ঢাকা: লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় বেনগাজী শহরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেট অফিসে বিক্ষুদ্ধ প্রতিবাদকারীদের হামলায় লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন দূত ক্রিস্টোফার স্টিভেনসন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে সংঘটিত এ হামলায় তিনি এবং অপর তিন দূতাবাস কর্মী হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। আগুনের কারণে সৃষ্ট ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে ক্রিস্টোফার স্টিভেনসন মারা যান বলে জানিয়েছে লিবিয়ার নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ। এর আগে বুধবার দিনের শুরুতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেনগাজীর ঘটনায় তাদের এক দূতাবাস কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করেছিলো।
কিন্তু পরবর্তীতে সংবাদমাধ্যম লিবীয় কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে। তবে এ ব্যাপারে এখনও যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত একটি চলচ্চিত্রে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং পবিত্র ইসলাম ধর্মকে হেয় ও অবমাননার অভিযোগে এ বিক্ষোভ সংঘটিত হয় বলে মনে করা হচ্ছে। বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা এ সময় কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাংচুর চালায় এবং আগুন লাগিয়ে দেয়।
এছাড়া মঙ্গলবার মিসরের রাজধানী কায়রোতেও মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে প্রতিবাদাকারীরা। তারা এ সময় দূতাবাসের দেওয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে পড়ে বলে জানা গেছে।
বেনগাজীর ঘটনায় প্রতিবাদকারীদের কেউ কেউ কনস্যুলেট ভবনে হাতবোমাও ছুড়ে মারে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। তবে অপর একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যম জানায় সশস্ত্র ব্যক্তিরা এ সময় কনস্যুলেট ভবন লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণের পাশাপাশি রকেট চালিত গ্রেনেডও ছুড়ে মারে।
কনস্যুলেট ভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীরা তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করলেও বিক্ষুদ্ধ লোকদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় তারা কিছুই করতে পারেননি বলে দাবি করেছে লিবীয় কর্তৃপক্ষ। তবে কনস্যুলেট ভবনে হামলার পরপর লিবীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে হামলাকারীদের ব্যাপক বন্দুকযুদ্ধ হয় বলে দাবি করেছে লিবীয় কর্তৃপক্ষ। তবে এর সত্যতা এখনও যাচাই করা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট এলাকা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে আক্রান্ত কনস্যুলেট ভবন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য কর্মীদের সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান লিবিয়ার সহকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ানিস আল শরিফ।
এ ঘটনার পরপরই দেওয়া এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেন,“এ ভয়ঙ্কর ঘটনায় আমাদের হৃদয় ভেঙ্গে গেছে।”
জানা গেছে লিবিয়ার গাদ্দাফি বিরোধী লড়াইয়ে অংশ নেওয়া মিলিশিয়া গ্রুপ আনসার আল শরিয়া ব্রিগেড এ আক্রমণের পেছনে দায়ী। তবে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তারা। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বেনগাজীর মত ত্রিপোলিতেও সামাজিক ওয়েব সাইটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর আহবান জানানো হলেও সেখানে কোনো বিক্ষোভ ঘটেনি বলে জানা গেছে।
যে চলচ্চিত্র নিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত তার নির্মাতা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার অধিবাসী ৫২ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক স্যাম বাসিল। এর এতে প্রযোজনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী এক মিশরীয় কপটিক খ্রিষ্টান ব্যক্তি। ছবিটিতে তীব্র ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে প্রতিবাদকারীরা। কম বাজেটের এই ছবিটি আরবি অনুবাদসহ ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে।
কায়রোতে বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলে এতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
হাজার হাজার প্রতিবাদকারী এ সময় মার্কিন দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে পশ্চিমারা ইসলামকে অবমাননা করছে বলে অভিযোগ করে প্রতিবাদকারীরা।
কায়রোর প্রতিবাদ সমাবেশে খ্রিষ্টান ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাই অংশ নেন বলে জানান এক প্রতিবাদকারী।