গত ২১ আগষ্ট ২০১২ ইতিহাসের এক বর্বরতম হত্যার আট বছর পেরিয়ে গেল। ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট বাংলাদেশে ঘটেছিল এই বর্বর ভয়ানক গ্রেনেড-বোমা হামলা, প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার বিস্তারিত চোখের সামনে। এক গভীর ষড়যন্ত্রের নীল নকসায় প্রণীত হয়েছিল এই হত্যা পরিকল্পনা। এমন জঘন্যতম রক্তাক্ত ঘটনা ইতিহাসে বিরল। হত্যার মুল কুশীলবরা শীততাপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে ধীর স্থির মস্তিস্কে এই হত্যাকান্ড পরিচালিত করেছে। এর আগে ১৯৭৫ সনের ১৫ আগষ্ট এমনি ষড়যন্ত্রে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। অতঃপর ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ জেল খানায় জাতীয় চার নেতা যারা জাতির জনকের অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন তাদেরকেও হত্যা করা হয়। একাত্তুরের পরাজিত শক্তি, পচাত্তুরের হত্যাকারী, রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী, পাকিস্তানী দালাল, প্রতিক্রিয়াশীল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী ও জামাত শিবির চক্র এইসব জঘন্য কর্মকান্ডে লিপ্ত। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল জামাত-বিএনপি জোট সরকার। তাদের মদদেই এদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান। এই শক্তিই ৬৩ জেলায় একসাথে বোমা ফোটায়−বিচারক হত্যা করে। সারাদেশে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তখনকার সরকার বলেছিল বোমাবাজী, জঙ্গীবাদ মিডিয়ার সৃষ্টি। এদেশে জঙ্গী আছে তারা জানেনা। পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে তারা উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে যায়। বাংলাভাই, শায়খ আব্দুর রহমান, মুফতি হান্নানরা তখন বুক ফুলিয়ে বিচরণ করেছে এই বাংলায়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস অনেক রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে অর্জিত স্বাধীন এই বাংলায় স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। এ এক দুঃসহ যন্ত্রণা। মুজিবের বাংলায় ফকা মিয়া, চখা মিয়ার বাচ্চারা, রাজাকার আলবদরের বাচ্চারা, দালালের বাচ্চারা বছরের পর বছর এদেশের গরীব দুঃখী মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। ষড়যন্ত্রের নীল নকশায় রক্তচোষা হায়েনারা আজ সদর্পে বিচরণ করছে এই বাংলায়। ২০০৪ সনের ২১ আগষ্টের বর্বর হত্যাকান্ডের কথা বলছিলাম। সেদিন বঙ্গবন্ধু এভেন্যুতে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাস বিরোধী প্রোগ্রাম ছিল। আওয়ামীলীগের প্রথম কাতারের প্রায় সকল নেতানেত্রীই সভামঞ্চে ছিলেন। ষড়যন্ত্রীদের টার্গেট ছিল শেখ হাসিনার সাথে আওয়ামীলীগের উচু পর্যায়ের সকল নেতানেত্রীকে এক সাথে হত্যা করে এই দলকে নেতৃত্ব শূন্য করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এই শক্তি চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে। শেখ হাসিনার বক্তৃতার শেষ মূহুর্তে মুহুর্মুহু গ্রেনেড-বোমা হামলা চালানো হলো। সে এক বিভৎস, করুন ও হৃদয় বিদারক দৃশ্য। দলের নেতৃবৃন্দ মানববলয় সৃষ্টি করে, নিজেরা গ্রেনেডের ¯প্রীন্টার গায়ে ধারণ করে নেত্রীকে আগলে রেখে তাঁর জীবন রক্ষা করেছেন। শেখ হাসিনা সেদিন বিধাতার অশেষ বিশেষ রহমতে বেচেঁ গেছেন। এ এক অলৌকিক ঘটনা। সেদিন