বিচারপতি নিয়োগে আইন করতে সংসদে প্রস্তাব উঠছে বৃহস্পতিবার

বিচারপতি নিয়োগে আইন করতে সংসদে প্রস্তাব উঠছে বৃহস্পতিবার

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে ‘সুপিরিয়র জুডিশিয়াল কমিশন বিল-২০১২’ সংসদে উঠছে বৃহস্পতিবার।

ওই দিন বেসরকারি বিল হিসেবে এটি উত্থাপন করবেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য  মুজিবুল হক চুন্নু। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বেসরকারি সদস্যদের বিল ও সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হবে।

মুজিবুল হক চুন্নু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত ৩ জুলাই বিলটি সংসদ সচিবালয়ে জমা দেন তিনি।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পদ সংখ্যা নির্ধারণ ও রাষ্ট্রপতির কাছে বিচারক নিয়োগের সুপারিশ করতে এ কমিশন গঠন করা উচিত। সাত সদস্যের কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন প্রধান বিচারপতি।

বিলে বিচারপতিদের রাজনৈতিক পরিচয় মুক্ত থাকার শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মধ্য থেকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বা অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের জন্য দুটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, সর্বশেষ ১০ বছরের পরিচালিত মামলার মধ্যে থেকে প্রতি বছর অন্তত দুইটি মামলার রেকর্ড পর্যালোচনা ও পেশাগত আচরণ সম্পর্কিত বার কাউন্সিলের প্রতিবেদন পর্যালোচনা।

সুপ্রিম কোর্টের তিন ধরনের বিচারকদের নিয়োগে কমিশন কাজ করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে: আপিল বিভাগের বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক ও হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক।

বিলে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক ও অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগে ৫টি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এসবের  অন্যতম হলো: প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো জাতীয় বা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল বা অঙ্গসংগঠনের অতীত বা বর্তমান সংশ্লিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাজীবনের সকল স্তরে ন্যূনতম ২য় বিভাগ বা সমস্তরের গ্রেডিং নম্বর থাকতে হবে। এছাড়া আইন বিষয়ে অন্যূন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চাওয়া হয়েছে। এদিকে শপথ নেওয়ার দিন বিচারকের বয়স অন্যূন ৫০ বছর হওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে আপিল বিভাগে বিচারক পদে নিয়োগের জন্য কমিশন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জ্যেষ্ঠতা, বিচারিক দক্ষতা, সততা ও সুনামসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় বিশদভাবে বিবেচনা করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিশন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এটা সাত সদস্য বিশিষ্ট হবে। এর চেয়ারম্যান হবেন প্রধান বিচারপতি। ছয় সদস্যের মধ্যে থাকবেন-আপিল বিভাগের প্রবীণ বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের প্রবীণ বিচারক, স্পিকার মনোনীত একজন সংসদ সদস্য, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি।

বিলে বলা হয়েছে, এর মধ্যে কোনো সদস্যের নাম সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারক পদে নিয়োগের জন্য কমিশনে উপস্থাপিত হলে ওই সদস্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিতে পারবেন না। কমিশনের সাচিবিক দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগের জন্য যোগ্যতা নির্ধারণ করে আইন প্রণয়নের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪২ বছর পেরিয়ে গেলেও এ নিয়ে কোনো আইন হয়নি।

আরো বলা হয়েছে, বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সততা ও যোগ্যতার পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনা অগ্রাধিকার পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে একদিকে নিয়োগ পাওয়া বিচারকদের যোগ্যতা, সততা, নিরপেক্ষতা, কর্মদক্ষতা ও বিচারের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অন্যদিকে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দেশের অগ্রযাত্রা বারবার ব্যাহত হচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে লাখ লাখ মামলা বিচারাধীন। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে জনগণকে প্রতিকার দিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক প্রয়োজন। সংবিধানে বিচারক নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে কতো জন বিচারক প্রয়োজন সেটা নির্ধারণ করতে কোনো আইনি ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। রাষ্ট্রপতিকে এ বিষয়ে সময়ে সময়ে সুপারিশ করা প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, সংসদের গত ১৩তম অধিবেশনে বিচারপতি এ এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে নিয়ে সংসদে ও সংসদের বাইরে সমালাচনা হওয়ার পরই বিলটি জমা দেওয়া হয়। সংসদের চলতি ১৪তম অধিবেশনেও ওই বিচারপতি এবং আদালত ও সংসদের ক্ষমতা নিয়ে উত্তপ্ত হয় সংসদ। ওই বিচারপতিকে নিয়ে সংসদে যে কয়েকজন সদস্য সমালোচনায় অংশ নেন তাদের মধ্যে মুজিবুল হক চুন্নু অন্যতম।

প্রসঙ্গত, সংবিধানের ৯৫ (২) (গ) অনুচ্ছেদে বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়নের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়নি।

এর আগে গত ১৪ জুন মুজিবুল হক চুন্নুরই এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সংসদে বলেছিলেন, ‘‘সাংবিধানিক বিধান ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগে অন্য কোনো নীতিমালা নেই। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী উচ্চ আদালতে স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।’’

এছাড়া ২৭ মার্চ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এম টেরেসা খোর সঙ্গে এক সাক্ষাতে আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘‘সরকার সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে যোগ্যতা নির্ধারণ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের চিন্তাভাবনা করছে।’’

প্রসঙ্গত, চলতি নবম জাতীয় সংসদে মাত্র একটি বেসরকারি বিল পাস হয়। সেটি হলো ‘দ্য   লেপারস (রিপিল) অ্যাক্ট- ২০১১’। সরকার দলীয় সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বিলটি উত্থাপন করেন। নয় বছর পর গত বছরের ২৪ নভেম্বর বেসরকারি বিলটি পাস হয়।

বাংলাদেশ