আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকায়

আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকায়

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছেন। বুধবার সকালে তারা ঢাকায় পৌঁছেছেন। ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রায় দুই সপ্তাহ ঢাকায় থাকবেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এশিয়া অঞ্চলের প্রধান ডেভিট কোয়েন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর তারা ফিরে যাবেন।

ঢাকায় পৌঁছেই সকাল ১১টায় বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সাথে প্রথম বৈঠক করেছেন প্রতিনিধি দল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এর আগে গত এপ্রিল মাসে আইএমএফ’র প্রতিনিধিরা ঢাকা ঘুরে যান। এবারের সফরকালে তারা বিগত সফরকালে দেওয়া পরামর্শ ও সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চাইবেন।

সূত্র বলছে, বর্ধিত ঋণ সুবিধার আওতায় প্রাপ্ত প্রথম কিস্তির বিষয়ে নিয়ে প্রতিনিধি দল জানতে চাইবেন।

তথ্য মতে, আইএমএফ ঘোষিত প্রায় ১০০ কোটি ডলারের (৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার) সুদবিহীন ঋণের প্রথম কিস্তি গত ২৫ এপ্রিল সরকারের হিসেবে জমা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের হিসাবে প্রথম কিস্তির ১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার যোগ হয়। সেই অর্থ সরকার চাহিদা মতো পরে উত্তোলন করে কোন কোন খাতে ব্যবহার করছে, তা জানতে চাওয়া হবে। এছাড়া দ্বিতীয় কিস্তির অর্থের ছাড়ের বিষয়টি নিয়ে তারা কথা বলবেন।

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গেথে সৃষ্ট পদ্মাসেতুর ঋণ চুক্তির জটিলতার বিষয় নিয়েও সরকারের সঙ্গে তাদের কথা হতে পারে বলে একটি সূত্র বলছে।

সূত্র বলছে, সফরকালে নতুন ভ্যাট আইনের কার্যকারিতা, সর্বশেষ বাজেট পরিস্থিতি, এডিপি বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া পাওনা, ভর্তুকি কমানো, অনুমোদিত ঋণের ব্যবহার, মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন ও ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বিষয় নিয়ে কথা হবে। ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি সোনালী ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনাটিও এবার আইএমএফ আলোচনায় আনতে পারে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনের হালনাগাদ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইবে আইএমএফ।

এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আইএমএফ’র এ সফর নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বৈঠকের একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফ’র সঙ্গে কি আলোচনা হবে, তারা কি জানতে চেয়েছেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে তাদের কি অবহিত করা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আইএমএফ ঢাকা অফিস সূত্র বলছে, আইএমএফ’র প্রতিনিধি দল আর্থিক খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করবেন। এর পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও পরিকল্পনা বিভাগের সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে।

এদিকে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের ব্যাপারে সরকার যে কমিটি গঠন করেছিল, সেই কমিটি ইতিমধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে। তবে এখনও আইনটি সংশোধনের চূড়ান্ত রূপ পায়নি। চূড়ান্ত সংশোধনী শিগগিরই মন্ত্রিসভায় পাঠানো হতে পারে।

গত এপ্রিলে সফরকালে আইএমএফ ভর্তুকি কমানোর ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মূল্য বাড়িয়ে সমন্বয় করার কথা বলেছিল। এবারের সফরকালে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইবে দাতা সংস্থাটি।

তথ্য মতে, চলতি বছরের ১২ এপ্রিল মাসে আইএফএম’র বোর্ড সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ ঋণ অনুমোদিত হয়।

প্রসঙ্গত, আইএমএফ থেকে ১০ বছরের জন্য এ ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। সাড়ে ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ড। আর পরের সাড়ে চার বছর তা পরিশোধ করতে হবে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চাপ কাটাতে আইএমএফ’র বর্ধিত ঋণ প্রকল্পের আওতায় সংস্থাটি এ ঋণের অনুমোদন দেয়।

সূত্র জানায়, অনুমোদিত এ ঋণের অর্থ অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলা করে স্থিতিশীলতা আনয়ন, বাজেট বাস্তবায়ন, মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন, ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহার করার কথা।

অর্থ বাণিজ্য