নারীনেত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। শতশত নেতাকর্মীর গায়ে আজো অগনিত ¯প্রীন্টার বিধে আছে। যতদিন তারা বাঁচতে পারবেন ততদিন তাদেরকে এই ¯প্রীন্টার এর জ্বালা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে। সেদিনের ক্ষমতাসীন সরকার মসনদে বসে অট্টহাসি হেসেছে। ম্যাডাম খালেদা জিয়া ক্রুর হাসি হেসে বলেছেন, উনাকে আবার কে মারতে যাবে। অতঃপর গ্রেনেড হামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে। অবশেষে জজ মিয়া নাটক সৃষ্টি করা হয়েছে। আসামী মুফতি হান্নানের নিজের স্বীকারোক্তিতে এখন বের হয়ে আসছে এই ঘটনার আসল কুশীলবদের নাম। আসল নায়ক-নায়িকার নাম। মুফতি হান্নানের বক্তব্যে বিএনপি জামাত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই এই হামলা হয়েছিল বলে প্রতীয়মান। বাবর, তারেক, মোজাহেদী, হারিছ ইত্যাদি চরিত্র গুলি এখন উন্মোচিত হচ্ছে। এহেন ষড়যন্ত্র ও হত্যার প্ল্যান ১৯৭১ সনেই শুরু হয়েছিল। সেদিন জিয়া-মোশতাক-ফারুখ-রশিদ-ডালিম-নুরহুদা ইত্যাদি খল চরিত্র গুলি গোপন ষড়যন্ত্রে মেতেছিল। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশকে গড়ে তোলার জন্য যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিকে পুনর্গঠনের জন্য বাঙালী জাতি জনকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। বিজয়ের আনন্দে প্রতিটি মানুষ আত্মহারা। অন্যদিকে এইসব ষড়যন্ত্রীরা সুযোগ খুঁজছিল কখন আঘাত হানা যায়।
১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট প্রথম সুযোগেই তারা সপরিবারে জাতির জনককে হত্যা করল। সেদিন ভাগ্যক্রমে জনকের দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশে না থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন। ঘাতকদের তালিকায় তারা অপেক্ষায় ছিলেন কখন হত্যার সুযোগ আসবে। জাতির জনক হত্যার আসল সুবিধাভোগী ও কুশীলব জেনারেল জিয়া জাতীয় বেইমান খন্দকার মোশতাককে কিছুদিন ক্ষমতায় রাখলেন। জেলখানায় জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর যারা জাতির জনকের অবর্তমানে স্বাধীনতাযুদ্ধকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন তাদেরকে হত্যার পর সম্পূর্ণ নিষ্কন্টক হয়ে সশরীরে সদর্পে পর্দায় সর্বময় ক্ষমতা হাতে নিয়ে হাজির হলেন জে. জিয়া । সমস্ত ক্ষমতা হাতে নিয়ে তিনি একে এক স্বাধীনতার মূল্যবোধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শ্লোগান, হাজার বছরের বাঙালীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে জলাঞ্জলী দিলেন। দালাল আইন বাতিল করে সকল দালালদের পুনর্বাসন করা হলো। শাহ আজিজ, আলিম, মশিউর রহমানসহ অনেক দালালকে মন্ত্রি করা হলো। ইনডেমনিটি আদেশ জারী করে জাতির জনক হত্যার বিচার বন্ধ করে দেয়া হলো। সম্পূর্ন পাকিস্তানী ধাচে সব সাজানো হলো। বাংলাদেশ বেতার হলো রেডিও বাংলাদেশ। জয় বাংলাকে নির্বাসনে দিয়ে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ কায়েম করা হলো। একটি পাকিস্তানী প্রেতাত্মা দেশ, রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে গিলে খেল। ১৯৭১ সনের ২৬ মার্চ মেজর জিয়া সোয়াত জাহাজ হতে অস্ত্র খালাস করতে যাচ্ছিলেন বাঙালী হত্যার জন্য। পথে বাঁধা পেয়ে, মেজর রফিক শওকত, অলি ও অন্যান্য সেনা সদস্যের বাঁধা পেয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হন। তিনি সিনিয়র সেনা সদস্য হিসেবে আওয়ামী নেতৃবৃন্দের, বেতার কর্মী ও সেনা সসদ্যের অনুরোধে কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করতে বাধ্য হন। ইতিহাসে এই পাঠক হিসেবে তিনি অবশ্যই গন্য হবেন। এর আগে ২৬ মার্চ দুপুরে জনাব এম.