সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টা: জড়িতদের বের করতে নজরদারি জোরদার

সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টা: জড়িতদের বের করতে নজরদারি জোরদার

গত বছরের ডিসেম্বরে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে জড়িত প্রবাসী ব্যবসায়ী ইশরাক আহমেদ ও সেনাবাহিনীর মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হককে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে কমিটির ২১তম বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি এম. ইদ্রিস আলী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে, ওই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে একটি বিশেষ টিম বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করছে ।

কমিটির সদস্য হুইপ মুজিবুল হক, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও মঞ্জুর কাদের কোরাইশী বৈঠকে অংশ নেন। এতে প্রতিরক্ষা সচিব খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামান, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, নৌপ্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল জেড ইউ আহমদ ও বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল মো. ইনামুল বারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ৯ ফেব্রুয়ারি কমিটির ১৯তম এবং ২২ এপ্রিল ২০তম বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়।

মঙ্গলবার ২০তম বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনার সময় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ৪ এপ্রিল সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভার সুপারিশ অনুসারে ইশরাক আহমেদকে দ্রুত গ্রেফতার ও তার বিরুদ্ধে বেসামরিক আদালতে আইনি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য খসড়া এজাহার সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে পাঠানো হয়েছে। কমিটির কার্যপত্র থেকে এতথ্য জানা গেছে।

ওই কার্যপত্র থেকে আরো জানা গেছে, পলাতক ষড়যন্ত্রকারী জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর গত ১৮ মার্চ পুলিশ ও র‌্যাব সদর দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা যদি বিদেশেও পালিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে কমিটি সেনাবাহিনীকে পরামর্শ দিয়েছে।

এছাড়া আইনি অপকৌশলের মাধ্যমে ওই দু’জন ষড়যন্ত্রকারী যাতে অব্যাহতি না পেয়ে যান সেজন্য অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলেও কমিটিকে জানানো হয়। আরো জানানো হয়, ওই ‘ষড়যন্ত্র’র সঙ্গে জড়িতরা যাতে সমুদ্রপথে চলাচল করতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশের উপকূলীয় সমুদ্রএলাকা ও বন্দরগুলোতে নৌ-বাহিনীকে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।

এদিকে কমিটির ২০তম বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, কমিটির সভাপতি ইদ্রিস আলী অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত ইশরাক আহমেদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান। পরে সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, “যতদূর জানা যায় ইশরাক থাইল্যান্ডে রয়েছেন। আমাদের প্রত্যেকটি বন্দর সারভিলেন্সের আওতায় আছে। তবে গোপনীয়তা রক্ষার্থে হালনাগাদ তথ্য বলা সম্ভব নয়।” একটি বিশেষ টিম বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করছে বলেও ওই বৈঠকে তিনি জানান।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবারের বৈঠকে কমিটির সদস্যরা বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা যে দেশে অবস্থান করছে সেদেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ফিরিয়ে আনা যায় কিনা সে ব্যাপারে আলোচনা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, বৈঠকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে নৌ-সদর দফতরকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে তথ্য উপস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া সমুদ্র এলাকায় যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা এবং সমুদ্র সম্পদ সুরক্ষিত করতে ন্যাশনাল মেরিটাইম কমিশন গঠন করার জন্য নৌ-সদর দফতরকে উদ্যোগ নিয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে মতামত সংগ্রহের সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস (এমইএস) পরিদফতরে যে সব  কর্মচারি ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে সাময়িকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত আছেন বা অবসরে গেছেন, মানবিক কারণে তাদের চাকরি স্থায়ী করার অথবা পেনশন দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়।

বাংলাদেশ