সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনে সহায়তার অভিযোগে অভিযুক্ত ৩১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার এ ব্যাপারে আইনজীবী প্যালেনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রদীপ কুমার দত্ত এ মুহূর্তে লন্ডনে রয়েছেন। তিনি তার সফর সংক্ষিপ্ত করে বুধবার সকালে দেশে আসবেন। তিনি দেশে আসার পরই মামলা হবে।
বুধবার বিকেলে এমডি বাদী হয়ে মামলা করতে পারেন। ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, “এমডি দেশে আসার পর মামলা হবে। তবে আমরা এর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা হবে।”
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছিল, এদিন ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাদী হয়ে মামলা করতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হননি। তাই এমডি জরুরিভাবে দেশে ফিরে আসছেন। তিনিই মামলা করবেন।
এর আগে সোমবার সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এব্যাপারে চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর পক্ষে এ চিঠি পাঠানো হয়। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত বরাবর এ চিঠি দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশ মোতাবেক অভিযুক্ত ৩১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে এবং একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
গত ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠির মাধ্যমে অভিযুক্ত ৩১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে তা পরিপালন করে ৩০ আগস্টের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করতে বলেন। এতে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে বলা হয় তাতে।
তবে ২৯ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান কে এম জামান রোমেল সাংবাদিকদের বলেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত মানা সম্ভব হবে না।
কিন্তু পরের দিন ৩০ আগস্ট সোনালী ব্যাংকের এমডি দুদফা বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত রাত আটটার দিকে ১৭ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। আর ৭ জন স্বাভাবিক অবসরে গেছেন বলে জানা যায়। আর তিন জনকে আগেই বরখাস্ত করা হয়েছিল। একই ঘটনায় দুই উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে অর্থ মন্ত্রণালয়। আর দুই মহাব্যবস্থাপককে বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওএসডি করা হয়।
তবে বাকি থাকে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজাদারি আইনে ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ঘটনায় বোর্ড পুনগর্ঠনের জন্য সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে চিঠি দেয়। তাতে গভর্নর হলমার্ক কেলেঙ্কারির জন্য বোর্ড দায় এড়াতে পারে না বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি লেখে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত গত ৯ আগস্ট সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “হলমার্ক ঘটনায় দায়ী অনেকেই দেশ থেকে পালানোর ফন্দিফিকির করছেন। তবে কেউ যাতে পালাতে না পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করাটা জরুরি।”
ঠিক তার একদিন পর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে এমডি নির্দেশ দেওয়া হয়।