এ. হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু মেজর জিয়াকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নোতি দেন উপ-প্রধান সেনা প্রধান করেন এবং বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করেন। কিন্তু আয়ূব ইয়াহিয়ার ভাবশিষ্য হিসেবে তিনি ষড়যন্ত্রের নীল নকসায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেন। ফারুক রশিদ, ডালিমদের বক্তব্যে এসব ঐতিহাসিক প্রমানিত সত্য। সবদিক নিষ্কণ্টক করে জিয়া রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেন। শুরু হলো আর এক অধ্যায়। যুগে যুগে দেশে দেশে সামরিক শাসকেরা এভাবেই জনগণমন নেতাদের হত্যা করেছেন। কিন্তু বিধাতার বিধান কে রুখবে? ১৯৮১ সনের ৩১ মে জিয়া নিহত হলেন তারই সেনাদের হাতে। ১৯৭৫ সনের ১৫ আগষ্ট জাতির জনক রাষ্ট্রপতিকে জিয়া রক্ষা করতে এগিয়ে আসেননি। তাকেও হত্যা হতে হলো নির্মমভাবে। মীরজাফরদের পরিণতি এই হয়। বেঈমান মোশতাককেও মৃত্যুবরণ করতে হলো অত্যন্ত করুণভাবে। ইতিহাসের দুই মীরজাফর মোশতাক ও জিয়া এভাবেই বিদায় নিলেন। কিন্তু তাদের প্রেতাত্মারা এখনো বিদ্যমান এই বাংলায় নানা সাজে নানা ঢংয়ে। এইসব চরিত্র গুলি যুগে যুগে দেশে দেশে নানা অঘটন ঘটায়। দেশ ও জাতির সর্বনাশের জন্যই এরা পৃথিবীতে বিচরণ করছে। পৃথিবী যতদিন আছে এইসব মীরজাফররা থাকবে। এরা মানুষের অবয়বে শয়তান ইবলিসের রূপক চরিত্র। এদের জন্ম মানব কল্যাণকে ধ্বংস করার জন্য। জাতির জনক হত্যার পর জিয়াকে জানানো হলো−ঝরৎ চৎবংরফবহঃ রং ফবধফ. জিয়া ধীর স্থির চিত্তে বললেন ঝড় যিধঃ ঃযবৎব রং ারপব ঢ়ৎবংরফবহঃ. খালেদা জিয়ার কি অনুভুতি কি ছিল জানিনা। পরবর্তীতে রশিদ ফারুখের জবানবন্দীতে বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার সম্পৃক্ততা প্রমানিত সত্য।
১৯৭১ সনে জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী নয়মাস কেন্টনমেন্টে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আতিথেয়তায় আরাম আয়েশেই ছিলেন। সে সময় তাকে সাথে নেয়ার জন্য জিয়া কয়েকবার চেষ্টা করেছেন। খালেদা জিয়া যেতে রাজী হননি। অথচ অন্যান্য সেনা কর্মকর্তার পরিবার নির্বিঘেœ যেতে পেরেছেন। বিগত বাজেট অধিবেশনে মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ১৯৭১ সনের ঘটনা নিয়ে মেজর জিয়াকে লিখা পাস্তিানী এক সেনা কর্মকর্তার পত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। পত্রের মর্মানুসারে বেগম জিয়ার কেন্টনমেন্টে স্বচ্ছন্দে অবস্থানের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর হস্তক্ষেপে জিয়া খালেদা জিয়াকে ঘরে তুলে নিতে বাধ্য হন। কিন্তু অকৃতজ্ঞরা সব ভুলে যায়। ১৫ আগষ্টের কালোরাতে তারা জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করেছে। ইতিহাসের ধারাকে বদলে দিয়ে বিকৃত করা হয়েছে। জনক হত্যাকে সদর্পে ঘোষণা করেছে। খালেদা জিয়া এখন জনক হত্যা দিবসকে নিজের জন্মদিন পালন করেন। রেকর্ডপত্র অনুসারে তার একাধিক জন্মদিন আছে। গত ২১ আগষ্ট ২০০৪ যে নীল নকসা প্রনীত হয়েছিল তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে আওয়ামীলীগ সম্পূর্ণ নেতৃত্বহীন হয়ে যেত। তারা ভেবেছিল নির্বিঘেœ রাজত্ব করতে পারবে। হাওয়া ভবনের মালিকেরা উই আর লুকিং ফর (ডব ধৎব ষড়ড়শরহম ভড়ৎ) শত্র“স এর প্রবক্তারা, ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার নায়কেরা আজ কারারুদ্ধ। তাদের বিচার চলছে। ইবলিসদের বিচার অচিরেই শেষ হবে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। সকল হত্যাকারী ও হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও কঠোর শাস্তি আপামর জনতার দাবী। সকল হত্যার বিচার করে এ জাতি কলংকমুক্ত হোক উহাই প্রত্যাশা।
