সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত আয়কর পরিশোধের বিধান দুই বছর আগে বাতিল করেছে সরকার। তারপরও কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত আয়কর পরিশোধ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রাষ্ট্রের বছরে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৪ কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ব কোন প্রতিষ্ঠানেই এখন আর কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত আয়কর দেওয়া হয় না। কিন্তু, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত আয়কর পরিশোধ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বছর শেষে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যে পরিমাণ অর্থ লভ্যাংশ হিসেবে জমা দিতে পারত তার একটি অংশ যাচ্ছে কর্মকর্তাদের আয়কর পরিশোধ করতে।
সূত্র জানায়,, বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিলেও কোন ফল হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের এ উদ্যোগের সঙ্গে একমত হচ্ছে না।
এদিকে, স্বায়ত্বশাসিত অন্য প্রতিষ্ঠাগুলোর কর্মকর্তাদের নিজেদের আয়কর নিজেরা পরিশোধ করে থাকেন। ফলে অবিলম্বে কর্মকর্তাদের আয়কর দেওয়ার ব্যবস্থা বাতিল করা না হলে অন্যরাও এ সুযোগ চাইতে শুরু করতে পারেন।
এব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ টেলিফোনে বলেন, এ ব্যাপারে এনবিআরের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তারা বিষয়টি জানলেও কেন ব্যবস্থা নেয় তা তা বোধগম্য নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য মতে, বিদায়ী বছরে কর্মকর্তাদের আয়কর বাবদ বাংলদেশ ব্যাংক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দিয়েছে প্রায় পৌনে ৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়েছে। মোট আড়াই হাজার কর্মকর্তার হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আয়কর দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা অফিসের দুই হাজার কর্মকর্তা। আর ঢাকার বাইরের ৫০০ কর্মকর্তা।
তথ্যমতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী কর্মকর্তা অথবা যাদের বেতন স্কেল ১১ হাজার টাকার ওপরে তারা আয়করের আওতায়। তাদের জন্য আয়কর পরিশোধ করতে হয়। চাকরির বয়স ১০ বছরের বেশি হলে অন্য শ্রেণীর কর্মকর্তারা করের মধ্যে আসেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের জনবল যেহেতু বাড়ছে, প্রতিবছর কর্মকর্তাদের আয়কর পরিশোধ বাবদ বাংলাদেশ ব্যাংকের খরচ বাড়ছে। ২০১০-১১ অর্থ বছর তিন ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা আয়কর দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে ২০১১-১২ অর্থ বছর দিলো ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগামী বছর তা আরো বেড়ে যাবে।
জানা গেছে, ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরের বাজেট থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কর নিজেদের পরিশোধ করার বিধান চালু হয়। তবে সে বছর তারা কর পরিশোধ করে ভাউচার দিয়ে পরিশোধিত অর্থ তুলে নেয়। তবে পরের অর্থ বছর থেকে ব্যক্তিগত আয়কর পরিশোধ করে পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ পরিশোধের বিধান বাতিল করা হয়।
এরপর বিষয়টি সামনে আসার পর অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি লেখে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এতে রাজি হয়নি।
অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কর্মকর্তাদের আয়কর প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করল রাষ্ট্র দু’ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক, সরকারি অর্থ এতে খরচ হচ্ছে। দুই, ব্যক্তিগত আয়কর যখন প্রতিষ্ঠান হিসাব করে তখন ওই কর্মকর্তার অন্য আয়ের উৎসগুলো হিসেবে আনা হয় না। ফলে রাষ্ট্র যে পরিমাণ কর পাওয়া কথা তা থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ অনেক কর্মকর্তা তা গোপন করে থাকেন।