তেলের দামও সহসা বাড়ছে না বলেই তার বিশ্বাস।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০১২-১৩) প্রথম মাস জুলাইয়ে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমেছে ২৭ শতাংশ। আর নিষ্পত্তির পরিমাণ কমেছে ১০ শতাংশ।

অথচ গত অর্থবছরের জুলাই মাসে জ্বালানি তেল আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছিল ৫১ দশমিক ৪০ শতাংশ। নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়েছিল ৪১ শতাংশ।

২০১০-১১ অর্থবছরের পুরো সময়ে আগের বছরের চেয়ে জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েছিল ৩৯ শতাংশ।

আবু বকর সিদ্দিক  বলেন, “এমনিতেই জুন-জুলাই সময়ে তেলের চাহিদা কম থাকে। এবার বৃষ্টির কারণে চাহিদা আরও কমেছে। নভেম্বর পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে।”

গত বছর ‘অনেকগুলো’ ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হওয়ায় ফার্নেস ওয়েল ও ডিজেলের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। সে কারণেই অনেক বেশি তেল আমদানি করতে হয়েছে বলে বিপিসি চেয়ারম্যান জানান।

“আর এবার কেন্দ্রগুলোতে গতবারের চেয়ে কম তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে সেচকাজসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা খুব একটা বাড়েনি। এ কারণেই তেল কম আমদানি হচ্ছে।”

বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আপাতত আর না বাড়লে এবার এ খাতে খরচ গতবারের চেয়ে কম হবে বলে আবু বকর সিদ্দিক মনে করেন।

বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩৭ লাখ টন তেল আমদানি হয়। এর পরের অর্থবছর ৪৮ লাখ টন আমদানির লক্ষমাত্রা ধরেও আমদানি করা হয় ৫২ লাখ টন।

আর চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরে আমদানির লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৮ লাখ টন।

তেলের দাম বাড়ানো হবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, “তেলের দাম বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব আমরা সরকারকে দেইনি। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম না বাড়লে সহসা তেলের দাম বাড়বে বলে মনে হয় না।”

বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত  বলেন, “মূলত বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমার কারণেই এ খাতে ব্যয় কমেছে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো খবর।”

তেল আমদানিতে খরচ কমায় অর্থনীতিতে ‘স্বস্তি’ ফিরে আসছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জ্বালানি তেল আমদানি কমায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাশ্রয় হচ্ছে। অন্যদিকে এ খাতের জন্য সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণও নিতে হচ্ছে কম। এতে করে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়বে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে শিল্প খাতে, জিডিপিতে।”

জায়েদ বখত জানান, বিশ্ববাজারে বর্তমানে জ্বলানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের নিচে। অথচ গত বছর এ সময়ে তেলের দাম ছিল ১১০ ডলারের ওপরে।

“গতবার জ্বলানি তেল আমদানির জন্য বিপিসিকে অনেক টাকার যোগান দিতে হয়েছে। কিন্তু এবার দাম কম থাকায় খরচ হচ্ছে কম, সে কারণেই সরকারকে ঋণ কম নিতে হচ্ছে”, বলেন তিনি।

২০১২-১৩ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, তার চেয়ে বেশি শোধ করেছে। এ ধরনের ঘটনা এর আগে খুব কমই ঘটেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের অর্থ ও ব্যাংকিং উপ-বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯১ হাজার ৮৪০ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

গত অর্থবছরের শেষ দিন অর্থাৎ ৩০ জুন পর্যন্ত এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৩১৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

চলতি অর্থবছরের ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, তার চেয়ে ৪৭৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বেশি পরিশোধ করেছে।

অথচ গত অর্থবছরের এই সময়ে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৫ হাজার ৩৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল।

২০১১-১২ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে তা ২৯ হাজার ১১৫ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে।

চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে বলে ঠিক করেছে।

অর্থ বাণিজ্য