সরকারের হাতে আর মাত্র দেড় বছরের কম সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনী আঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে, সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জেল হত্যা বিচার, ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হত্যার বিচার, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। জাতির জনক হত্যার পলাতক আসামীদের দ্রুত দেশে এনে রায় কার্যকর করতে হবে। মানুষের মৌলিক চাহিদার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। বিদ্যুৎ সেক্টরকে আরো গতিশীল করতে হবে। যে কারণে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে, সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে এ বছরই এর কাজ শুরু করতে হবে। যেসব বিতর্কিত ব্যাক্তিদের জন্য এই জটিলতা সৃষ্টি হলো, তাদেরকে কেন দেড় বছরের আগে বাদ দেয়া হলো না বোধগোম্য নয়। জানিনা উপদেষ্টা পরিষদ কি উপদেশ দিচ্ছেন। বিতর্কিত ও আগন্তুক উপদেষ্টাদের অবিলম্বে বাদ দেয়া হোক। এদের জন্য সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে ও ভোট কমছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উহা কি উপলব্ধি করতে পারছেন? অতএব সময় থাকতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন। এই সাথে মন্ত্রিসভাকে অভিজ্ঞ, দক্ষ ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদদের দিয়ে সাজাতে হবে। কতিপয়কে বাদ দিতে হবে এখনই। প্রশাসনকে অভিজ্ঞ, দক্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত কর্মকর্তাদের দিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে। সরকার আওয়ামীলীগের আর প্রশাসনে জামাত বিএনপির এজেন্টরা থাকলে, উচ্চ পদে এরা থাকলে নির্বাচনের সময় উহার ফল টের পাবেন। তাই সময় থাকতে সাবধান হোন, ব্যবস্থা নিন। রাজনীতি ও প্রশাসন সুষ্ঠু ও দক্ষ না হলে সফলতা আশা করা যায় না। ড. ইউনুস বিদ্যমান আইনেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকতে পারেন না। আদালতে তিনিই গেছেন এবং হেরেছেন। এখন আবোল তাবোল বকা মুর্খতা। তাঁর দীর্ঘ চাকুরিকাল সময়ে অনিয়ম হয়ে থাকলে তা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হোক। তিনি নোবেল বিজয়ী, বিশ্বের অনেক নেতৃবৃন্দের বন্ধু, আমাদের গর্ব। তাকে অন্ততপক্ষে গ্রামীণ ব্যাংকের একজন উপদেষ্টা হিসেবে রাখা যায় কিনা দেখা যেতে পারে। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আশা করি ড. ইউনুস পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে, পোশাক শিল্পের প্রসারে এবং এদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কল্যাণে, আর্থিক ও অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারকে সহায়তা করবেন। না করলে বুঝতে হবে তিনি এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, নারীর ক্ষমতায়নে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে আন্তরিক নন। