হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীরের গ্রাম আশুগঞ্জবাসীর চোখ এখন টেলিভিশনের পর্দায়।
সকাল হলেই খবরের কাগজ পড়া শেষ করে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখছেন। নজর রাখছেন, খবরে তানভীর মাহমুদ সম্পর্কে কিছু বলছে কিনা। খবরে তানভীর সম্পর্কে কিছু বলা শুরু হলে তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন টেলিভিশনের পর্দার সামনে।
জানা গেলে, ছোট বেলা থেকেই আলিশান গাড়ি ও বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ। এলাকায় তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না কেউ।
সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে একেবারে মুখ বন্ধ করেন অনেকে।
রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তারুয়া ইউনিয়নে তানভীর মাহমুদের গ্রাম আশুগঞ্জে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামে জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তানভীর প্রসঙ্গ।
চায়ের দোকান থেকে শুরু করে প্রায় সব জায়গায় আলোচনার তুঙ্গে হলমার্ক ও তানভীর। গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ির নারীরা চোখ রাখেন টেলিভিশনের পর্দায়। তবে গ্রামের মানুষ সাংবাদিক কিংবা অপরিচিতদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে অনেক সতর্ক হয়ে কথা বলছেন।
এদিকে, তানভীরের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকজন সেখানে বসে আলোচনা করছেন। প্রশ্ন করার আগেই তারা শুরু করলেন তানভীরের ফিরিস্তি।
আর একটু পর পরই মোবাইল ফোনে জাহাঙ্গীর বলছিলেন, ‘হ হেরা আইছে। আমি কথা কইতাছি, লইয়া আমু…..।‘ তারপর থেকে জাহাঙ্গীর ও তার লোকজন পুরো সময়টা এ বাংলানিউজের প্রতিবেদককে অনুসরণ করছিলেন; যেন কেউ তানভীর মাহমুদের বিপক্ষে কথা না বলেন।
সোনালী ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৬শ কোটি টাকা অর্থ কেলেঙ্কারির খলনায়ক ৮০টি শিল্প-প্রতিষ্ঠান নিয়ে গড়ে তোলা হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদের আশুগঞ্জের বাড়ি গিয়ে এমন চিত্রই চোখে পড়েছে।
উপজেলার তারুয়া ইউনিয়নের উত্তর পাড়ায় ৬শ শতক জমির ওপর তার এ বিশাল বাড়ি। বাড়ির সামনে পেছনে রয়েছে পুকুর।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তানভীর মাহমুদের বাবা নুরুল ইসলাম এক সময় অ্যালুমোনিয়ামের হাড়ি-পাতিলের ব্যবসা করতেন। তার ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে তানভীর সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়ার কথা ভাবতেন তানভীর। তার আরেক ছেলে মাহবুবুল আলমও হলমার্ক গ্রুপের পরিচালক হিসেবে কর্মরত। ৩ মেয়ে শিউলী, পারুল ও নাসরিনকে আশুগঞ্জ উপজেলার মধ্যেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাবা নুরুল ইসলামে ব্যবসার সঙ্গে এক সময় যুক্ত ছিলেন তানভীর। বাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে বাবা-ছেলে ব্যবসা শুরু করেন ঢাকায়।
১৫ থেকে ২০ বছরের ব্যবধানে এখন দেশের মিডিয়ার অন্যতম আলোচিত বিষয় এই তানভীর মাহমুদ। মালিক হয়েছেন হাজার কোটি টাকার। গ্রামে অনেকের কাছে তার পরিচিতি ‘দানবীর’ হিসেবে। ঈদে তিনি এখানে ট্রাকভর্তি শাড়ি এনে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে দরিদ্রদের সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকেন।
দেখা গেল, গ্রামের বিভিন্ন দোকানে শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে তানভীরের ট্রফি নেওয়ার পোস্টার, আবার কোথাও শোভা পাচ্ছে, এ বছরের ২০ জানুয়ারি তাকে দেওয়া কথিত ‘গ্রামবাসীর সংবর্ধনার’ পোস্টার। সেখানে অতিথি হিসেবে ছাপা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদ্দাছের আলীর নাম। তবে বেশ কিছুদিন ধরে তার অপকর্মের ফিরিস্তি শুনে হতবাক গ্রামের মানুষও।
আলমনগর কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র তারুয়ার শিপন জানালেন, ’তানভীর ভাইরে, ভালো মানুষ হিসেবেই জানতাম। তবে ব্যাংকে এত টাকা জালিয়াতি করেছেন, শুনে তো হতবাক হয়েছি। কারণ, এসব তো জনগণের টাকা।
পাশের আড়াইসিধা গ্রামের সাইদুর রহমান (৫৫) জানান, ‘তানভীরকে একসময় দেখতাম বাবার ব্যবসায় সহায়তা করতে। এই মানুষটা এত কম সময়ে কীভাবে এত টাকার মালিক হইল, ভেবে পাই না। ব্যাংকের কর্মকর্তারাইবা কী করলো?’