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বিশ্বক্ষ্যাতি পেয়েছেন নোবেল বিজয়ী হয়েছেন তা শুধুই নিজের স্বার্থরক্ষার জন্য করেছেন। দেশ ও জাতির প্রতি তার দায়িত্ব পালন করেননি। গ্রামীণ ব্যাংক মূলতঃ বাংলাদেশ ব্যাংকেরই একটি প্রকল্প ছিল। এর প্রতিষ্ঠা লগ্নে ব্যাংকার ইব্রাহিম খালেদসহ অনেকেই জড়িত ছিলেন। মাননীয় অর্থমন্ত্রিরও অবদান আছে। ড. ইউনুস ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নয়জন নারী পরিচালকের কি ভূমিকা ছিল তিনিই জানেন। বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে আরো অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। সে সবের হিসাব নিকাশ জানা দরকার। কোটি কোটি টাকা আয়ের হিসাব ও রক্ষনাবেক্ষণ সরকারের জানা দরকার। এই বিরাট অর্থের লাভাংশ ঐসব গ্রামীণ নারীরা পাচ্ছেন কিনা তাও অস্পষ্ট। সব কিছু স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন। সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুসারে সবকিছু স্বচ্ছ হবে, স্পষ্ট হবে উহাই প্রত্যাশা। এই উদ্যোগে তাঁর এবং তার বন্ধুদের বিরূপ মন্ত্রব্য করা অনভিপ্রেত। ড. ইউনুস অধ্যাদেশ জারী দিবসকে কালো দিবস বলে বিজ্ঞ মনোভাবের পরিচয় দেননি। সরকারের পদক্ষেপকে এমন মন্তব্য করা দেশদ্রোহিতার শামিল। আশা করি তিনি এসব অনুধাবন করবেন এবং নিজেকে শোধরাবেন।
ড. ইউনুসের ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে, সবকিছু শোধরিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি জনগণের স্বার্থে সরকারকে সহায়তা করবেন উহাই কাম্য। একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৬০ বছরের বেশি এই পদে থাকতে পারেননা। আইনে এমন বিধান নেই। তারপরও আরো এগার বছর তিনি এ পদে থেকেছেন। কিভাবে থেকেছেন, কেন থেকেছেন কি স্বার্থে থেকেছেন বোধগম্য নয়। আইন বিধি বিধান সবাইকে মানতে হবে। আইন কানুন মেনেই আমাদের চলতে হবে। অনেক বিতর্কিত কাজ তিনি করতে চেয়েছেন, রাজনৈতিক দলও করতে চেয়েছেন। বর্তমানে বিএনপি তাকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন সুবিধাজনক বক্তব্য দিয়ে। কিন্তু ড. ইউনুসের বুঝতে হবে তিনি নোবেল বিজয়ী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানুষ। সুযোগ সন্ধানীদের কর্মকান্ড তাকে বুঝতে হবে। এদেশের বিদ্যমান আইন কানুন বিধি বিধান মেনে অতীতের ভুল শোধরিয়ে এগুতে হবে সামনের দিকে। আগামী এক সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ায় সবাইকে এগুতে হবে দৃঢ় পদক্ষেপে সকল মানুষের কল্যাণের জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনুসকে গঠনমূলক আলোচনার জন্য আহবান জানাতে পারেন। সকলের ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধনে রচিত হোক একটি আধুনিক, উন্নত ডিজিটাল বাংলাদেশ।
২১ আগষ্ট ২০০৪ ইতিহাসের এক বর্বর হত্যা দিবস। এদিন নিহত ও আহত সকল মানুষকে শ্রদ্ধা ভালবাসা ও সমবেদনা জানাই। মৃতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ¯প্রীন্টার শরীরে নিয়ে যারা কাতরাচ্ছেন তাদের নিরাময়ের জন্য প্রার্থনা করছি। এ দেশের সকল মানুষের মুখে ফুটে উঠুক আনাবিল হাসি। সকল দুঃখ জ্বালা ভুলে মানুষ মনের মাধুরী দিয়ে গেয়ে উঠুক “আমারা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি। একটি মুখের হাসির জন্য যুদ্ধ করি” জয়বাংলা।
(লেখক সাবেক সচিব)